|
|
|
|
রুগ্ণ স্বাস্থ্য/৬ |
পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি আমলই পায় না |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রামের মহকুমা হাসপাতালে সরকারি ভাবে শয্যার সংখ্যা ২৪৫। কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে আরও ২০টি শয্যার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তা-ও যথেষ্ট নয়। শুধু ঝাড়গ্রামই নয়, বাঁকুড়া-পুরুলিয়া এবং ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার মানুষও চিকিৎসা-পরিষেবা পেতে আসেন ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে। আউটডোরেই প্রতি দিন গড়ে ৬০০ রোগী আসেন। অন্তর্বিভাগের সব শয্যাই সব সময়ে ভর্তি। অনেক সময়েই রোগীদের ঠাঁই হয় ওয়ার্ডের মেঝেয়। তবে অন্য অনেক সরকারি হাসপাতালের তুলনায় এখানে হাসপাতাল চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় খামতি না থাকলেও পরিকাঠামোয় রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। যার ফলে অধিকাংশ দিন খোদ হাসপাতাল সুপার আউটডোরে রোগী দেখেন। রোগীদের লাইন ঠিক করেন অন্য কোনও চিকিৎসক। পশ্চিম মেদিনীপুরের মাওবাদী-প্রভাবিত অনগ্রসর এলাকার এই হাসপাতালটিতে গ্রুপ-ডি কর্মীর প্রায় অর্ধেক পদ খালি। গ্রুপ-ডি’র অনুমোদিত ৮৬টি পদের মধ্যে ৩৯টি শূন্য। সাফাই কর্মী, স্টোর কিপার, ফার্মাসিস্ট ও চিকিৎসকেরও অনেক পদ শূন্য থাকায় প্রতি দিনের পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক বলে মানছেন চিকিৎসক ও কর্মীদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ১৯৯১ সালের বিধি অনুযায়ী ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। দু’দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। পাশাপাশি, মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় কাজে যোগ দেওয়ার অনীহায় শূন্যপদগুলিতে চিকিৎসক ও কর্মী নিয়োগও সমস্যার। সিংহভাগ রোগী দরিদ্র। হাসপাতাল থেকে যে সব ওযুধ দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই। ব্যয়-বরাদ্দ বাড়েনি। |
|
শিশুবিভাগের সামনে লম্বা লাইন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে অপারেশন থিয়েটরে রোগীদের অজ্ঞান করার কাজও সামাল দিতে হয়। উপরন্তু ব্লাডব্যাঙ্কের টেকনিশিয়ানের ৪টি পদের ২টি শূন্য। ব্লাডব্যাঙ্কের নিজস্ব গাড়িও নেই। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হয় সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন। হাসপাতালের তিনটি অপারেশন থিয়েটারই বাতানুকূল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা বা নাশকতায় আহতের সংখ্যা বেশি হলে তা সামাল দেওয়ার মতো পরিমকাঠানো নেই। স্থানীয় চিকিৎসকদের অনেকেরই বক্তব্য, এখানে ট্রমা ও আইসিসিইউ ইউনিট চালু করা জরুরি। হাসপাতালের কোনও সিটি স্ক্যান ইউনিটও নেই।
নিরাপত্তা ও রোগীদের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব রয়েছে বেসরকারি হাতে। অভিযোগ, বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাটির সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চমহলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ ওই সংস্থাটিকেই বছরের পর বছর বরাত পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অপেশাদার ও কম সংখ্যক লোককে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখার ফলেও সমস্যা হয়।
হাসপাতাল সুপার সুদীপ কাঁড়ার বলেন, “থাকার কথা ৩৭ জন চিকিৎসক। আছেন ২৯ জন। এঁদের কয়েক জনের আবার বদলির অর্ডার হয়েছে। প্রয়োজনের অনুপাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও কম। অন্য কর্মীর বেশির ভাগ পদই খালি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য ও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বহু বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। খাবার সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমার হাতে নেই।” সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস্’-এর ঝাড়গ্রাম শাখার সম্পাদক প্রসূন ঘোষ বলেন, “ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় বদলির আদেশপ্রাপ্ত চিকিৎসকদেরও ‘রিলিজ’ করা হচ্ছে না। চিকিৎসক ও কর্মীদের বহু পদ শূন্য থাকায় পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।”
নতুন সরকার জঙ্গলমহলে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সবার আগে বাঁচা-মরার প্রশ্নে জরুরি প্রতিষ্ঠানমহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন। |
|
|
|
|
|