বাগান বাঁচাতে প্রস্তাব রাজ্যকে
শ্রমিক স্বার্থের রক্ষাকবচ হিসেবে বাগান মালিকদের ‘সম্পত্তি’ সরকারের কাছে গচ্ছিত রাখার বিষয়ে সরকারি স্তরে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে চা মালিকদের সম্পত্তি সরকারের কাছে গচ্ছিত রাখার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রাজ্যের কাছে। মালিকের কোনও সম্পত্তি সরকারের কাছে থাকলে যে কোনও কারণে মালিক পক্ষের বাগান ছেড়ে যাওয়া বা শ্রমিকের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধে থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা এড়ানো যাবে বলেই প্রশাসন মনে করছে। অতীতে জলপাইগুড়ি জেলার একের পর এক চা বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্রমিক পরিবারের অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটানো, এমনকি অপুষ্টিকে চা শ্রমিকের মৃত্যুরও ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ি তথা ডুয়ার্সের অধিকাংশ চা বাগানে। কোনও ক্ষেত্রেই সরকারি ভাবে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে বারবার সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও মালিকদের বাগানে ফেরাতে পারেনি প্রশাসন। এই ‘ফাঁক’ ভরাট করতেই চা মালিকদের সম্পত্তি গচ্ছিত রাখতে চায় প্রশাসন। চা শিল্পের হাল ফেরাতে পৃথক চা সেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। চা শিল্প সংক্রান্ত নানান সুপারিশ এবং প্রস্তাবও রাজ্য আহ্বান করেছে. সেই মতো প্রস্তাব গিয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফেও। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক বন্দনা যাদব বলেন, “চা বাগানের মালিকপক্ষকে সরাসরি যদি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায় তবে অনেক সমস্যা সমাধানে পৌঁছবে না। সে কারণেই চা বাগানের মালিকদের সম্পত্তি গচ্ছিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” মালিকদের সম্পত্তি গচ্ছিত থাকলে সরকারি নির্দেশ মানতে বাধ্য থাকবেন মালিকপক্ষ, অন্যথায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “একের পর এক বাগান ছেড়ে মালিকপক্ষের চলে যাওয়া, শ্রমিকদের দুর্দশার অভিযোগের হাজারো ঘটনা নিষ্পত্তি করতে চেয়ে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দেখা গিয়েছে মালিক পক্ষকে প্রশাসনের নির্দেশ মানতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে কিছু খামতি রয়েছে। যদি মালিকদের সম্পত্তি সরকারের কাছে বন্ধক থাকত, তাঁরা কিছুতেই বাগান বন্ধ করে দিয়ে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে থাকতে পারতেন না।” চা শ্রমিক সংগঠনগুলির কো অর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়ক বর্ষীয়ান চা শ্রমিক নেতা চিত্ত দে বলেন, “ডুয়ার্সের বাগানগুলিতে প্রতিদিন শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অথচ মালিকদের শাস্তি দেওয়ার উপায় নেই। সারা জীবন ধরেই শ্রমিকদের স্বার্থের একটি রক্ষাকবচের জন্য লড়াই করে চলেছি। মালিকদের সম্পত্তি গচ্ছিত রাখার প্রস্তাব যদি রূপায়িত হয় তবে সাধুবাদ জানাব।” প্রশাসন সুত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টিতে খুব একটা জটিলতা নেই। সম্পত্তি গচ্ছিত রাখতে রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট চা বাগানগুলি লিজ নবিকরণ আটকে দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে লিজ বাতিল করার কথাও ভাবতে পারবে প্রশাসন। চা শিল্পে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকা, মালিক সংগঠন আইটিপিএ-র প্রাক্তন মুখ্য উপদেষ্টা এবং বর্তমানে একটি চা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নিরঞ্জন কুমার বসু বলেন, “বন্ধ বাগান খোলার ক্ষেত্রে সরকার যে সব সুযোগ সুবিধের আশ্বাস দিয়েছিল তাই তো মিলছে না। পরে এই সিদ্ধান্ত খানিকটা অপমানজনক যে সব বাগান দীর্ঘদিন ধরে ভালো ভাবে চলছে, তাঁদের মালিককে সম্পত্তি গচ্ছিত রাখার কথা বলাই অন্যায়। যে সব বাগানে গোলমাল হচ্ছে বা পরিচালন ব্যবস্থা ভাল নয়, সেখানে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যেতে পারে। মালিক সংগঠন টাই সচিব রঞ্জিত দত্ত বলেন, “সরকারি ভাবে কিছু শুনিনি, মন্তব্য করব না।”
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.