|
|
|
|
‘ঝলসা’ রোগ বোরো খেতে |
কয়েক কোটি টাকার শস্যহানির আশঙ্কা |
সিদ্দিক হোসেন • রাজগঞ্জ |
‘ঝলসা রোগে’ বিঘের পর বিঘে বোরো ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় মাথায় হাতে পড়েছে চাষিদের। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ও সদর ব্লকের প্রতিটি এলাকায় একই চিত্র। বিপন্ন চাষিরা নানা মহলে স্মারকলিপি দিয়েছেন। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি দফতরের পরামর্শে গত তিন বছর ধরে চাষিরা এক উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান চাষ করে আসছেন। ভাল ফলন পেয়েছিলেন। ওই আশায় এবারও তাঁরা ওই জাতের বোরো চাষ করে এবার বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। এক দানা ধানও ঘরে তুলতে পারেননি তাঁরা। মাঠের পর মাঠ ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাছে ভাল শিষ হলেও চালের দানা বলে কিছুই নেই। গোটা শিষ পাতলা হয়ে গিয়েছে। কৃষি দফতর অবশ্য স্বীকার করেছে, রাজগঞ্জ এবং সদর ব্লক মিলে অন্তত ১৫০০ হেক্টর জমির ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ির কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা আনায়োর হোসেন বলেন, “এই চিত্র শুধু রাজগঞ্জ বা সদরে নয়, লাগোয়া অনেক ব্লকেই এবার এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। মাঠের পর মাঠ বোরোর ফলন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হিসেব করে দেখা হলে এর আর্থিক পরিমাণ দাঁড়াবে ২ কোটি টাকা থেকে আড়াই কোটি টাকা।” কৃষি দফতরের বক্তব্য, এটা ঝলসা রোগের কারণে হয়েছে। শিষের গোড়ায় কালো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আবহাওয়ার কারণে এটা হয়ে থাকে। ঝড়-বৃষ্টি রোদের তাপ এই ধরণের ফসলের সহনশীলতা কম। সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন ডিলারদের কাছ থেকে শোধন করা বীজ কিনে চাষিরা চাষ করেছেন। ফলনের সময় চাষিদের ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও এমন হয়েছে।” কৃষি দফতরের কয়েক জন আধিকারিক বলেন, “ওই রোগে ওষুধ স্প্রে করা হলেও খুব একটা লাভ হয় না।” উপ-অধিকর্তা আনোয়ারবাবু বলেন, “যেসব বিজ্ঞানীরা এই বীজ উৎপন্ন করেছে। তাঁদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাঁরাও বিষয়টি জেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেন এবার এমন হল, তা নিয়ে তাঁরাও বিষয়টি দেখছেন।” ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা ইতিমধ্যে রাজ্য কৃষি দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।” এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজগঞ্জের বিডিও সুতীর্থ দাস বলেন, “কৃষি দফতরের সঙ্গে আমাদের কথার্বাতা চলছে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিসানসভার জেলা কমিটির সদস্য ও শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং সদর ব্লকের প্রধান কমল রায় বলেন, “মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করে চাষিরা বোরো চাষ করেছিল। বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল চাষিদের। সরকারে থেকে ক্ষতিপূরণ না পেলে ওই সব চাষিদের ঘুরে দাঁঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই।” উপ-অধিকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, আগামী আমন ধান চাষে কৃষি দফতরে মিনিকিট এসেছে। অগ্রাধিকার হিসেবে ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে মিনিকিট, সার, কীটনাশক দেওয়া হবে। নকুল গুহ, গোলাপ দেব, আবদুল জলিল বলেন, “একদানা ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। কী করে মহাজনের টাকা শোধ করব। কী করেই বা সংসার চলবে বুঝে উঠতে পারছি না।” |
|
|
|
|
|