বর্ষার দাপটে নাকাল উত্তরবঙ্গ
কার্শিয়াঙে ধসে তিন সন্তান-সহ মৃত বাবা
রাতভর বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় ধস নামায় শুক্রবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দার্জিলিঙে। কার্শিয়াঙের কাছে সেন্ট মেরিজ এলাকায় ধসে একটি বাড়ির অংশ চাপা পড়ায় এক ব্যক্তি ও তাঁর তিন সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। কালিম্পঙে জাতীয় সড়কে দু’জায়গায় ধস নামায় বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সিকিম। টানা বর্ষণে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় ফুঁসছে তিস্তা, মহানন্দা, বালাসনের মতো নদী। মহানন্দার জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির পশ্চিম ধনতলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। প্রায় ৩০০টি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বেলা বাড়লে জল কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
ধসের পর দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে গাড়িটি। কার্শিয়াঙে শুক্রবার।-নিজস্ব চিত্র
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজে প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সিকিমের ওই রাস্তাটি সেনাবাহিনীর সীমান্ত সড়ক বাহিনীর আওতায় রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে ধস সরিয়ে রাস্তা খোলা হয়েছে। কার্শিয়াঙে ধসে বিপন্ন পরিবারটিকে সব রকম সাহায্য করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী জাভেদ খানের সঙ্গেও কথা বলেছেন গৌতমবাবু।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় পাহাড় ও লাগোয়া সমতলে। ভোর ৩টে নাগাদ কার্শিয়াং থানার সেন্ট মেরিজ হিল এলাকায় ধস নামে। চাপা পড়ে একটি কাঠের বাড়ির একটি বড় অংশ। পুলিশ জানায়, ধসে চাপা পড়ে নসিম আখতার (৩৫) নামে এক ব্যক্তি এবং তাঁর তিন ছেলেমেয়ে-- মহম্মদ ফয়জল (১০), মুসারত বানু (৩) এবং তিন মাসের শিশু কন্যা নুসারত বানুর মৃত্যু হয়। সকলেই ঘুমোচ্ছিলেন। কিন্তু নসিমের স্ত্রী ওই সময়ে শৌচাগারে থাকায় বেঁচে গিয়েছেন। ভিন্-রাজ্যের বাসিন্দা নসিম বাসন ফেরি করতেন। বছরখানেক ধরে ওই এলাকায় কাঠ-টিনের ঘর বানিয়ে বসবাস করছিলেন। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, “একমাত্র এক মহিলা ছাড়া পরিবারের সকলে মারা গিয়েছেন। প্রশাসনের সাহায্যে ওই মহিলাকে অন্যত্র রাখা হয়েছে। পরিবারের অন্য লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
কার্শিয়াঙের কাছে জাতীয় সড়কে ধস। শুক্রবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ ধস নামে সিকিমগামী ৩১ নম্বর (এ) জাতীয় সড়কে। রম্ভি পুলিশ ফাঁড়ির কাছে ২৭ মাইলে প্রায় চার কিলোমিটারের ব্যবধানে দু’টি জায়গায় ধস নামে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ধস সরিয়ে রাস্তার একটি অংশ দিয়ে যান চলাচল শুরু করা হয়। দু’টি জায়গায় রাস্তা একমুখী হয়ে যাওয়ায় দিনভর ওই জাতীয় সড়কে যানজট হয়।
এ দিন ২৭ মাইলে গিয়ে দেখা যায়, ধসের দু’পাশে গাড়ির লম্বা লাইন। পর্যটকদের গাড়ি থেকে বাস, ছোট গাড়ি, ট্রাক-- সবই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশের তরফ থেকে লাভা এবং দার্জিলিং রোড ব্যবহার করে সিকিম যাওয়ার পরার্মশ দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “নামচি ঘুরতে যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে বেরিয়েছি। কয়েকদিন থাকব। ধসের মুখে পড়ব ভাবিনি। ধস কখন সরানো হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছি।” সিকিম যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় ধসের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন কুমার রানা, অনুপ ভট্টাচার্য, মনীশ অগ্রবালরা। তাঁদের কেউ গ্যাংটক যাবেন, কেউ সিংতাম।
জলমগ্ন ফুলবাড়ির ধনতলা গ্রাম। ছবি সন্দীপ পাল।
এ দিকে, মহানন্দার জলস্ফীতির কারণে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির পশ্চিম ধনতলা গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা নমিতা সিংহ, মণি বর্মন, বাবুরাম বর্মন, ফজি খাতুনেরা বলেন, “তখনও সবাই ঘুম থেকে ওঠেননি। আচমকা গ্রামে হু-হু করে জল ঢোকে। আতঙ্কে বাচ্চাকাচ্চা কোলে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে শুরু করি। খাওয়া জোটেনি। ঘরের সব কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” তাঁদের ক্ষোভ, “প্রশাসনের তরফে কেউ খোঁজ নেয়নি। ত্রাণের ব্যবস্থাও হয়নি।” ওই গ্রামেই বাড়ি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের পরেশচন্দ্র রায়ের। তাঁর বক্তব্য, “বাঁধের ব্যবস্থা থাকলে এমন হত না।” এ প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “কেন এই পরিস্থিতি, কেন দুর্গতেরা ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করছেনআমি খোঁজ নিচ্ছি।”
পাহাড়ে এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে শিলিগুড়ি-সিকিম পথে সাতাশ মাইলের কাছে ধসে বিধ্বস্ত
৩১ এ জাতীয় সড়ক পরিষ্কার করার কাজ চলছে। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ রম্ভি পুলিশ ফাঁড়ির ২৭ মাইল এলাকাতে ফের ধস পড়ে বন্ধ হয়ে গেল সিকিমগামী ৩১ (এ) জাতীয় সড়ক। এদিন সকালে ওই এলাকাতেই ধস পড়ে জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পরই দার্জিলিং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ধস সরানোর জন্য ওই রাস্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থা ‘গ্রেফ’কে খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৫ ঘন্টার মধ্যে ধস সরিয়ে রাস্তা স্বাভাবিক করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে লাভা এবং জোরবাংলো হয়ে সিকিমগামী গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং জেলা পুলিশ সুপার দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহ বলেন, “ধস যাতে দ্রুত সরানো যায় সে ব্যপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.