প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতায় সাংসদ তহবিলের টাকায় উন্নয়নমূলক কাজে যার পর নাই দেরি হচ্ছে এবং চালু প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করলেন এ রাজ্যের তৃণমূল সাংসদেরা। তাতে সুর মেলালেন অনেক বাম সাংসদও। সংশ্লিষ্ট কর্তা বা কর্মীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে না-পারলে এই ক্ষেত্রে সুফল মেলা কঠিন বলে সাংসদদের অনেকেই মনে করছেন। তাঁদের প্রস্তাব, যাঁদের গাফিলতিতে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা হোক। কোনও কোনও সাংসদের অভিমত, এই কাজের তদারকির জন্য রাজ্য বা স্থানীয় স্তরে কমিটি থাকা দরকার।
মুখ্যসচিব সমর ঘোষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সাংসদ তহবিলের টাকায় কাজকর্ম নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানেই প্রকল্প রূপায়ণে দেরির ক্ষেত্রে শাস্তির প্রস্তাব তোলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। পরে তিনি বলেন, “তহবিলের টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরে কাজে নজরদারির কেউ নেই। এ ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। যাঁদের জন্য প্রকল্পের কাজে দেরি হচ্ছে, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।” কেন্দ্রীয় সরকারের সাংসদ তহবিল বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য তথা তৃণমূলের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “প্রকল্পের প্রস্তাব জমা পড়ার ৪৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরুর জন্য চূড়ান্ত অনুমতি দেওয়ার কথা প্রশাসনের। কিন্তু মূলত প্রশাসনিক স্তরে কর্মীর অভাবের জন্য ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ৭৫ দিন করা হচ্ছে।”
সম্প্রতি টাউন হলে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রত্যেক সাংসদের তহবিল থেকে এক কোটি টাকা স্বাস্থ্যের জন্য খরচ করা যেতে পারে। এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের সচিব জয়া দাশগুপ্ত সেই প্রসঙ্গ তোলায় বাম সাংসদ প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় প্রতিবাদ করে বলেন, “নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনেই সাংসদ তহবিলের টাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হয়। কোনও বিশেষ নেতা বা নেত্রীর নির্দেশ এ ক্ষেত্রে খাটবে না।” তাঁকে সমর্থন করেন বৈঠকে হাজির তিন সাংসদ সইদুল ইসলাম, সুস্মিতা বাউরি, মহেন্দ্র রায়।
সাংসদ তহবিলের টাকায় যথেষ্ট কাজ না-হওয়ার জন্য তৃণমূল সাংসদেরা এ দিন পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারকে দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাম আমলে এই প্রকল্পের কাজে নজরদারির লোক পাওয়া যায়নি। আবার কোনও প্রকল্পে যতটা কাজ হয়েছে, তার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বা সদ্ব্যবহার শংসাপত্র ঠিক সময়ে আসেনি। সাংসদ গোবিন্দ নস্কর জানান, পরপর দু’টি আর্থিক বছরে তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে চার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। পরবর্তী আর্থিক বর্ষে কাজের প্রস্তাবও জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কর্মী নেই বলে কাজ হচ্ছে না।
বৈঠকের পরে সাংসদ তাপস পাল বলেন, “নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় একটি হাসপাতালে চোখ পরীক্ষার যন্ত্র কিনতে আমার তহবিল থেকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে সেই টাকা পড়ে আছে।” সাংসদ রত্না দে নাগ জানান, কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী প্রকল্পের কাজে অন্তত ৫০ শতাংশ টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) না-পাঠালে বরাদ্দ অর্থের পরের কিস্তি পাওয়া যায় না। প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতায় ইউসি পাঠাতে দেরি হওয়ায় টাকা আসছে দেরিতে। প্রকল্পের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “এই সব কাজের জন্য বিভিন্ন বিভাগ বা দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য জেলা স্তরে কমিটি গড়া হোক।”
বৈঠকে হাজির বাম সাংসদেরাও ‘ইউসি’ পাঠানোর কাজে দেরির অভিযোগ স্বীকার করে নেন। বর্ধমানের সিপিএম সাংসদ সইদুল হক প্রস্তাব দেন, “এই প্রকল্পে কাজের তদারকির জন্য পৃথক সেল গড়া হোক।” বাম সাংসদ সুস্মিতা বাউরির কথায়, “কিছু রাজ্যে এই ধরনের সেল আছে। এখানেও সেল গড়লে সুফল মিলতে পারে।” |