রাজ্য বিধানসভায় প্রথম মহিলা ডেপুটি স্পিকার হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচিত হলেন তৃণমূলের সোনালি গুহ। রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তৃণমূল ডেপুটি স্পিকার পদে সোনালিকে মনোনীত করেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই শুক্রবার সর্বসম্মতিক্রমে সাতগাছিয়ার বিধায়ক ডেপুটি স্পিকার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিধানসভার অন্দরে এই ‘পরিবর্তন’কে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী বামফ্রন্টও।
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি বক্তৃতার পরে এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন হয়। গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিধানসভার অধিবেশন এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্ক চলাকালীন |
বারেবারেই সরকার ও বিরোধী পক্ষের চাপানউতোরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিধানসভা। কিন্তু তার অব্যবহিত পরেই ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন হয়েছে পুরোদস্তুর সহযোগিতার পরিবেশে। বস্তুত, সোনালি এমন এক জন বিধায়ক, দল নির্বিশেষে সবাই যাঁকে চেনেন এবং ব্যক্তিগত স্তরে সকলের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক। সেই জন্যই ডেপুটি স্পিকারের আসনে তাঁকে বসানোর জন্য মমতার সিদ্ধান্ত ‘সরস আনুষ্ঠানিকতা’য় মেনে নিয়েছেন সকলেই।
প্রথা মেনে ডেপুটি স্পিকারকে তাঁর আসনে নিয়ে গিয়ে বসান সভার নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। প্রথা অনুযায়ী, ডেপুটি স্পিকার যখন সভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন না, সেই সময় তাঁর আসন হয় বিরোধী ব্লকে। সোনালিকে তাঁর আসনে পৌঁছে দেওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেন, “আমি খুশি এই পরিবর্তনে। উনি এ বার বিরোধীদের দিকে চলে এলেন! ওই দিক থেকে (ট্রেজারি বেঞ্চ) চেঁচামেচি হলে তিনি সামলাতে পারবেন!” বামফ্রন্টের সহকারী নেতা, আরএসপি-র প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “এত দিন সোনালি বলে ডাকতাম, ও-ও দাদা বলত। সেই সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হল! ওর মতো গলার জোর এই সভায় কারও ছিল না! এমন প্রাণবন্ত গলাকে আপনি (স্পিকার) নীরব করে দিলেন, তার জন্য ধন্যবাদ!” আর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্য, “সোনালি অনেক দিনের বিধায়ক। সভার নিয়মকানুন জানে। কিন্তু বই পড়েই সব শেখা যায় না। বাস্তববুদ্ধি আর অভিজ্ঞতা দিয়ে সোনালি ভাল ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। কথা বলতে ইচ্ছা হলে একটু...!” মমতা বাক্যটি শেষ না-করেই ইশারায় বুঝিয়ে দেন, তিনি সোনালির মুখ বন্ধ করতে চাইছেন! সভাকক্ষ জুড়ে হাসির রোল ওঠে। বিরোধী বিধায়কেরাও টেবিল চাপড়ে সোনালিকে অভিনন্দন জানান।
দায়িত্ব গ্রহণ করে সোনালি বলেন, “হালিম সাহেব (পূর্বতন স্পিকার) শিখিয়েছিলেন, বিধানসভা বিরোধীদের জন্যই। আমাদেরও সেটা খেয়াল রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সকলকে সমমর্যাদা দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব। আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই।” সেই সঙ্গেই তিনি সুভাষবাবুদের মনে করিয়ে দেন, “যখন টেবিলে থাকব, প্রোটোকল অনুযায়ী যা বলার, বলবেন। টেবিলের বাইরে যেমন ডাকতেন, সেই নামেই ডাকবেন! পদটা তো চিরদিনের নয়! মানুষ চিরদিনের!” আবার টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানায় বিরোধী শিবির। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু তার মধ্যেই সংযোজন করেন, “বিরোধীদের বলছি, নিজের কর্মে ডেপুটি স্পিকার কিন্তু নীরব থাকবেন না!” |