হিংসা দমনে সরকার কড়া, ‘বার্তা’ মুখ্যমন্ত্রীর
নির্বাচনোত্তর হিংসা এবং সার্বিক ভাবে ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলায় তাঁর সরকার যে ‘কড়া পদক্ষেপ’ করবে, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, প্রশাসক হিসাবে তিনি ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’! রাজ্য জুড়ে বেআইনি অস্ত্র ভাণ্ডারও যে বরদাস্ত করা হবে না, বুঝিয়ে দিয়েছেন তা-ও। তাঁর কথায়, “বন্দুক দিয়ে কথা বলতে হবে কেন? কেন এত অস্ত্র ঢুকবে? সে আপনিই (বিরোধী) হোন বা আমিই হই, অস্ত্রকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। পুলিশকে প্রথম দিনই বলে দেওয়া হয়েছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবেন, দলতন্ত্র নয়!”
‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলায় তাঁর সরকারের কড়া অবস্থান ব্যাখ্যা করার পাশাপাশিই মমতা বলেছেন, নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনওই খারাপ জায়গায় যায়নি। অথচ ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা বেশি হইচই করছেন। বিরোধীদের অভিযোগের পরে জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “সন্ত্রাস করতে আসিনি, সন্ত্রাস করতে দেবও না! সন্ত্রাস যাতে না-হয়, তার জন্য যে চেষ্টা করলাম, সেটা দেখলেন না! মনে রাখবেন, প্রশাসক হিসাবে আমি কিন্তু রুক্ষ এবং কঠোর (রাফ অ্যান্ড টাফ)!”
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কে বিরোধী বামফ্রন্টের বিধায়কদের অধিকাংশই নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে বাম কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে শাসক দলের আক্রমণ, বামেদের দলীয় কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগে সরব হন। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র শুক্রবার ওই বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, ভোটের পরে বামেদের ১৬ জন নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন, প্রায় ১১ হাজার লোক ঘরছাড়া। সাড়ে তিনশোর বেশি বাম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়ের করা হয়েছে। অপরাধ যারা করছে, তারা যে দলেরই হোক, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, তাদের ৭ দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা উচিত। সূর্যবাবুর পরে মুখ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন, “পশ্চিমবঙ্গে যে দিন এত বড় রায় (ভোটের) বেরোল, তখন অনেকে বলেছিলেন বাংলায় ভয়ঙ্কর রক্তপাত শুরু হবে! বাংলা আবার বধ্যভূমি হবে! আমরা কিন্তু বিজয় উৎসব করতে দিইনি। রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাতে বলেছিলাম, যাতে উত্তেজনাটা কমিয়ে রাখা যায়। তার জন্য এক বারও কৃতজ্ঞতা জানালেন না! শুধু সন্ত্রাস, সন্ত্রাস বলে গেলেন!” মমতা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “আমাদের কর্মীরা খুন হননি? মুর্শিদাবাদে গত দু’দিন ধরে কংগ্রেস কর্মীরা খুন হয়েছেন। যারাই করছেন, তাঁদের বলছি এ সব করবেন না।” বাম জমানার রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনাগুলির যে নতুন করে তদন্ত হবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু এ দিন প্রশ্ন তোলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইছি, সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তদন্তের জন্য কমিশন হবে বলে সংবাদপত্রে বেরিয়েছে। এই তদন্ত কমিশনের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে? বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন কী করে এমন ঘোষণা বাইরে হতে পারে?” মুখ্যমন্ত্রী জবাবে বলেন, সাঁইবাড়ির তদন্তে ফের কমিশন বসানোর সিদ্ধান্ত নতুন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই নেওয়া হয়েছিল। পরে কেউ তা নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি আবার বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “সাঁইবাড়ির ঘটনার পরে সেই সময়ে মুখার্জি কমিশন হয়েছিল ঠিকই। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার সুযোগও ছিল। কিন্তু তার ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। কোনও পদক্ষেপ না-হলে সেই কমিশন তো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়!” মুখ্যমন্ত্রী জানান, কাশীপুর গণহত্যা মামলার কাগজপত্রও সরকার খতিয়ে দেখছে, নানুর, ছোট আঙারিয়া, বিডিও কল্লোল শূরের মৃত্যু বা হাল আমলের সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ঘটনা সব কিছুরই নতুন করে তদন্ত হবে। সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, মরিচঝাঁপিতে শরণার্থীদের উপরে অত্যাচারের ঘটনারও তদন্ত হোক। যে প্রস্তাব ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। মমতা শোভনবাবুর প্রস্তাব বিবেচনা করার কথা জানিয়ে দেন এ দিনের ভাষণেই।
‘সন্ত্রাস’ দমনে কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ‘সহজ পাঠ’ আবার ফিরিয়ে আনা হবে। বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি শিক্ষায় আরও ‘স্বচ্ছন্দ’ করে তোলার উপরে জোর দেওয়া হবে। যাতে তারা সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যের মতো ক্ষেত্রে শুধু রাজনীতির লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না-থেকে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিলে ভাল কাজ হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। এই সূত্রেই মমতা উল্লেখ করেছেন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর্ত্য সেন, সুগত বসুদের পরামর্শ নেওয়ার কথা। মমতার নির্দেশ মেনে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন ব্লকে ২ টাকা দরে চাল পাওয়ার অধিকারী যে পরিবারগুলি হবে, তাদের বাৎসরিক আয়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর জন্য খাদ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এ দিন। সরকার পক্ষের বিধায়কদের প্রবল বাধায় বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু এ দিন বক্তৃতা করতে গিয়ে বারবার বাধা পান। দু’বার বক্তৃতা থামিয়ে বসে পড়তেও দেখা যায় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের পরিষদীয় দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনবাবু সভাকক্ষে ঘুরে ঘুরে বিধায়কদের শান্ত করলে সূর্যবাবু বক্তৃতা শেষ করেন। বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন ছিল, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে পাহাড় নিয়ে কী চুক্তি হল, বিধানসভায় তা জানানো হল না কেন? মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বলেন, সূর্যবাবু চাইলেই গিয়ে কাগজপত্র দেখে আসতে পারেন! বিরোধী দলনেতা প্রতিবাদ করে বলেন, কারও ব্যক্তিগত প্রশ্ন এটা নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতির প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রী তখন জানান, ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়ে গেলেই তিনি বিধানসভায় জানিয়ে দেবেন।
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.