|
|
|
|
নথিপত্র ঠিক থাকলে তিন দিনেই মিলবে কার্ড |
ভুয়ো রেশনকার্ড ও দালালচক্র ভাঙতে ব্যবস্থা নিচ্ছে খাদ্য দফতর |
সীমান্ত মৈত্র • বনগাঁ |
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার গোয়ালবাগি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় খেতমজুর সাত্তার মণ্ডল তাঁর মেয়ে তহমিনার রেশনকার্ডের জন্য স্থানীয় মালিপোঁতা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দফতরে বহুদিন আগে আবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও মেয়ের রেশনকার্ড হাতে পাননি সাত্তার। যদিও তিনি এবং তাঁর স্ত্রী, দু’জনেরই সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র রয়েছে। ১৩ বছরের তহমিনার জন্মের শংসাপত্রও জমা দেওয়া হয়েছিল আবেদনপত্রের সঙ্গে। কিন্তু দীর্ঘদিন কেটে গেলেও এখনও রেশনকার্ড না পাওয়ায় হতাশ সাত্তার। তবে সাত্তার একা নন, মালিপোঁতা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক বাসিন্দাই সঠিক নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও রেশনকার্ড পাচ্ছেন না।
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে রেশনকার্ড পেতে সাধারণ মানুষের হয়রানির পাশাপাশি, দালালদের মাধ্যমে অনায়াসে রেশনকার্ড পাওয়া এবং জাল রেশনকার্ড ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দফতর। যদিও এর আগে বামফ্রন্ট সরকারও এই সব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যে প্রচুর ভুয়ো রেশনকার্ড রয়েছে। যার মধ্যে শুধু উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই রয়েছে ২ লক্ষ ২০ হাজার ভুয়ো রেশনকার্ড।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সাধারণ মানুষ রেশনকার্ডের জন্য আবেদন করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যাতে রেশনকার্ড হাতে পান সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আবেদন করার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে দেখা বে আবেদনকারীর নথিপত্র ঠিক আছে কি না।”
মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, রাজ্যে এতদিন ধরে যে ধরনের রেশনকার্ড চালু রয়েছে তার পরিবর্তে ডিজিটাল রেশনকার্ড চালু করা হবে। এ জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
রেশন কার্ড বিলির নিয়ে হয়রানি, দিনের পর দিন নথিপত্র খতিয়ে দেখার ‘অজুহাত’ দিয়ে রেশনকার্ড আটকে রাখা, রেশনকার্ড পেতে দালালদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদির প্রতিবাদে বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ। এমনকী ওই বিভাগের জেলা দফতরের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল বাগদা ব্লকে। বাগদা ব্লক অফিস চত্বরেই রয়েছে খাদ্য দফতরের অফিস। সেখান থেকেই বেশন কার্ড বিলি করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে গ্রামবাসীরা গিয়ে জানতে পারেন ওই দিন কার্ড দেওয়া হবে না। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা গোটা বিডিও অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তার পর থেকে আজও রেশন কার্ড হাতে পাননি তাঁরা। সাধারণ মানুষের আরও অভিযোগ, সঠিকভাবে আবেদন করেও কার্ড না মিললেও দদাল ধরলে সহজেই মিলছে রেশন কার্ড। নির্বাচনের আগে রেশনকার্ড তুলে নিয়ে পারিবারিক রেশনকার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বামফ্রন্ট সরকার। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটায় ওই কার্ড বিলির সময় তার বিরোধিতা করে তৃণমূল। ফলে ওই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
তবে রেশনকার্ড নিয়ে হয়রানির নানা অভিযোগের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার একটি বড় সমস্যা হল ভুয়ো রেশনকার্ড। জেলার সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় রেশনকার্ডের বিষয়ে ব্যাপক কড়াকড়ি রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়েক বছর আগে এই জেলাতেই সানে তিন লক্ষ ভুয়ো রেশনকার্ড পাওয়া যায়। এমনকী খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দফতরের ‘সিল’ মারা ও খাদ্য নিয়ামকের স্বাক্ষর করা বেশ কিছু খালি রেশনকার্ড উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই সময় দেখা যায় বাড়ির গরু, ছাগলের নামেও বের করা হয়েছে রেশনকার্ড। ভুয়ো রেশনকার্ডকে কেন্দ্র করে কয়েকজ রেশন ডিলারকে কালো তালিকাভুক্তও করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে নাম-ঠিকানা না লেখা অবস্থায় আট হাজার অব্যবহৃত রেশনকার্ড বনগাঁয় খাদ্য দফতরের নাজিরখানা থেকে উধাও হয়। অভিযোগ ছিল, ওই সব রেশনকার্ড বাইকরে চড়া দামে বিক্রি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় রেশন কার্ড পরিচয়পত্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ওই সব এলাকায় ভুয়ো রেশনকার্ডের রমরমা বেশি। এই সব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বৃহস্পতিবার বনগাঁয় মহকুমাশাসকের দফতরে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং খাদ্য নিয়ামকের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়। সেখানে বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “রেশন ডিলারদের এবং রেশন ব্যবস্থা দেখার জন্য বিভিন্ন কমিটি রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তাদের কোনও ভূমিকা নেই। এখন সেই কমিটিগুলিতে ঢেলে সাজা হবে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ও পুরসভার ডেথ রেজিস্টার দেখে গত পাঁচ বছরের মৃত্যুর তালিকা এবং যাঁরা অন্যত্র চলে গিয়েছেন তাঁদের তালিকা তৈরি করা হবে।”
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশে বলা হয়েছে কারও মৃত্যু হলে বা কেউ অন্যত্র চলে গেলে তাঁর রেশন কার্ড জমা দিতে হবে। না হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ওই আইন যাতে আরও ভালভাবে কার্যকর করা হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|