|
|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
‘আমরা-ওরা’ বুঝি না, আমার পরিচয় আমি শিল্পী |
বললেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়েও এখনও ‘সুবর্ণলতা’তেই আবদ্ধ।
তাঁর আজ এবং ভবিষ্যৎ। মন খুললেন। মুখোমুখি সংযুক্তা বসু |
পত্রিকা: শেষ ভাল বই কী পড়েছেন?
অনন্যা: এখন যেটা পড়ছি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘দূরবীন’। খুব ভাল লাগছে।
পত্রিকা: কখন বই পড়েন?
অনন্যা: অবসর পেলেই। ছুটির দিনে। শু্যটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে।
পত্রিকা: প্রিয় লেখক কে?
অনন্যা: রিচার্ড বাখ, আর আয়ান র্যান্ড। ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে সকলের চারিত্রিক গঠনটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলেন আশাপূর্ণা দেবী। রবীন্দ্রনাথ তো প্রিয় বটেই। তাঁকে নিয়ে বিশেষ কী বলব? আমার আর দু’জন প্রিয় লেখকের মধ্যে রয়েছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আর হুমায়ুন আহমেদ।
পত্রিকা: এক দিকে বাংলা সিরিয়ালে অভিনয়, অন্য দিকে কঠিন বই পড়া, এর মধ্যে ভারসাম্য রাখেন কী করে?
অনন্যা: ভারসাম্য রাখার জন্যই বই পড়া, সিনেমা দেখা, গান শোনা। মনের তেষ্টা মেটায়। তখন রোজকার কাজটা একঘেয়ে লাগে না।
|
পত্রিকা: আর এই যে রাজনৈতিক পালাবদল হল, টালিগঞ্জে ‘আমরা-ওরা’র চোরাস্রোত। একজন সংবেদনশীল অভিনেত্রী হিসেবে এ সবের মধ্যে আপনাকে পাওয়া যায় না কেন?
অনন্যা: ‘আমরা-ওরা’ যে রয়েছে সেটা নানা জনের মুখে শুনছি। আমি এর মধ্যে নেই কারণ, রাজনীতি খুব বেশি বুঝি না। রাজনীতি বুঝতে হলে আমার মনে হয় অনেক ইতিহাস জানতে হয়। বিশ্বের আর স্বদেশের। আমি অত কিছু জানি না। আমি শিল্পী। এবং সেটাই আমার পরিচয়।
পত্রিকা: শোনা যাচ্ছে নাচের স্কুল খুলছেন?
অনন্যা: এ বছরের মধ্যেই একটা নাচের অকাদেমি খোলার ইচ্ছে। আমাদের নাচের যে সব ফর্ম হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে
আদিবাসী ধাঁচের কিছু নাচ মিলিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করার চেষ্টা হবে। বেশি ছাত্রছাত্রী হলে
বাড়ি ভাড়া নিতে হবে। না হলে আমার বাড়িতেই চালু হবে।
পত্রিকা: ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘আবহমান’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এখন তো আপনার সেরার সেরা চরিত্রে কাজ করার কথা। কিন্তু করছেন মেগা সিরিয়াল। ভাবছেন নাচের স্কুল খুলবেন। ঠিক কী করতে চান বোঝা কঠিন...
অনন্যা: দেখুন ভাল ভাল ছবি, সেরা সেরা চরিত্র সারা বছরে কতগুলোই বা হয়? দ্বিতীয় কথা যে ক’টা ভাল ছবি হচ্ছে সেখানে অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রতিযোগিতা অবশ্যই আছে। ভাল ভাল শিল্পী আছেন। কাজটা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ভাগবাঁটোয়ারা করার পর যে কাজটুকু আসছে সেটা খুবই কম।
পত্রিকা: তা ছাড়া আপনার স্বভাবটাও খুঁতখুঁতে। সব কাজ যে পছন্দ হয় তাও নয়...
অনন্যা: খুঁতখুঁতে বলাটা ঠিক হবে না। সত্যি বলতে কি আমার কাছে প্রচুর চিত্রনাট্য এসেছে। কিন্তু পড়েই আমার অভিনয় করতে ইচ্ছে করেছে এমন চিত্রনাট্য আসেনি। যেমন ধরুন ‘আবহমান’ করার পর বছর দেড়েকের মধ্যে আর কোনও চিত্রনাট্য পাইনি কাজ করার মতো।
পত্রিকা: শেষ চিত্রনাট্য কী পড়েছেন?
অনন্যা: ‘ল্যাপটপ’ ছবির চিত্রনাট্য। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিতে একজন টাইপিস্টের চরিত্রে অভিনয় করছি। যার কাজ একজন অন্ধ সাহিত্যিককে লেখায় সাহায্য করা। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘ভাল মেয়ে খারাপ মেয়ে’ নিয়ে ছবি করছেন তমাল দাশগুপ্ত। এর চিত্রনাট্যটাও ভাল লেগেছে। এই ছবিতেও কাজ করব আমি। আসলে কী জানেন। ভাল চিত্রনাট্য পড়া প্রায় ভাল বই পড়ার মতো। কিন্তু ধরুন একটা সুন্দর গল্প, অথচ চিত্রনাট্যটায় গল্পটাকে ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছে না, তখন খুব খারাপ লাগে। পরিচালক বা চিত্রনাট্যকারের কাজ গল্পটাকে ভাল ভাবে দেখিয়ে দেওয়া, ভিশুয়ালাইজ করানো।
পত্রিকা: এই সব চিত্রনাট্য কেন পছন্দ হল?
অনন্যা: ‘ল্যাপটপ’-এর ওই টাইপিস্ট চরিত্রটায় খুব নিস্তব্ধতা আছে। সেটা আমাকে খুব আকর্ষণ করেছে। আর ‘ভাল মেয়ে-খারাপ মেয়ে’-তে আমি খারাপ মেয়ের চরিত্রটা করছি। চিত্রনাট্যের এই চরিত্রটার অনেক শেড্স আছে।
পত্রিকা: এ রকম কখনও মনে হয় যে জনসংযোগটা ঠিকঠাক করতে পারেন না? মানে পি আর...
অনন্যা: পি আর বলতে কী বোঝায়? হ্যালো দাদা কেমন আছেন? একটু দেখবেন।
এ সব আমি করতে পারি না। আমার কাছে পি আর-এর সংজ্ঞা হল---কেউ একটা ভাল কাজের সুযোগ দিয়েছেন। সেখানে আমার সেরা কাজটুকু দেব। সেই কাজটাই কথা বলবে আমার পরের ছবির কাজটার জন্য। কই কখনও দেখিনি তো পরিচালকেরা পি আর করেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে।
পত্রিকা: একজন শিল্পীর জীবনে জাতীয় পুরস্কারের গুরুত্ব কতটা?
অনন্যা: এটাই যে একটা স্বীকৃতি পাওয়া গেল এবং শিল্পীর পরিচিতিটা রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। কারও জীবনে হয়তো একটা জাতীয় পুরস্কার অনেক কাজের সুযোগ করে দিতে পারে। আমার জীবনে কোনও সুযোগ এনে দেয়নি। এখন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে অভিনয় করছি। আমার বিশ্বাস জাতীয় পুরস্কার না পেলেও তিনি আমাকে কাজে নিতেন।
পত্রিকা: পুরস্কারে আস্থা নেই আর?
অনন্যা: না। আমি আশা করেছিলাম ভাল কাজ আসবে। সেটা হয়নি।
পত্রিকা: এই যে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী হিসেবে আপনি ব্যাপারটাকে কী ভাবে দেখছেন?
অনন্যা: খুবই খারাপ লাগছে। সত্যি পুরস্কার পাওয়া নিয়ে কোনও ‘লবিং’ হয় কিনা জানি না। এই ধরনের কথা শুনতে ভাল লাগছে না একেবারেই। |
|
পত্রিকা: যাঁর ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সেই ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে এই বিতর্কের পর আর যোগাযোগ হয়েছে?
অনন্যা: না যোগাযোগ করিনি। প্রসঙ্গটি খুবই স্পর্শকাতর। মনে হয় অনেক লোক তাঁকে ফোন বা এস এম এস করেছে। আমি এই রকম করে কাউকেই বিব্রত করতে চাই না।
পত্রিকা: এমনিতে ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ হয় না? উনি তো পর পর ছবি করছেন?
অনন্যা: পার্টিতে দেখা হয়। ঋতুদা ভাল ছবি করলে ফোন করে বলি ভাল লাগল। তবে কাজের কথা কখনও হয় না। আমিও বলি না। ঋতুদাও বলে না।
পত্রিকা: অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরবর্তী ছবিতে আপনাকে নেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু উনি দক্ষিণ ভারত থেকে দু’জন নায়িকা নিলেন। বাদ পড়ে গেলেন আপনি। মন খারাপ হয়নি?
অনন্যা: না। কারণ টোনিদার (অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী) সঙ্গে কাজ করার কথা পাকা হয়নি। কনফার্ম করে যদি আমাকে না জানিয়ে নতুন নায়িকা নিতেন খুব খারাপ লাগত। তার পরেও আমাদের পার্টিতে দেখা হয়েছে। আড্ডা মেরেছি।
পত্রিকা: ‘সুবর্ণলতা’ সিরিয়ালে আপনি এখন এক মেয়ে আর দুই ছেলের মা। মা না হয়েও বেশ সুন্দর সামলাচ্ছেন বাচ্চাদের সঙ্গে অভিনয়। কী করে পারছেন?
অনন্যা: আমরা যে সব চরিত্রে অভিনয় করি তার কোনও আদল আমাদের কাছে থাকে না। নিজেরাই ভাবনাচিন্তা করে বানিয়ে তুলি। তেমনি ‘সুবর্ণলতা’য় আমি ছোট্ট চাঁপার মা। তা ছাড়া রয়েছে আমার দেখার অভিজ্ঞতা। আমি তো দেখেছি বাড়ির আত্মীয়স্বজন যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন তাঁরা বাচ্চাদের কী ভাবে খাওয়াচ্ছেন, ঘুম পাড়াচ্ছেন। দেখেছি এবং মনে রেখেছি। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
পত্রিকা: একটা সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন দেব-জিৎ-দের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। কার্যত সেটা হল না কেন?
অনন্যা: আমার মনে হয় অনেক ফ্রেশ মুখ চলে এসেছে।
পত্রিকা: সেটা কি সত্যি? না দেব-জিৎরা যে ঘরানার ছবি করেন তার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে কোথাও অসুবিধে হচ্ছে?
অনন্যা: না। ভাল অভিনয়ের সঙ্গে কমার্শিয়াল ছবির কোনও বৈরিতা আছে বলে আমি মনে করি না। |
|
|
|
|
|