ফের হামলার আশঙ্কায় ঝাড়গ্রামের আক্রান্তরা
ফের হামলার আশঙ্কায় ত্রস্ত ঝাড়গ্রামের আগুইবনি, চন্দ্রি ও সাপধরা অঞ্চলের সিপিএম নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। বৃহস্পতিবার তাণ্ডবের পর আক্রান্ত পরিবারগুলিকে জনগণের কমিটির নাম করে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন। ভাঙা বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে কিছু পরিবার। প্রবল বর্ষণে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু মেলেনি তাদের। নেই খাবার, এমনকী জামাকাপড়ও। নাম কা ওয়াস্তে পুলিশ এসে তদন্ত করে গিয়েছে বটে, তবে প্রশাসনের তরফে ত্রাণের চাল বা ত্রিপল কিছুই মেলেনি। সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলির আর্তি, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের বাঁচান’। শুক্রবার এলাকা পরিদর্শনে এসে বাসিন্দাদের মুখে এমন আর্তি শুনে রীতিমতো অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ব্যক্তিগত দু’জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ডহরেশ্বরবাবু প্রথমে যান আগুইবনির একতাল গ্রামে। ঘুরে দেখেন নেতা-কর্মীদের ভাঙচুর-লুঠ হওয়া বিপর্যস্ত বাড়িঘর। সিপিএম নেতা গিরিন্দ্র পাত্রের স্ত্রী সুবোধবালাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “নলকূপ ভেঙে দিয়েছে ওরা। খাবারের জলটুকুও নেই। শুনেছি বিপদের কথা শুনলে মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কাছে ছুটে যান। ওঁকে বলে আমাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দিন।”
ধানশোলা গ্রামে সুদর্শন মাহাতোর দগ্ধ বাড়ি দেখছেন ডহরেশ্বর সেন। নিজস্ব চিত্র।
চন্দ্রির ফুলসুন্দরি গ্রামে ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি-কর্মাধ্যক্ষ গোপাল পাতরের বোন অঞ্জনা পাতর ডহরেশ্বরবাবুকে বলেন, “২০ আষাঢ় আমার বিয়ের দিন ছিল। তিলে তিলে বিয়ের জোগাড় করেছিল দাদা। ঘরবাড়ি ভেঙেচুরে সব লুঠ হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন পথের ভিখিরি।” বিড়া-নয়াগ্রামের এক তরুণ লরিতে করে মালপত্র নিয়ে এলাকা ছাড়ছিলেন। ডহরেশ্বরবাবুকে শুনতে হয়, “আপানার সান্ত্বনা আমাদের আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে। সর্বত্র ওদের লোক ছড়িয়ে রয়েছে।”
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ধানশোলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও ডিওয়াইএফ নেতা সুদর্শন মাহাতোর পোড়া মাটির বাড়ির খড়ের ছাউনি থেকে উড়ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। সুদর্শনবাবু সপরিবারে পলাতক। কিছুটা দূরে সিপিএমের শাখা সম্পাদক নিমাই মাহালির মাটির বাড়িও পুড়েছে। দগ্ধ মাটির বাড়ির এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলেন নিমাইবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যা মাহালি। সন্ধ্যাদেবী ডহরেশ্বরবাবুকে বলেন, “একখানা ত্রিপলের ব্যবস্থা করে দিন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ভিজছি।” হামলাকারীরা ফতোয়া দিয়ে যাওয়ায়, সন্ধ্যাদেবীর মতো আক্রান্তদের সাহায্য করার ঝুঁকি নিতে পারছেন না পড়শিরা।
সাপধরা অঞ্চলের হরিনা ও জামিরার মতো গ্রাম ঘুরে বিচলিত ডহরেশ্বরবাবু বলেন, “পরিবর্তন যে এত বীভৎস হতে পারে তা আমাদের ধারণা ছিল না। মাওবাদীদের মতোই জনগণের কমিটিও মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বিস্তারিত রিপোর্ট জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে।” ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সাহায্য, দোষীদের গ্রেফতার ও এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প করার দাবিতে এ দিন ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক স্বদেশরঞ্জন প্রামাণিকের কাছে স্বারকলিপি দেয় সিপিএমের ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ জোনাল কমিটি।
এ দিকে, হামলায় জড়িত সন্দেহে চন্দ্রির বিড়া-নয়াগ্রাম থেকে ধৃত তিন জনকে শুক্রবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
Previous Story Medinipur Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.