টানা বৃষ্টিতে দিনভর দুর্ভোগ
লাগাতার বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দুই মেদিনীপুরের জনজীবন। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারির পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। দিঘা মোহনা থেকে পাড়ি দেওয়া তিনটি ট্রলার আটকে রয়েছে গভীর সমুদ্রে। ধস নেমেছে কোলাঘাটের কাছে রূপনারায়ণের বাঁধেও।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সর্বত্র বৃষ্টি শুরু হয়। চলে রাতভর। শুক্রবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টির জেরে রাস্তাঘাটে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির দাপটে হাটে-বাজারে দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায় একে একে। অধিকাংশ স্কুল-কলেজে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। অফিস-কাছারিতে কর্মীদের উপস্থিতি ছিল কম। রাস্তাঘাটে লোকজনও ছিল না বললেই চলে।
দিঘা মোহনা থেকে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া চারটি ট্রলারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে মা চলন্তিকা ট্রলারটি নামখানার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। মা বাসন্তী, প্রিয়াঙ্কা ও পঞ্চপ্রিয়া নামে বাকি তিনটি ট্রলার সাগরদ্বীপ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে বিকল হয়ে আটকে রয়েছে বলে খবর। ওই তিনটি ট্রলারে জনা পঁয়ত্রিশেক মৎস্যজীবী রয়েছেন। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসের অভিযোগ, “ওই মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করার জন্য হলদিয়া উপকূল রক্ষী বাহিনীর কাছে বার বার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।” এ দিন মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে কাঁথির মীনভবনে এবং দিঘা মোহনায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। দিঘার কন্ট্রোলরুম থেকে সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগ বলেন, “গভীর সমুদ্রে আটকে থাকা মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করার জন্য রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা ও জেলা পরিষদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।”
দিঘায় জলোচ্ছ্বাস। শুক্রবার নিজস্ব চিত্র।
জলোচ্ছ্বাসের জেরে ক্ষয়ক্ষতি হয় উপকূলবর্তী এলাকাতেও। শুক্রবার সকালে চাঁদপুর পরিদর্শনে যান রামনগর ১-এর বিডিও রানা বিশ্বাস ও কাঁথির মহকুমাশাসক প্রকাশ পাল। রানা বিশ্বাস বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। তবে, পূবালি বাতাস না থাকায় বাঁচোয়া। উপকূলের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।” রামনগর ১ ব্লক অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি উপকূলবর্তী পঞ্চায়েতগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সমুদ্র স্নানে গিয়ে জখম হন দিঘার কয়েকজন পর্যটক। এরপরই দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ পর্যটকদের সমুদ্রে স্নান করার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এ দিকে, শুক্রবার সকালে ভরা জোয়ারে কোলাঘাট বাজারের কাছে বাবুয়ায় রূপনারায়ণের নদী বাঁধে ধস নামে। প্রায় ১০০ মিটার জুড়ে নদীবাঁধ ধসে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা। সেচ দফতরের তমলুক বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার দিগন্ত মাইতি বলেন, “ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি ভরা কোটালের স্রোতের ধাক্কায় পাকা বাঁধে ধস নেমেছে। জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।” কোলাঘাটের বিধায়ক বিপ্লব রায়চোধুরী বলেন, “ওই এলাকায় নদীবাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়লে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য জেলা প্রশাসন ও সেচ দফতরের আধিকারিকদের হস্তক্ষেপ করতে বলেছি।”
রূপনারায়ণে বাঁধে ধস। নিজস্ব চিত্র।
দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি চলছে পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে। ইতিমধ্যেই বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। জেলার বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে এই বৃষ্টিতে সব্জি চাষে সামান্য ক্ষতি ছাড়া বড় ধরনের ক্ষতির কোনও সম্ভাবনা নেই বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে। কিন্তু আরও কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হলে বন্যার ভ্রুকুটি দেখা দিতে পারে। তাতে আউস ধানের বিপুল ক্ষতি হবে। কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “এখন মাঠে সামান্যই সব্জি রয়েছে। সবে আউস ধান লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।”
কৃষি দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮১.৯ মিলিমিটার। ইতিমধ্যেই অবশ্য শিলাবতী, কেলেঘাই, কপালেশ্বরী-সহ বহু নদীতে জল বাড়তে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন সবং, নারায়ণগড়, ঘাটাল, কেশপুর, কেশিয়াড়ি, দাঁতন-সহ বন্যাপ্রবণ প্রতিটি ব্লককেই তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
First Page Medinipur Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.