বয়স ১৩০ পেরিয়েছে। ছাদ ও দেওয়ালে আগাছা গজিয়েছে। দেওয়াল জুড়ে ফাটল। বছর তিনেক আগে অপারেশন থিয়েটার ও রান্নাঘরের কড়িবরগা ভেঙে পড়েছিল। পূর্ত বিভাগ বছর দু’য়েক আগে বাড়িটিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এর মধ্যেই চলছে পুলিশ ব্রিগেড হাসপাতাল। ভর্তি আছেন ৪০ জন পুলিশকর্মী। বিপদের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন রোগী, নার্স, চিকিৎসক ও অচিকিৎসক কর্মীরা।
ব্যারাকপুর লাটবাগান (বর্তমান নাম মঙ্গল পাণ্ডে উদ্যান) পুলিশ ট্রেনিং কলেজের ভবনটি ১৮৮০ তে তৈরি হয়। ১৯৪৮-এখানে ১২০ শয্যার পুলিশ ব্রিগেড হাসপাতালটি চালু হয়। প্রায় দেড় বিঘে জমির উপরে নির্মিত এই হাসপাতাল ভবনটি এখন জরাজীর্ণ। দোতলা এই হাসপাতালের পশ্চিম দিকের অপারেশন থিয়েটার ছিল। নীচে ছিল রান্নাঘর। বছর তিনেক আগে এখানেই কড়িবরগা ভেঙে পড়ে। |
বাড়িটির ছাদে আর দেওয়ালে বট, অশ্বত্থ ও আগাছা গজিয়েছে। দেওয়ালে ধরেছে লম্বা ফাটল। দোতলায় রোগীরা থাকেন। অধিকাংশ শয্যাই খালি। ফাঁকা শয্যায় পায়রার মল পড়ে থাকে। ওয়ার্ডগুলি ঠিকমতো আলোকিত হয় না। ফলে রাতে হানাবাড়ির মতো লাগে। বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে জল পড়ে। তখন শয্যা সরিয়ে নিতে হয়।
এক সময়ে হাসপাতালে অনেকগুলি ওয়ার্ড ছিল। এখন শুধু পুরুষ ও মহিলাদের সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। শৌচাগারগুলিও নোংরা। রয়েছেন ৬ জন চিকিৎসক, ১৩ জন নার্স, ৩ জন ফার্মাসিস্ট ও অন্যান্য কর্মী। এক্সরে আর প্যাথলজি ইউনিট বন্ধ। রান্নাঘরে বেড়াল ঘুরে বেড়ায়। রান্নাঘরে ধোঁয়া বেরোনোর ব্যবস্থা না থাকায় দেওয়ালগুলি কালো হয়ে গিয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। ফলে অব্যবহারের যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তাই রোগীদের পরীক্ষার জন্য বাইরে পাঠাতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসাধীন পুলিশকর্মী বললেন, “দেওয়াল চাপা পড়েও মৃত্যু হতে পারে। এই অবস্থার জন্য অনেক ভর্তি হতে চান না। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।” |
পূর্ত বিভাগের উত্তর কলকাতার ডিভিসনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (১) অসীম রায় বললেন, “ভবনটিকে বছর দুই আগে ‘বিপজ্জনক বিল্ডিং’ হিসাবে ঘোষণা করে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিল্ডিংয়ের পূর্ণাঙ্গ মেরামতি দরকার। কিন্তু খরচ অনেক। শীঘ্রই হাসপাতাল ভবনের কিছু মেরামতি আর চুনকাম করা হবে। নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।’’
হাসপাতালের সুপার অমিতাভ সেন, “পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বহু বার জানিয়েছি। নতুন হাসাপাতাল ভবন তৈরির পরিকল্পনা আছে। অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ শুরু হবে।” ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ডিআইজি রাজেশ সিংহ। তিনি বললেন, “খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”
|