প্রতিশ্রুতি আগেই ছিল। এ বার তা কার্যকর করল তৃণমূল পরিচালিত রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা। জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য এ বার থেকে আর পয়সা খরচ করতে হবে না রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকার বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বামপন্থীরা যখন এই পুরবোর্ড পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তখন জঞ্জাল সাফাইয়ের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা বাসিন্দাদের কাছ থেকে কাজের বিনিময়ে নির্ধারিত অর্থ নিত। পুরসভার তথ্যানুযায়ী সেই অর্থের হার নির্ধারিত হত আবর্জনা ফেলার জায়গা থেকে বাড়ির দূরত্ব অনুযায়ী দশ, পনেরো বা কুড়ি টাকা অবধি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা বাসিন্দাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ নিত না, নির্ধারিত অর্থ নিত এই কাজের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা। পরে তারা পুরসভাকে সংগৃহীত অর্থের একটা অংশ দিত। পুর নির্বাচনের আগে তৃণমূলের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এই ধরনের প্রয়োজনীয় পরিষেবা বাসিন্দাদের বিনামূল্যে দেওয়া হবে। |
পুর-চেয়ারম্যান তৃণমূলের ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “পুরসভা নির্বাচনের আগে আমি এবং আমার দলের অন্য নেতারা এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, বোর্ড পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা বামপন্থীদের চালু করা ‘ময়লা কর’ তুলে দেব। আজ সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছি এটাই বড় বিষয়। খুব দ্রুত এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পুরসভার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে লিফলেট পৌঁছে দেওয়া হবে।”
তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী দল বামফ্রন্টও। তাদের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উদ্যোগটি ভাল হলেও বিষয়টি নিয়ে পুরসভার প্রচারে ঘাটতি রয়েছে। সামগ্রিক ব্যবস্থায় কিছু দুর্বলতাও রয়ে গিয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের কমল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বর্তমান বোর্ড যদি ধারাবাহিক ভাবে জঞ্জাল সাফাইয়ের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারে তা হলে খুবই ভাল ব্যাপার। কিন্তু আমি যতটুকু জানি, ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া আর্থিক সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হতে পারে।” |
পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমান বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকার যে অংশ জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য বরাদ্দ তা খরচ করা হবে। এই কাজে যুক্ত কর্মীরা দিনে ১০০ টাকা এবং সুপারভাইজাররা পাবেন ১৩০ টাকা। সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই এবং সংগ্রহ করা হবে। রবিবার এ কাজ বন্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্তের আগে পর্যন্ত রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকার জঞ্জাল সাফাই হত এলাকার যুবকদের নিয়ে গঠিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে। ক্ষমতাসীন পুরবোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জঞ্জাল সাফাই এবং সংগ্রহের বিষয়টি পুরসভা সরাসরি পরিচালনা করবে। তবে এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পুরসভাকে সরবরাহ করবে কোনও সংস্থা। আগে যে সমস্ত সংস্থা জঞ্জাল সাফাই এবং সংগ্রহের কাজে যুক্ত থাকত তাদের লাইসেন্স ফি দিতে হত পুরসভাকে। ফলে আর্থিক ভাবে এই কাজ থেকে পুরসভার লাভ না হলেও লোকসান হত না।
বিনামূল্যে জঞ্জাল সাফাইয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় রাজপুর-সোনারপুরের অধিকাংশ বাসিন্দাই খুশি। তবে পুরসভার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের একাংশের মনে সংশয় রয়েছে। তাঁদের অভিমত, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে পুর এলাকার নিয়মিত জঞ্জাল সাফাইয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হতে পারে।
সব রকমের অনিশ্চয়তার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য ও জঞ্জাল) তৃণমূলের পল্লবকুমার দাস বলেন, “আগে আমাদের পুর এলাকায় যাঁরা পয়সা দিতে পারতেন শুধু তাঁদের বাড়ির আবর্জনা নিয়মিত সংগ্রহ করা হত। কিন্তু নতুন প্রক্রিয়ায় আর সেই ব্যবধান রইল না। তবে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করতে গেলে প্রথম দিকে কিছু অসুবিধা হয়। আমাদের লক্ষ্য হল, সেই সব অসুবিধা কাটিয়ে উঠে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে
যাওয়া।” |