পূর্ব কলকাতা
স্মৃতিকাতর নগরী
ছিন্ন বীণা
যে দিকেই তাকানো যাক, চার দিকে ধূ ধূ বালির প্রান্তর, দূরে ভেড়ি, মাঝেমধ্যে মৎস্যজীবীদের বাসস্থান। তারই মাঝে বিকেল গড়াতেই টিমটিম করছে একাকী পাকা বাড়িতে হ্যারিকেনের আলো।
১৯৭০ এর ৯ মার্চ। বাড়ির নাম ‘মূলঘর’। এখানেই স্বামী জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে এসে উঠেছিলেন গৃহকর্ত্রী বীনাপাণি চক্রবর্তী। এলাকার নাম বিধাননগর। পরিসরে, জনসংখ্যায় ক্রমশ পরিপূর্ণ হয় বিধাননগর। সে সময়ের ইতিহাস বহন করে বিধাননগরবাসীদের বহু বার আলোকিত করেছিলেন বীনাপাণি। কিন্তু এখন তিনি নিজেই স্মৃতি। সম্প্রতি ৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় বীনাপাণিদেবীর। তিনি চক্ষুদান করে গিয়েছেন।
সেই সময়
বিধাননগরে এবি ব্লকের ১২৯ নম্বর প্লটে গড়ে উঠেছিল তাঁর বাড়ি। একই দিনে সিই ব্লকেও একটি বাড়িতে গৃহপ্রবেশ হয়, কিন্তু সেই বাড়ির লোকজন পরবর্তীকালে আর সেই বাড়িতে থাকেননি বলে নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এবি ব্লকের ওই বাড়িটিকেই বিধাননগরের প্রথম বাড়ি বলে নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই বিধাননগরবাসীও এই উপনগরীর প্রথম নাগরিক হিসেবে বীনাপাণিদেবীকেই জানেন। যদিও তাঁর স্বামী প্রয়াত জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ক্ষেত্রেও সে কথা প্রযোজ্য। ১৯৯৪-তে মারা যান জিতেন্দ্রনাথ। তিনি সেচ দফতরের কর্মী ছিলেন।
চক্রবর্তী দম্পতির ছোট ছেলে অশোকবাবু জানালেন, ১৯৬৯ থেকে বাড়ির কাজ শুরু হয়। ‘মূলঘর’ থেকে এক দিকে তৎকালীন উল্টোডাঙা হল্ট স্টেশন, অন্য দিকে নির্মীয়মান বিদ্যাসাগর, লাবণি আবাসন। এখন যেখানে খন্নামুখী অরবিন্দ সেতু সেখানে সে সময় কাঠের সেতু ছিল। ফলে গৌরীবাড়ি পর্যন্ত বাস চলত। এবি ব্লক থেকে ওই পর্যন্ত হেঁটে যেতে হত। তখনও ভিআইপি রোড সম্পূর্ণ হয়নি। কেষ্টপুর খালে ফেরি সার্ভিস চালু ছিল। দৈনন্দিন পরিষেবা বলে কিছু ছিল না। কোনও ডাকঘর ছিল না। তবে চিঠি আসা বন্ধ হয়নি। বিধাননগরের এএ ব্লকে সে সময় একটি অস্থায়ী সরকারি বাড়িতে চিঠি আসত। সেখান থেকেই চিঠি আনতে হত। তখনও বিধাননগরে জল, বিদ্যুৎ, নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। ফলে বাড়িতে নলকূপ, পিট বসিয়ে জল ও নিকাশির ব্যবস্থা করেছিলেন চক্রবর্তী পরিবার। হ্যারিকেনের আলোই ছিল সম্বল।
স্বামীর সঙ্গে বীনাপাণিদেবী
স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সে সময়ের কথা জানার অন্যতম অবলম্বন ছিলেন বীনাপাণিদেবী। তাঁর কাছ থেকেই আমরা এই উপনগরীর শুরুর দিনগুলির কথা জানতে পেরেছি। কখনও বিধাননগরের ইতিহাস তৈরি হলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবেই সেগুলি বিবেচিত হবে।”
বীনাপাণি আজ নেই। কিন্তু, তাঁর ছেলে অশোক চক্রবর্তী বলেন, “আমার মায়ের মতো আরও অনেকে যাঁরা বিধাননগরের পুরনো বাসিন্দা, যাঁদের কাছে সে সময়ের অনেক অজানা কথা জানা যায়, তাঁদের কাছ থেকে পুরনো তথ্য যোগাড় করে এই উপনগরীর একটি ইতিহাস তৈরি হোক।”
ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে
Previous Story

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.