কথা ছিল দু’বছরেই তৈরি হয়ে যাবে সেতু। কিন্তু হল না তিন বছরেও। মূলত রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার উদ্যোগেই কেষ্টপুর খালের উপর গাড়ি চলাচলের জন্য সেতু তৈরি শুরু হয়েছিল ২০০৮-এ। মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে এখন শুরু হয়েছে সেতুর কাজ। সেতু সময়ে শেষ না হওয়ার পিছনে অর্থের অভাব, প্রশাসনিক অনুমতি, প্রক্রিয়া, নির্বাচনী বিধি-সহ নানা কারণ দেখিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে সব বাধা সরিয়ে এখন যখন সেতুর কাজ শুরু হয়েছে, তখন নতুন বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণের অনুমতি-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে নগরোন্নয়ন দফতরকে চিঠি দিয়েছেন। ফলে নতুন করে তৈরি হয়েছে সংশয়।
প্রশ্ন উঠেছে, দায়িত্বে আসার পরে এক বছর হতে চলল, এত দিন কেন বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ এই সেতু নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি? বিরোধী বামেদের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ। অভিযোগ অস্বীকার করে বিধাননগর পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান পারিষদ অনুপম দত্ত বলেন, “এর মধ্যে কোনও |
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। আমরা কোনও নথি পাইনি। সেতু নিয়ে বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন। তার জবাব আমাদের দিতে হয়। ফলে সেতু নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছি।” এত দিন কেন জানতে চাননি? অনুপমবাবু বলেন, “কিছুটা দেরি হয়েছে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন খতিয়ে দেখতে হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের জন্যও কিছুটা দেরি হয়েছে।” স্থানীয় কাউন্সিলর তথা বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “সেতুর কাজ আগের বোর্ডের সময় থেকে চলছে। কিন্তু এই সংক্রান্ত নথি নেই আমাদের কাছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বিধাননগরের ২ নম্বর সেক্টরে এজে-একে ব্লক ও শরৎ আবাসনের সংযোগস্থলে কেষ্টপুর খালের উপর গত তিন বছর ধরে গাড়ি চলাচলের একটি সেতু তৈরি হচ্ছে। কেষ্টপুর থেকে বিধাননগরে যাতায়াত করতে গেলে এখন উল্টোডাঙা-হাডকো মোড় ঘুরে বা রাজারহাট-এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দুই ও তিন নম্বর সেক্টরের মধ্য দিয়ে করতে হয়। বাসিন্দাদের চাহিদা মেনেই রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হয়। বিধাননগর পুরসভার তৎকালীন বোর্ড সম্মতও হয়। দুই |
| পুরসভা, রাজ্য সরকারের মধ্যে আলোচনার পরে সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার। কিন্তু অর্থের অভাবে আটকে যায় ওই সেতু তৈরির কাজ। উপরন্তু পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ফলে সেতু তৈরির কাজ পিছিয়ে যায়। নির্বাচন মিটলে ফের সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হয় রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা বলে পুরসভাসূত্রের খবর। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অর্থের অভাবেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিধাননগর পুরসভার তৎকালীন বোর্ডের কাছে আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। নতুন পুরবোর্ডের সঙ্গে এখনও আলোচনা হয়নি। সমস্যা হলে নিশ্চয় আলোচনা করব।” |
কিন্তু ইতিমধ্যে বিধাননগরের বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, সেতু কবে শেষ হবে জানা নেই। খালপাড়ের রাস্তায় অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু ওই রাস্তায় এই সেতু যুক্ত হলে তা বিপজ্জনক হবে যদি না পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকে। উপরন্তু খালপাড় সংলগ্ন এই ব্লকগুলিতে চুরি-ছিনতাইয়ের উপদ্রব আছে। এই বিষয়গুলি আগে নিশ্চিত করুক প্রশাসন। রাজারহাট-গোপালপুর পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সেতু তৈরির সময় বিষয়গুলি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল।
প্রাক্তন বাম পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) নন্দগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, “নথি না পাওয়ার কারণ দেখছি না। পুরনো বোর্ডের সব উদ্যোগকেই নস্যাৎ করতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ। সে সময় দুই পুরসভা ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই এই সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিল। যদি ট্রাফিক সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন থাকে তবে তা আলোচনা করেও মেটানো যায়।”
|
