|
|
|
|
শেষ ওয়ান ডে হারলেও টেস্টে ধোনিরা অন্য জিনিস হবে |
অশোক মলহোত্র |
পরপর দু’টো ওয়ান ডে-তে ভারতকে হারতে দেখে যদি কেউ টেস্ট সিরিজের কথা ভেবে আঁতকে ওঠেন, তা হলে বলব নিশ্চিন্ত থাকুন। এত ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। নিয়মরক্ষার দু’টো ওয়ান ডে ম্যাচ হারের প্রভাব টেস্ট সিরিজে পড়বে না।
অনেকে হয়তো বলবেন, তিন দিন বাদেই তো সাবাইনা পার্কেই নামছে ভারত। যেখানে শেষ ওয়ান ডে ম্যাচটা রায়নারা আড়াইশো তুলেও সাত উইকেটে হারল বৃহস্পতিবার প্রায় ভোররাতে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, টেস্ট সিরিজে ভারতের দলটা অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে। সোমবার থেকে ভারতের হয়ে শিখর ধওয়ান, পার্থিব পটেলরা ওপেন করবে না। মুরলী বিজয় করবে। সবচেয়ে বড় কথা দ্রাবিড় আর লক্ষ্মণ ব্যাটিং লাইন আপে ঢুকে পড়ছে। যারা গোটা বছর শুধু টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তৈরি হয়। তার পর তো ধোনির ক্যাপ্টেন্সি থাকছেই। ব্যাটসম্যান ধোনিকেও ধরুন। এরা কেউ ক্রিজে নেমে তাড়াহুড়ো করার বান্দা নয়। আর যাদের আউট করতে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো টিমকে হিমশিম খেতে হয়, তাদের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই বোলাররা কতটা কী করবে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
শেষ ওয়ান ডে-টা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে পাওয়ার প্লে-তে। টেস্ট ক্রিকেটে যে বস্তুটা নেই। শেষ দিকে পোলার্ডরা যে সমস্ত শট খেলল, টেস্টে ওই একই শটে ব্যাটসম্যানের কপালে গালিগালাজ জুটতে পারে! তবে এটাও মানব যে, ওই সাবাইনা পার্কেই টেস্ট জেতার যা একটু-আধটু সম্ভাবনা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। টেস্টের উইকেটেও ভাল রকম পেস-বাউন্স থাকবে বলেই মনে হল, গত রাতে টিভিতে জামাইকার ওয়ান ডে ম্যাচটা দেখতে দেখতে। কেমার রোচ, রামপল, রাসেল কিংবা ফিডেল এডওয়ার্ডসরা খেললে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেস ব্যাটারিকে অন্তত এই পিচে মজবুত দেখাবে। টেস্ট সিরিজের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করছি না। কিন্তু এটা বলব, জামাইকাতে যদি না পারে, ধোনির ভারতকে আর কোথাও বিপদে ফেলতে পারবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তা ছাড়া পারবেই কী করে? যে দেশের প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন আর বোর্ড কর্তাদের বৈঠকে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়, তাদের ক্রিকেটে ভাল কিছু হওয়া বোধহয় আর সম্ভব নয়। আমি এখনও মনে করি, প্রথম ওয়ান ডে ভারত যে টিমটা খেলিয়েছিল, সেই একই টিম বাকি ম্যাচগুলোয় খেললে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘ব্রাউনওয়াশ’ হয়ে যেত। আমরা সিরিজ ৩-০ জিতে নেওয়ার পর শেষ দু’টো ম্যাচে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে জুনিয়রদের খেলিয়েছি। হরভজনকে বসিয়ে রেখেছি। মুনাফকে বিশ্রাম দিয়েছি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ ২-৩ করতে পেরেছে। টেস্টে ও সব হবে না। দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ বা বিজয়, ধোনি একবার ক্রিজে জমে গেলে কে আউট করবে ওদের? ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইন আপ থেকে পাল্টা মারটাই বা কে দেবে আমাদের স্পিনারদের? গেইল সম্পর্কে ওদের দেশের ক্রিকেটমহলের যা সর্বশেষ রিপোর্ট পাচ্ছি তাতে তো মনে হচ্ছে, ওর আর দেশের হয়ে খেলার সম্ভাবনা নেই। বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগেই খেলে বেড়াতে হবে। আবার সাবাইনা পার্কের বাউন্সি উইকেটে রোচরা সফল হলে, মুনাফ-প্রবীণ-ইশান্তও কিন্তু খুব পিছিয়ে থাকবে না। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন বোলিং হরভজন-অমিত মিশ্রদের থেকে কয়েকশো মাইল পিছনে।
একে আগের সেই ভুরি-ভুরি প্রতিভা নেই। যতটুকু যা আছে, ক্যারিবিয়ান বোর্ড কর্তাদের যার যার নিজের রাজ্যের লোক না হলেই বাইরে বসে থাকতে হচ্ছে। অধিনায়ক ডারেন স্যামিকেই দেখুন। ভাল বোলার নয়। ভাল ব্যাটসম্যানও নয়। অথচ ক্যাপ্টেন! কারণ, ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং সিইও-র রাজ্যের লোক। চন্দ্রপল কিংবা গেইল সেটা নয়, তাই ওদের কপালে দুর্ভোগ জুটেছে। আগে দেখতাম, ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপ থেকে এলেও মাঠে নেমে ক্যারিবিয়ানরা টিমের জন্য কী রকম একাত্ম হয়ে যেত। এখন আর সে সব হয় না। বৃহস্পতিবার দেখলাম ম্যাচ জিতিয়ে স্যামুয়েলস ছুটল গ্যালারিতে বসা গেইলের দিকে। দু’জনই জামাইকার। কিন্তু যদি গেইলের জায়গায় চন্দ্রপল থাকলে কি ওই ভাবে ছুটে যেত স্যামুয়েলস? আমার সন্দেহ আছে। |
|
|
|
|
|