|
|
|
|
আরামবাগে মিড-ডে মিল প্রকল্প |
ন’মাস পরে বেতন পেলেও সমস্যা ঘনীভূত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
ন’মাস ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না কর্মীরা। বেতন যদি বা এল, দেখা গেল কর্মীরসংখ্যার তুলনায় বেতন কম। আরামবাগ মহকুমার মিড-ডে মিল (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) প্রকল্পে নিযুক্ত রাঁধুনি এবং সাহায্যকারীদের একাংশের ক্ষেত্রে এই ঘটনায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জেলা থেকে ওই প্রকল্পে অনুমোদিত বেতনে দেখা যাচ্ছে, প্রতি স্কুলে গড়ে দুই থেকে তিন জন কর্মীর বেতন কাটা গিয়েছে। কাজ হারানোর আশঙ্কায় ওই কর্মীরা ক্ষুব্ধ। আবার স্কুল কর্তৃপক্ষও অশান্তির আশঙ্কা করছেন। কাকে ছাঁটাই করবেন, কাকে রাখবেন, নাকি সকলকে রেখে প্রাপ্ত টাকা সবার মধ্যে ভাগ করে দেবেন এই মীমাংসাসূত্র খুঁজতে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট বিডিওদের কাছেও সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।
মিড-ডে মিল প্রকল্পের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও স্কুলে ২৫ জন ছাত্রছাত্রী থাকলে সেখানে ১ জন কর্মী থাকবেন। ১০০ জন থাকলে ২ জন এবং ২০০ জন থাকলে ৩ জন কর্মী থাকবেন। এর পরে প্রতি ১০০ জন পিছু ১ জন কর্মী রাখা যাবে। কর্মীদের মাসিক বেতন ১ হাজার টাকা।
আরামবাগের মইগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উদয়শঙ্কর চৌধুরী, ধামসা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য, চন্দ্রবান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পীযূষকান্তি হাজরাদের বক্তব্য, “হাইস্কুলে ২০১০ সালের এপ্রিল-মে মাস থেকে দফায় দফায় মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু হয়েছে। ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত রাঁধুনি এবং সাহায্যকারী হিসেবে প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী যত জন নিযুক্ত হয়েছেন, প্রত্যেকেই বেতন পেয়েছেন। ওই বছরের জুলাই থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের বকেয়া বেতন যদিও বা পাঠানো হল, স্কুল-পিছু ২-৩ জন কর্মীর বেতন কম দেওয়া হল। কেন কম দেওয়া হল, সেই ব্যাখ্যাও আমাদের দেওয়া হয়নি।” প্রধান শিক্ষকদের দাবি, নির্দেশিকা মেনেই রাঁধুনি এবং সাহায্যকারী নিয়োগ করা হয়েছিল। জেলা থেকে তা অনুমোদন করে এক দফা বেতনও দেওয়া হয়। এখন আচমকাই কম বেতন পাঠানোয় জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আরামবাগ ব্লকে মোট ৩৯টি হাইস্কুলের সব ক’টিতেই প্রকল্পটি চালু রয়েছে। এখানে মোট ২৮০ জন রাঁধুনি এবং সাহায্যকারী নিযুক্ত ছিলেন। তাঁরা সকলেই গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত বেতন পেলেও এ বার ২২১ জনের জন্য বেতন অনুমোদিত হয়েছে। গোঘাট ১ ব্লকে ৩১টি হাইস্কুলের মধ্যে সব ক’টিতেই মিড-ডে মিল চালু রয়েছে। এখানেও ১৬০ জনের পরিবর্তে ১১৭ জনের টাকা পাঠানো হয়েছে। গোঘাট ২ ব্লকে ২৮টি স্কুলের মধ্যে ২৭টিতে প্রকল্পটি চালু। এখানে ১৫৫ জনের পরিবর্তে ১১৬ জন কর্মীর টাকা এসেছে। একই অবস্থা খানাকুল ১ এবং ২ ব্লকেও।
খানাকুল ২ ব্লকের যুগ্ম বিডিও স্নেহাশিস দত্ত বলেন, “জেলা থেকেই আমাদের ২৫টি স্কুলের ছাত্রছাত্রী ১৪ হাজার ৬৫৪ জন জানিয়ে ১৮৩ জন রান্নার লোক এবং সাহায্যকারী নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, মোট ছাত্রছাত্রী ১০ হাজার। কর্মী প্রয়োজন ১০১ জন। এ ভাবে কেন কর্মিসংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হল, তা বোধগম্য হচ্ছে না।” গোঘাট ১ এবং ২-এর বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল ও অনির্বাণ সোম এবং আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই বলেন, “কর্মীদের অসন্তোষ এবং স্কুলগুলির অসুবিধার কথা জেলায় জানানো হয়েছে।”
জেলায় মিড-ডে মিল প্রকল্পের আধিকারিক সরিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাবে কর্মী নিয়োগ হয়নি। স্থানীয় কিছু বাধ্যবাধকতায় খেয়াল খুশি মতো নিয়োগ হয়েছে। বিডিওদের প্রকৃত তথ্য জানাতে বলেছি। কোনও গরমিল থাকলে তা সংশোধন করা হবে।”
এ দিকে, দিন কয়েক আগে বেতন এলেও তা বিলি করা হয়নি। ফলে, সব কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। কবে সমস্যার সুরাহা হবে, তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি কোনও পক্ষই।
বর্ণালী রায়, সর্বাণী ঘোড়ুই, সনকা মালিক, লতিকা মালিকদের বক্তব্য, “গত বার বেতন পাই। এ বার ন’মাস বাদে টাকা এলেও বোঝা যাচ্ছে না কার চাকরি আছে, কার নেই। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে।” |
|
|
|
|
|