ঝড়বৃষ্টিতে জনজীবন, বিপর্যস্ত দু’জেলাতেই |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
একটানা বৃষ্টি এবং ঝোড়ো আবহাওয়ায় হুগলি ও হাওড়ার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শুক্রবার।
গাছ পড়ে, বাড়ি ভেঙেছে। প্রাণহানি না হলেও মানুষের ভোগান্তি এড়ানো যায়নি। হুগলির আরামবাগ-সহ চারটি মহকুমায় সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে খাদ্যশস্য এবং নৌকা মজুত করে রাখা হয়েছে। পাঠানো হয়েছে ত্রিপল। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছে প্রশাসন।
গত দু’দিন ধরে একটানা বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া বইছে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। গ্রামাঞ্চলে হাওয়ার তীব্রতা অনেকটাই বেশি। হুগলির চারটি মহকুমা থেকেই বৃষ্টি এবং হাওয়ায় কাঁচা বাড়ি ধসে যাওয়ার খবর রয়েছে। তবে এ দিন বিকেলে শ্রীরামপুর শহরের মল্লিকপাড়া এলাকায় একটি পুরনো দোতলা বাড়ি ধসে যায়। যদিও হতাহতের খবর নেই। দমকলের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনেন। স্টেশন লাগোয়া রিষড়া থানায় অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জল ঢুকে যায়। শুধু থানা নয়, সেখানকার পুলিশ-ব্যারাকেও জল ঢুকে গিয়েছে। |
|
‘রেইনি ডে’। শুক্রবার উলুবেড়িয়ায় হিলটন ঘোষের তোলা ছবি। |
উত্তরপাড়ার জিটি রোডে একটি বড় গাছ আড়াআড়ি ভেঙে পড়ে।
ফলে, দীর্ঘক্ষণ যানজট হয়। পুলিশ অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মানুষের হয়রানি এড়ানো যায়নি। তবে জেলার হাওড়া-ব্যান্ডেল এবং তারকেশ্বর শাখায় ট্রেন চলাচলে কোনও বিঘ্ন হয়নি। হুগলির জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রদীপ সাহার দাবি, “যে কোনও বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশাসন তৈরি। এ দিন রাত পর্যন্ত জেলার চারটি মহকুমার পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে। কোথাও কোনও দুর্ঘটনার খবর নেই।”
হুগলিতে মূলত আরামবাগ এবং চুঁচুড়া সদর মহকুমার বলাগড় ব্লক বন্যাপ্রবণ। বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে আরামবাগ শহরের বেশ কিছু জায়গা জলমগ্ন হয়েছে। সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেনেপুকুর, নবপল্লি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দিরাপল্লি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সার্কাস ময়দান এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলাবাজার এলাকায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, নিকাশি-সমস্যার জেরেই এ সব জায়গায় এক হাঁটু জল জমে যায়। জল সরতেও অনেক সময় লাগে। এক বার জল জমলে, তা সরতে সপ্তাহখানেকের ‘ধাক্কা’ বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। |
|
শ্রীরামপুরে ভেঙে পড়া বাড়ি। নিজস্ব চিত্র। |
বাম পরিচালিত পুরসভার পক্ষ থেকে নিকাশি নিয়ে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরির প্রতিশ্রুতি দীর্ঘ দিনের। পুরপ্রধান সিপিএমের গোপাল কচ বলেন, “শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে জমা জল দ্বারকেশ্বর নদী এবং কানা দ্বারকেশ্বর খালে ফেলা হবে। আপাতত ৬টি নতুন পাম্প কেনা হয়েছে। সেগুলি দিয়ে জমা জল সরানো হবে।”
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা তৈরি। যদি জল জমার কারণে কোনও নিচু এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে আনতে হয় তার জন্য রেসকিউ সেন্টার বা ত্রাণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিতে পঞ্চায়েতের নিজস্ব নৌকা কেনা রয়েছে। কিন্তু এর পরেও যদি বাড়তি নৌকা লাগে, বিশেষ পরিস্থিতিতে তা-ও তৈরি রাখা হয়েছে।” বন্যাপ্রবণ এলাকায় সরকারি গুদামগুলিতে চাল ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের মজুত পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই সরকারি আধিকারিক। |
|
রিষড়া পুলিশ ব্যারাকের দশা। শুক্রবার প্রকাশ পালের তোলা ছবি। |
অন্য দিকে, প্রবল বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ায় এ দিন সকাল থেকে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে হাওড়া জেলাতেও। উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা প্রভৃতি এলাকার নিচু জায়গাগুলিতে জল জমে যায়। ডুবে যায় রাস্তাঘাট। এ দিন রাস্তাঘাটে লোক ছিল অল্প। বাস এবং ট্রেনে ভিড় ছিল না বললেই চলে। বেলা বেড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঝড়-বৃষ্টির দাপট। সুনসান হয়ে গিয়েছে রাস্তাঘাট। এ দিকে, জমিতে জল জমে গেলে সদ্য রোপন করা আউশ ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে চাষিদের আশঙ্কা। জেলর উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় বাদাম চাষ হয়। বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বাদাম-চাষিরাও। |
|