দুর্যোগের আভাস পেয়ে আগেভাগেই ছুটি ঘোষণা করেছিল অনেক স্কুল। অন্যেরা তা করেনি। দমকা বৃষ্টির শুক্রবারটা তাই শুরুই হল অসংখ্য স্কুলপড়ুয়ার ভোগান্তি দিয়ে। অবশ্য সাবধানী অভিভাবকদের কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের এ দিন স্কুলে পাঠাননি। কিন্তু কলেজ পড়ুয়াদের সেই উপায় ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলছে। তাই দুর্যোগ মাথায় নিয়েও বেরোতে হয়েছে তাঁদের। ছিল কলেজে কলেজে ভর্তির পরীক্ষা। কাকভিজে হয়ে কাঁপতে কাঁপতে উচ্চ মাধ্যমিক পেরোনো ছাত্রছাত্রীদের ‘ভাগ্যপরীক্ষা’ এক কলেজ থেকে আর এক কলেজে।
এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকম দ্বিতীয় বর্ষের জেনারেল এবং স্নাতকোত্তরের সংস্কৃত পরীক্ষা ছিল। যাদবপুরেও ছিল স্নাতকোত্তরে ভর্তি এবং ভাষাতত্ত্বের পরীক্ষা। একে বৃষ্টির কারণে সকাল থেকেই যানবাহন কম। যে-ক’টিও বা বেরিয়েছিল, সেগুলোও মাঝপথে জমা জলে আটকে বিপত্তি বাড়ে। রাস্তায় গাছ পড়ে থাকায় বাড়তেই থাকে ভোগান্তি। বেলা পৌনে ১২টা থেকে মেট্রোয় যান্ত্রিক বিভ্রাট যন্ত্রণা বাড়ায়। বেলা ৩টে পর্যন্ত মেট্রো বন্ধ ছিল। এর জেরে সময়মতো অনেক ছাত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতেই পারেননি।
একাধিক কলেজে এ দিন ভর্তির পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল অনেক ছাত্রছাত্রীর। কিন্তু সকাল থেকে ভেজা পোশাকে দু’-একটি কলেজে পরীক্ষা দেওয়ার পরে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিতে হয় তাঁদের। বিকেলে অন্য কলেজের পরীক্ষায় বসাই হল না।
বৃষ্টি মাথায় দমদম থেকে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন গৌতম সাহা। সকাল ৯টায় লোরেটো কলেজে মেয়ের ইংরেজির প্রবেশিকা পরীক্ষা ছিল। যানজট পেরিয়ে, অঝোরবৃষ্টিতে ভিজে সময়মতো পৌঁছেছিলেন কলেজে। মেয়ে বসলেন পরীক্ষায়। কিন্তু অন্য অভিভাবকদের মতো গৌতমবাবুরও ঠাঁই হল কলেজের বাইরে ফুটপাথে। তিনি বলেন, “তখন তুমুল বৃষ্টি। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেও কলেজের ভিতরে দাঁড়ানোর অনুমতি মিলল না। অগত্যা পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ভিজতে হল।”
বেলা ১১টায় লোরেটো থেকে বেরিয়েই মেয়েদের নিয়ে অভিভাবকদের দৌড় বেথুন কলেজের দিকে। সেখানে বেলা ১২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল ইংরেজির প্রবেশিকা পরীক্ষা। বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ তখন কলেজের সামনে হাঁটুজল। মধ্যমগ্রাম থেকে মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসা রাজা বসু বললেন, “মেয়েদের তো ভিজে পোশাকেই পরীক্ষায় বসতে হয়েছে। কলেজে এত জায়গা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকদের ভিতরে ঢুকতেই দেওয়া হল না। প্রায় তিন ঘণ্টা কলেজের সামনে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে ভিজতে হল। কলেজ-কর্তৃপক্ষ কি একটু মানবিক হতে পারতেন না?” সংশ্লিষ্ট সব কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করার পরে তাঁদের অভিভাবকদের বসতে দেওয়ার জায়গা ছিল না।
বেলা বাড়তেই ঠনঠনিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, কলেজ স্ট্রিটে কোমরসমান জল। আমহার্স্ট স্ট্রিটে নৌকা নামাতে হয়েছে। হেয়ার স্কুলের সামনে একটি গাছ ট্রামলাইনের তার ছিঁড়ে দিয়ে আড়াআড়ি গিয়ে পড়ে হিন্দু স্কুলের ফুটপাথে। রাস্তায় জমে থাকা জলে এক সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয় বিধান সরণি ও কলেজ স্ট্রিটে। তার ফলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ৩টেয় শুরু হওয়া উদ্ভিদবিদ্যা ও ইতিহাসের পরীক্ষায় বসতে পারেননি অনেকে। এমন দুর্যোগের মধ্যে এ দিনের পরীক্ষা বাতিল করার আবেদন জানান ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা। কিন্তু কোনও কলেজের কর্তৃপক্ষই তাতে আমল দেননি। |