জলে শোভন, ঘুরলেন টালা থেকে বেহালা
“এ তো নদী!” আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার সামনে নৌকো। তাতে ছাতা মাথায় জনাকয়েক স্কুলপড়ুয়াকে দেখে নিজের মনেই বলে ফেললেন কলকাতার মেয়র।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। শুক্রবার ভোর থেকে তুমুল বৃষ্টিতে জল থইথই কলকাতা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ দিন সকাল থেকেই পথে নেমে পড়েন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। গাড়ি নিয়ে ঘুরে দেখেন শহরের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত, পাম্পিং স্টেশনগুলোর হাল। উত্তর থেকে দক্ষিণ যেখানেই গিয়েছেন মেয়র, সেখানেই তাঁকে ঘিরে ধরেছে জনতা। জানতে চেয়েছে, জল কখন নামবে?
সকাল দশটা থেকেই মেয়র ছিলেন পুরসভার কন্ট্রোলে। ছিলেন পুর-কমিশনার, মেয়র পারিষদ (নিকাশি)-সহ অন্য আধিকারিকেরাও। মুহুর্মুহু ফোনে বিভিন্ন জায়গায় জল জমার খবর আসতে থাকে। আসে নানা জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ার খবরও। কিছুক্ষণের মধ্যেই কন্ট্রোলে ফোন করে জানানো হয়, টালা পাম্পিং স্টেশনে জল ঢুকে গিয়েছে। তড়িঘড়ি জল দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শোভনবাবু।
পুরভবন থেকে বেরিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে কলেজ স্ট্রিট, সূর্য সেন স্ট্রিট হয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট। নৌকো চলতে দেখে গাড়ি থেকে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটুজলেই নামলেন মেয়র। নৌকো থেকে স্কুলপড়ুয়ারাও নেমে পড়ে তাঁকে দেখে। বলে, “প্রচণ্ড জল জমেছে।” পাড়ার লোকের অভিযোগ, জল ক্রমশ বাড়ছে। গাছ ভেঙে পড়ায় হাঁটাচলাই দায়। কন্ট্রোলে ফোন করে সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠাতে বলেন মেয়র।
‘নদী’র নাম আনন্দ পালিত রোড। পার হচ্ছেন মেয়র। শুক্রবার।-দেশকল্যাণ চৌধুরী

সুকিয়া স্ট্রিটের মুখে আরও জল। শোভনবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে এত জল কেন?” গাড়িতে বসা এক পুর-আধিকারিক বুঝিয়ে দিলেন, “পামারবাজারে পাম্প না চলায় একটা সমস্যা আছেই। তার সঙ্গে ঠনঠনিয়া পাম্পিং স্টেশনেও কিছু সমস্যা হয়েছে।” জনতার তখন একটাই প্রশ্ন, কতক্ষণে জল নামবে? “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমরা চেষ্টা করছি,” আশ্বাস দিয়ে রওনা হলেন শোভনবাবু। গাড়ি পৌঁছল এপিসি রোডের মোড়ে। মেয়রকে দেখে এগিয়ে এলেন বেশ কিছু লোক। জানালেন, ঠনঠনিয়া পাম্পিং স্টেশনে জল ঢুকে যাওয়ায় পাম্প অকেজো। ক্ষুব্ধ মেয়র বললেন “এটা তো কেউ আমাকে আগে বলেনি! প্রকৃত সমস্যাটা কী আমাকে বলুন।” পুর-আধিকারিক বলেন, পাম্প বন্ধ কি না, তাঁর জানা ছিল না।
এর মধ্যেই বারবার ফোন টালা পাম্পিং স্টেশন থেকে। “স্যর, এখানে জল কমছে। অতটা ভয়ের কিছু নেই।” মেয়র আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, পাম্প চালিয়ে জল বার করে দিতে। পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে এর পরে সোজা চলে যান টালা পাম্পিং স্টেশনে। পৌঁছন দুপুর দুটোয়।
টালা পাম্পিং স্টেশনে যাওয়ার পথে একের পর এক ফোনে বালিগঞ্জ, বেহালা, জিঞ্জিরাবাজার, যোধপুর পার্ক, তপসিয়ার মানুষ জানাচ্ছিলেন জল জমার সমস্যার কথা। ফোন করছিলেন কাউন্সিলরেরাও। মেয়র কাউন্সিলর ও পুর-আধিকারিকদের বলেন, যেখানে জল নামছে না, সেখানে পোর্টেবল পাম্প বসিয়ে জল বার করতে হবে। ইতিমধ্যে পামারবাজার থেকেও ফোন আসে। বলা হয়, ১৩টির মধ্যে মাত্র ৭টি পাম্প চলছে। খবর আসে, বালিগঞ্জে কোনও পাম্পই চলছে না। কেইআইপি পাম্প বিকল হয়েছে পাহাড়পুর এলাকায়। দত্তবাগানেও পাম্প কাজ করছে না।
টালা থেকে মেয়র সরাসরি চলে যান পামারবাজারে। আর একটি পাম্প চালানোর ব্যবস্থা করেন। অন্যান্য জায়গাতেও পাম্প কী ভাবে চালানো যায়, তা নিয়েও ফোনে কথা বলেন আধিকারিকদের সঙ্গে। এর পরে সিআইটি রোড হয়ে শোভনবাবু যান আনন্দ পালিত রোডে। বিকেল সাড়ে তিনটেয় সেখানেও তখন হাঁটুজল। মেয়র গিয়েছেন শুনে মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেবও যান। ক্ষুব্ধ মেয়র জিজ্ঞাসা করলেন, “জল নামছে না কেন? পামারবাজারে আটটা পাম্প তো চলছে।” রাজীববাবু বলেন, “এতটা জল টানতে পারছে না।”
পার্ক সার্কাস হয়ে সোজা বেহালা। বিকেল চারটে নাগাদ বরো অফিসে গিয়ে গোটা বেহালার জলের পরিস্থিতি জানতে চান মেয়র। কোথায় কোথায় আরও পাম্প দেওয়া দরকার, কেন জল নামছে না, সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে ফিরতি পথ ধরলেন তিনি।
সন্ধ্যায় ফের জাঁকিয়ে বৃষ্টি নামার পরে মেয়র আরও একটি পাম্প আনিয়ে নিজে পামারবাজার পাম্পিং স্টেশনে যান। বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনও ঘুরে দেখেন।

Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.