|
|
|
|
বাস উধাও, ভাসমান শহরে ডোবাল মেট্রোও |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
শুক্রবার যখন প্রবল বর্ষণে ভাসছে শহরের রাজপথ থেকে অলিগলি, বাস-অটো-ট্যাক্সি সবই অনিশ্চিত। তখন মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল মেট্রো রেল। কিন্তু সেই মেট্রোও এ দিন চরম নাকাল করল শহরবাসীকে।
বেলা পৌনে বারোটা থেকে প্রায় বিকেল তিনটে পর্যন্ত চূড়ান্ত অনিয়মিত ছিল মেট্রো রেলের পরিষেবা।
দমদম স্টেশন পেরিয়ে যে ‘ওয়াই’ সাইডিং মারফত আপ লাইনে আসা ট্রেন ডাউন লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই সাইডিং-এর থার্ড রেলে দেখা দেয় সমস্যা। তার জেরে সেখানেই আটকে পড়ে একটি রেক। ফলে বেলা পৌনে বারোটা থেকে গিরিশ পার্ক এবং দমদমের মধ্যে বন্ধ থাকে মেট্রো চলাচল। তখন ট্রেন চালানো হয় কবি সুভাষ থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত। গিরিশ পার্ক স্টেশনের দক্ষিণ দিকে লাইন বদলের ব্যবস্থা আছে।
ওই সময়ে দক্ষিণ থেকে গিরিশ পার্ক স্টেশনে মেট্রো গিয়ে আপ প্ল্যাটফর্মে যাত্রী নামিয়ে সেখান থেকেই ফের দক্ষিণে যাওয়ার যাত্রী তুলে রওনা হচ্ছিল। স্টেশন ছাড়ার পরে আপ থেকে ডাউন লাইনে যাচ্ছিল মেট্রো। কিন্তু লাইন বদলের এই জটিল পদ্ধতির কারণে ট্রেনের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
মেট্রোর জনসংযোগ অধিকর্তা প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “একটি এসি রেক দমদমের আপ প্ল্যাটফর্ম থেকে সাইডিং মারফত ডাউন লাইনে আনার সময়ে আটকে পড়ে। অর্ধেক অংশ প্ল্যাটফর্মে এবং বাকিটা সাইডিং-এর লাইনে থেকে যায়।” তার জেরেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় দমদম স্টেশনে। মেট্রো-কর্তারা জানান, ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে আটকালে বাকি ট্রেনগুলি দমদম পর্যন্ত আনা যেত। |
|
পার করো আমারে: বানভাসি রাস্তায় বিকল বাস। জল-পথ পেরোতে
নৌকো ডাকছেন আর্ত যাত্রীরা। শুক্রবার।-সুমন বল্লভ |
প্রত্যুষবাবু আরও জানান, বেশি বৃষ্টির জন্যই থার্ড রেলে বৈদ্যুতিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। শেষে দুপুর আড়াইটের পরে কারশেড থেকে আর একটি খালি রেক এনে অচল রেকটিকে টেনে নোয়াপাড়া কারশেডে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কারশেডের কাছে লাইনে একটি বড় গাছ উপড়ে পড়ে থাকায় বিপত্তি হয় সেখানেও। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় ২টো ৫১ মিনিট থেকে। অনেক মেট্রো-কর্তা অবশ্য মনে করছেন, সমস্যাটি এসি রেকেরও হতে পারে। রেকটির কম্প্রেসরের ব্যাটারি পুরোপুরি ‘ডিসচার্জ’ হয়ে যাওয়াতেই সম্ভবত এমন দুর্গতি।
এ দিকে, শুক্রবার সকাল থেকেই শহরের পথে যানবাহনের সংখ্যা খুব কম ছিল। বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় দুপুরের পরে প্রায় দেখাই মেলেনি ট্রাম-বাসের। সিটিসি-র চিফ অপারেশনস্ ম্যানেজার স্বরূপ পাল জানান, ১১০টির জায়গায় এ দিন সকালে ৮৬টি ট্রাম বেরিয়েছিল। কিন্তু সওয়া ন’টার পরেই পরিষেবা পুরো বন্ধ করে দিতে হয়। ওই সংস্থার বাসও কম চালানো হয়। সকালে ২১৯টি বাস বেরোলেও দুপুরের পরে অনেকগুলি তুলে নিতে হয়।
সিএসটিসি বাসেরও দেখা প্রায় মেলেনি এ দিন। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের এক অফিসার অবশ্য জানান, রোজের মতোই ৪৪টি বাস নামানো হয়। তবে দুপুরে ১১টি ‘ভলভো’ বাস বন্ধ করে দিতে হয়।
কলকাতা, হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে দৈনিক প্রায় সাড়ে আট হাজার বেসরকারি বাস চলে। ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস্’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানিয়ে বলেন, “আজ সকালে অন্যান্য দিনের তুলনায় অর্ধেক বাস বেরিয়েছিল। দুপুরে বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে যায়।” প্রায় একই অবস্থা মিনিবাসের। মালিক-সংগঠনের সম্পাদক অবশেষ দাঁ জানান, বৃহত্তর কলকাতায় আড়াই হাজার মিনিবাসের অর্ধেক দুপুরের মধ্যেই বসে যায়।
বিঘ্নিত হয় ফেরি চলাচলও। কলকাতা-হাওড়ার মধ্যে গঙ্গায় ব্যস্ত সময়ে দৈনিক পাঁচ মিনিট অন্তর এবং অন্য সময়ে দশ মিনিট অন্তর সরকারি ফেরি চলে। পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, এ দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়।
গঙ্গার বিভিন্ন অংশে ১২টি ঘাটে রোজ হুগলি নদী জলপথ সমিতির ৩৫টি ফেরি চলে। সমিতির তরফে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, “সকালে সব ক’টি ফেরিই বেরিয়েছিল। দুপুর বারোটার পরে ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির জন্য পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়।” |
|
|
|
|
|