|
|
|
|
বৃষ্টিতে বেপরোয়া খুদেরা, ছুটির দিন কাটাল শিল্পাঞ্চল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কখনও ঝমঝম। কখনও বা টিপটিপ। থামার নাম নেই। বরং বেলা যত গড়িয়েছে, বেড়েছে তীব্রতা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় খানিকটা স্তব্ধ জনজীবন। ক্ষয়ক্ষতি কিছু হল কি না, তা জানতে সারা দিনই তটস্থ ছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। শুক্রবার সারা দিন শিল্পাঞ্চলের ছবিটা ছিল এমনই।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই অল্পস্বল্প বৃষ্টি শুরু হয়। তবে তা তেমন উদ্বেগের কারণ ছিল না। গভীর রাত থেকে এক টানা বৃষ্টি শুরু হয়। এ দিন দুপুরের দিকে বৃষ্টির তেজ সামান্য কমেছিল। বিকেলের দিকে আকাশ আরও অন্ধকার হয়ে ওঠে। বৃষ্টির তীব্রতাও বেড়ে যায়। সকালের দিকে রাস্তাঘাটে তবু কিছু লোকজনের দেখা মিলেছিল। কিন্তু বিকেলের পর থেকে প্রায় সব এলাকাই সুনসান। রাস্তায় যানবাহনও নামমাত্র। সকালে মিনিবাস বা অটো চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে বিশেষ যাত্রী না পাওয়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। দুর্গাপুর, অন্ডাল, রানিগঞ্জ থেকে আসানসোল, শিল্পাঞ্চলের সর্বত্রই এ দিন ছিল একই ছবি। |
|
ভিজে পায়ে বাড়ির পথে। শুক্রবার আসানসোলের রাধানগর রোডে ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |
দুর্গাপুরের সিটিসেন্টার বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর সংখ্যা ছিল অন্য দিনের তুলনায় যথেষ্ট কম। যাঁরা ছিলেন তাঁদের অধিকাংশই অফিসযাত্রী, স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া। দুর্গাপুর বাজার, বেনাচিতি বাজার বা চণ্ডীদাস বাজারে ভিড় প্রায় ছিলই না। সিটিসেন্টারের শপিং মলগুলি বা মাল্টিপ্লেক্সেও ছিল একই ছবি। দিনে সে ভাবে শহরের কোথাও তেমন জল জমেনি ঠিকই। তবে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বেনাচিতির রামকৃষ্ণপল্লি, বিদ্যাসাগরপল্লি, দুর্গাপুর কেমিক্যালস মার্কেট, রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পাঞ্চল বা রায়ডাঙার মতো নিচু এলাকাগুলিতে জল জমার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। কাঁকসা বা দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে যাঁদের মাটির বাড়ি রয়েছে তাঁদের আশঙ্কা, লাগাতার এমন বর্ষা চললে বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, বিকেল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির তেমন খবর মেলেনি। তবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখ হচ্ছে।
আসানসোলেও এ দিন একটানা বর্ষণে সেনর্যালে, হাটন রোড, এসবি গড়াই রোড, বিএনআর মোড় বা কুলটির কেন্দুয়া বাজার, ডিসেরগড়, চিনাকুড়ি এলাকায় জল দাঁড়ায়। রেলপাড় এলাকায় গাড়ুই নদীতে জল বেড়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত জানান, পরিস্থিতির দিতে নজর রাখা হচ্ছে। আসানসোল ও কুলটি, দুই পুরসভাই বিশেষ ‘টিম’ গড়েছে। পলিথিন প্যাকেট বা ওই জাতীয় কোনও বস্তু আটকে যাতে নিকাশি বেহাল না হয়ে পড়ে সে জন্য লাগাতার নর্দমার মুখ পরিষ্কার করা হচ্ছে। জলবাহিত রোগ যাতে না ছড়ায় সে জন্য মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। আসানসোলের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিচু এলাকা। ওই সব জায়গায় যাতে জল জমে সমস্যা না তৈরি হয় উপরে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
পেটের দায়ে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকায় বিকাশ মশানের তোলা ছবি। |
সামান্য বৃষ্টি হলেই জল জমে যায় অন্ডালের রেল টানেলে। এ পার থেকে ও পারে যেতে বিপাকে পড়েন বাসিন্দারা। এক টানা বর্ষণে জল জমেছে সেই টানেলে। ফলে চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে। রানিগঞ্জে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এলাকাতেও জল জমেছে। দুই এলাকাতেই মিনিবাস ও অটো কম চলছে। শুক্রবার অনেকেই কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফেরেন। এ দিন তাঁদের অনেকেই মিনিবাস ও অটো কম চলায় বিপাকে পড়েন। চড়া ভাড়া দিয়ে বাড়ি পৌঁছতে হয়েছে বলে জানিয়েছে এমন অনেকেই।
এক টানা বৃষ্টিতে সবজি ও তিল চাষে ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছে মহকুমা কৃষি দফতর। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃষ্টি যদি আরও দিন দু’য়েক চলে তাহলে সব্জির গোড়া পচা রোগ হতে পারে। তিল মাঠে কাটা অবস্থায় থাকলে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বৃষ্টি হওয়ায় আমন ধানের বীজতলা তৈরি করতে চাষিদের সুবিধা হবে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান। |
|
|
|
|
|