মমতা দেখুন: মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি চিকিৎসকের
শম্ভুনাথে এখনও অনড় ‘অচলায়তন’
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই মহাকরণে যাওয়ার পথে আচমকা শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিষেবার উন্নতি ঘটানোর ব্যাপারে একাধিক নির্দেশও দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষকে। তার পরেও যে শম্ভুনাথে কী পরিমাণ বেনিয়ম চলছে এবং তার জন্য রোগী ও চিকিৎসকদের একাংশকে প্রতিনিয়ত কী ভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে, তা সবিস্তার জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন খোদ ওই হাসপাতালেরই এক প্রবীণ শল্য-চিকিৎসক।
মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়েছে। মহাকরণ সূত্রের খবর, সমীরকুমার ঠাকুর নামে ওই চিকিৎসক চিঠিতে অভিযোগ জানিয়েছেন, শম্ভুনাথের পরিষেবা এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, গত ৩ জুন হাসপাতালে এক ক্যানসার রোগীর অস্ত্রোপচারের সময়ে ওটি-তে কোনও অ্যানাস্থেটিস্ট উপস্থিত ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সমীরবাবুকেই অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে রোগীর অস্ত্রোপচার করতে হয়, যা এক কথায় অকল্পনীয়। চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, এ ব্যাপারে হাসপাতালের সুপার তরুণকান্তি মান্নার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই তিনি শেষমেশ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন।
চিঠির ব্যাপারে সমীরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বাইরে থেকে হাসপাতালের অনেক কিছু বোঝা যায় না। চিঠিতে সব লিখেছি। আমি চাই, মুখ্যমন্ত্রী এর প্রতিকার করুন। সরকারি কর্মচারী হয়ে অভিযোগ জানানোয় আমাকে হয়তো অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে। কিন্তু এ ভাবে আর কাজ করা যাচ্ছে না বলেই আমি বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছি।”
চিঠিতে লেখা হয়েছে গত ৩ জুন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে বিশ্বনাথ মণ্ডল নামে এক ক্যানসার রোগীর (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৫৪২৭/১১, বেড নম্বর: ৩২, মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ড) অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। তাঁর খাদ্যনালী থেকে খাবার পাকস্থলীতে এসে পৌঁছচ্ছিল না। শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। সমীরবাবুর দাবি, অস্ত্রোপচারের সময়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারত। অস্ত্রোপচার না করলেও মৃত্যু হত। তাই ঝুঁকি জেনেও বাড়ির লোক অস্ত্রোপচারে মত দিয়েছিলেন। মত দিয়েছিলেন সুপারও।
ওটি-তে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার পরে তিন জন অ্যানাস্থেটিস্ট এবং ‘ডিপ্লোমা অফ ন্যাশনাল বোর্ড’ (ডিএনবি)-এর অ্যানাস্থেশিয়ার তিন জন ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা কেউ রোগীকে অ্যানাস্থেশিয়া দিতে রাজি হননি এবং ওটি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
তখন নিরুপায় হয়ে সমীরবাবুই ঘুমের ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের জায়গায় লোকাল অ্যানাস্থেশিয়ার ইঞ্জেকশন দিয়ে অস্ত্রোপচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতে রোগীর যন্ত্রণার অনুভূতি পুরো যায়নি।
সমীরবাবুর অভিযোগ, সেই সময়ে এক জন অ্যানাস্থেটিস্ট ওটি-তে ঢোকেন। কিন্তু অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি দ্রুত বেরিয়ে যান। তখন রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সমীরবাবু নিজেই গ্লাভ্স খুলে ড্রিপের ভিতরে অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার শেষ করেন। এর পরে কিছু দিন বেঁচে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ওই রোগীর মৃত্যু হয়। সমীরবাবু চিঠিতে লিখেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই অস্ত্রোপচার চলাকালীন অ্যানাস্থেটিস্টরা তাঁকে সাহায্য না-করে পাশের ঘরে বসে গল্প করছিলেন!
ওই চিকিৎসকের আরও অভিযোগ, অ্যানাস্থেটিস্টদের একাংশ বেশির ভাগ রোগীকেই অস্ত্রোপচার না-করে ‘রেফার’ করতে চান। রোগীদের নানা রকম ভয় দেখানো হয়। নিজেদের গা বাঁচাতে অস্ত্রোপচারের সময়ে কী ওষুধ বা অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হচ্ছে, সে সবের কোনও রেকর্ড রাখা হয় না। অ্যানাস্থেটিস্টরা নিজেরা অ্যানাস্থেশিয়া না-দিয়ে ছাত্রদের দিয়ে অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ান। মুখ্যমন্ত্রীকে সমীরবাবু লিখেছেন “এই রকম বেনিয়মে কি কোনও হাসপাতাল চলতে পারে? একমাত্র আপনি এর প্রতিকার করতে পারেন।”
যাঁদের বিরুদ্ধে সমীরবাবুর মূল অভিযোগ, শম্ভুনাথের সেই অ্যানাস্থেটিস্টদের বক্তব্য, “৩ তারিখ কী ঘটেছিল, এখন মনে পড়ছে না। খাতাপত্র ঘেঁটে দেখতে হবে। তদন্ত যা করার সুপারই করবেন। আর ছাত্রেরা অ্যানাস্থেশিয়া দিতেই পারেন। এটা প্রশিক্ষণের অঙ্গ। সিনিয়র কোনও অ্যানাস্থেটিস্ট ওই সময়ে পাশে থাকেন।” অভিযোগ পাওয়ার পরেও কেন সুপার এখনও তদন্ত শুরু করেননি? তরুণকান্তিবাবুর উত্তর, “চিঠি পেয়েছি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.