বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন দলীয় সতীর্থরা। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকে কার্যত কারও সঙ্গেই কথাবার্তা বিশেষ বলছেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। নিয়মিত আলিমুদ্দিনে আসছেন। কিন্তু এসেই ঢুকে পড়ছেন সম্পাদকমণ্ডলীর ঘরে। সেখানেই সময় কাটাচ্ছেন। কেউ বিশেষ কথা বলতেও সাহস পাচ্ছেন না। লঘু হাস্য-পরিহাস তো দূরস্থান! হায়দরাবাদ-সফর শেষ মুহূর্তে এড়িয়ে যাওয়ায় সতীর্থদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছিলেন, “আসলে বুদ্ধদা নিজের হারটা এখনও মেনে নিতে পারছেন না! ওঁর নিজের কাছেও খুব অবিশ্বাস্য লাগছে।” দলের নিচু তলার সদস্য, নিয়মিত যাঁদের আলিমুদ্দিনে যাওয়া-আসা রয়েছে, তাঁরা মনে করছেন, প্রয়োজনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখুন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ২০০৪ সালে একলা সাংসদ ছিলেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মমতা! ওই নেতার কথায়, “আমরা তো নিজেরাই নিজেদের বলছি, ঠিক আছে! সারা জীবন কি আমরাই ক্ষমতায় থাকব? এটাই তো রাজনীতি। জিত-হার তো থাকবেই। কিন্তু উনি এতটাই চুপচাপ যে, চিন্তা হচ্ছে। আবহাওয়া বড্ড গুমোট।”
|
সদ্য ঘোষণা হয়েছে, তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। ফোন পেলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। ও-দিকের কণ্ঠে আপ্লুতি “প্রদীপ’দা-আ-আ-আ-আ..। কনগ্র্যাচুলেশন্স! আমি যে কী খুশি হয়েছি, বলার নয়। রবিবার কলকাতায় ফিরে আপনি প্রদেশ দফতরে যাবেন তো? আমি অবশ্য থাকতে পারব না। সবং যেতে হবে। ফিরে এসে কিন্তু আপনার বাড়িতে যাব।” প্রদীপবাবু আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। আর বক্তার নাম, এতক্ষণে বলা নিষ্প্রয়োজন। শুধু বলা থাক, প্রদীপবাবু যাতে তাঁর জায়গায় প্রদেশ সভাপতি হতে না-পারেন, তার জন্য দিল্লি দরবারে হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন তিনি রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
|
অনেক প্রচার করেও রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ ঠেকানো যায়নি। অগত্যা সিপিএম নিজেরাই ‘পরিবর্তিত’। প্রথম দৃষ্টান্ত, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। কংগ্রেস-তৃণমূলের বিরোধী দলনেতাদের সঙ্গে বরাবর সংবাদমাধ্যমের যোগাযোগ মসৃণ থেকেছে। সিপিএমের জমানায় সেই ধারা বজায় থাকবে কি না, প্রভূত সংশয় ছিল। কিন্তু সূর্যবাবু ঠিক করেছেন, বিধানসভার অধিবেশন না-থাকলেও কলকাতায় থাকলে প্রতিদিন বিকাল ৩টে থেকে ৪টে বিরোধী দলনেতার ঘরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বসবেন। ঘরোয়া আলোচনা হবে, কিছু বলার থাকলে বলবেন, কিছু জানার থাকলে শুনবেন। দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্বয়ং বিমান বসু। হায়দরাবাদ যে রাতে গিয়ে পৌঁছেছেন, কলকাতা অর্ডিন্যান্স-কাণ্ড নিয়ে তোলপাড়। হোটেলে কফি খেয়ে বিমানবাবু যখন নীচে নামলেন, কলকাতার বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সব প্রতিনিধি ফিরে গিয়েছেন। বিমানবাবু রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলেন প্রায় ২০ মিনিট। খবরের কাগজের লোকদের মাধ্যমে চ্যানেলকে খবর দিইয়ে সকলকে একসঙ্গে বক্তব্য জানিয়ে তবেই রাতের খাওয়া!
|
একেই কেরল সিপিএমের ভোটের ফল পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে ভাল। হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে বঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বুঝেছেন, কাকে বলে বিধি বাম! রাতে হোটেলে রুটি চেয়েছেন, তারা পরোটা ছাড়া কিছু দেবে না! শেষে ভাতে রফা! রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর যে সদস্যরা কেন্দ্রীয় কমিটিতেও আছেন, তাঁরা প্রায় সকলে দল বেঁধে এক হোটেলে উঠেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরুর দিন সকালে আচমকা হোটেলের জল গেল ফুরিয়ে! এমনিতেই কথাবার্তা বলতে গিয়ে দেরি হয়েছিল। তায় স্নান হয়নি। কোনও ক্রমে হুড়োহুড়ি করে বৈঠকস্থলে ঢুকে গেলেন বিমানবাবু! শেষ পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় বাংলার নেতারা গেলেন মাথায় জল দিতে। পিনারাই বিজয়ন-সহ কেরলের নেতারা কিন্তু এসেছেন দিব্যি স্নান করে, পেতে চুল-টুল আঁচড়ে! বাংলার এক নেতা বললেন, “তিন বারে ভেঙে ভেঙে স্নান না-করলে হায়দরাবাদে তো সমস্যা হবেই! এতগুলো বাঙালি একসঙ্গে থাকলে জল ফুরোবে না?” |