|
|
|
|
আসছে বর্ষা, বেহাল নিকাশি নিয়ে উদ্বেগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
সামনেই বর্ষার মরসুম। অথচ, এখনও বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় চিন্তিত গোটা বনগাঁ মহকুমা এবং সংলগ্ন হাবরা-অশোকনগর এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, এই সব এলাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা। পুর এলাকা হোক বা গ্রামীণসমস্যাটি রয়েছে সর্বত্রই।
২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যার পর এই সব এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। অথচ, এক দশকেও তা গড়ে উঠল না। ফি-বছরই ভারী বৃষ্টিতে ওই সব পুর এবং পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। পুজোর দিনগুলিতে ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয় অনেককে। ক্ষতি হয় ফসলেরও।
বনগাঁ, গোবরডাঙা, হাবরা এবং অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা অপরিকল্পিত। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু নালা তৈরি হলেও নিকাশি ব্যবস্থা হিসাবে তা যথেষ্ট নয়। ওই সব এলাকার খাল, নদী বা বিভিন্ন বাওড়ের নাব্যতা কমে যাওয়া বেহাল নিকাশির একটি বড় কারণ। |
|
জলমগ্ন বনগাঁ পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাস্তা। ছবি: পার্থসারথি নন্দী। |
বনগাঁ মহকুমার প্রধান নদী ইছামতী এখন নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়। এখানকার প্রবীণ মানুষেরা জানান, বছর পঁচিশ আগেও বর্ষায় জল জমত। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যেই তা নদী দিয়ে নেমে যেত। কিন্তু এখন জল নামতে দীর্ঘ দিন লেগে যায়। ইছামতী সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু এর পাশাপাশি, কোদালিয়া, বেত্রাবতী, যমুনা, কপোতাক্ষ বা নাওভাঙার মতো নদীগুলি সংস্কার করা না হলে নিকাশি সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না বলে গ্রামবাসীদের অভিমত। ওই সব নদী সংস্কারের দাবি মানুষের দীর্ঘদিনের। অতীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বনগাঁ শহরের পরিস্থিতি বর্ষায় তুলনায় আরও শোচনীয় হয়। পুরপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “আমরা এক বছর হল পুরবোর্ডের ক্ষমতায় এসেছি। মাস্টারপ্ল্যান তারি করছি। আশা করছি, রাজ্য সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করবে।”
গোবরডাঙা পুর এলাকার মিলন কলোনি, পাকাঘাট কলোনি, পালপাড়া, সুভাষ পল্লি, কুঠিপাড়া, রঘুনাথপুর, খাঁটুরা, ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি প্রভৃতি এলাকা বর্ষায় সম্পূর্ণ বা আংশিক জলমগ্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয় যমুনা নদী এবং কঙ্কনা বাওড়ের জল বর্ষার সময়ে উল্টে শহরে ঢুকে পড়ে। রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন পুরসভা গোবরডাঙা। অথচ, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কোনও সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেওয়া যায়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। আগের বামফ্রন্ট শাসিত পুরবোর্ডের আমলে কিছু নিকাশি নালা তৈরি হয় ঠিকই। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। পুরপ্রধান তৃণমূূলের সুভাষ দত্ত বলেন, “গত বার সে ভাবে বর্ষা না হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থা দেখে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়নি। এ বার বর্ষার পরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে।” অর্থাৎ, এ বারও বর্ষায় এই পুর এলাকার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভাতেও ক্ষমতায় তৃণমূল। এখানে বাম বোর্ডের সময়ে অপরিকল্পিত ভাবে নিকাশি নালা তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ। অশোকনগরের পুর ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে বিদ্যাধরী খাল, গুমা খাল এবং পদ্মা নালার উপরে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বিদ্যাধরী খালের অবস্থা শোচনীয়। পুরপ্রধান তৃণমূলের সমীর দত্ত বলেন, “নালায় বাধা থাকায় নোংরা জল অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যাধরী খালে পড়ে না। আমরা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি, মাস্টার প্ল্যানও তৈরি করেছি।”
একই পরিস্থিতি হাবরা এবং বনগাঁ শহরেও। হাবরার নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম পদ্মা নালা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে ওই নালায় নৌকা চলত। জলপথে ব্যবসা হত। এখন নালাটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নালার জমি দখল করে বসতি গড়ে উঠেছে। আর প্রায়ই এখানকার জলাভূমি বোজানোর অভিযোগ ওঠে। এর ফলে, বর্ষায় জমা জল বের হতে পারে না। বিধায়ক তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “এখানকার নিকাশি সমস্যা মেটাতে শীঘ্রই পদক্ষেপ করা হবে।” |
|
|
|
|
|