লন্ডনে স্মরণসভা
ফের কলকাতায় আসতে চেয়েছিলেন হুসেন
তাঁর ১৭টি চিত্র প্রদর্শনীর সাক্ষী যে শহর, সেই শহরেই তিনি আরও এক বার ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। ভারতের শহরগুলির মধ্যে কলকাতাই ছিল তাঁর সব চেয়ে প্রিয়। প্রিয় এই শহরে কখনও এসেছেন কাজে। কখনও বা আগাম না জানিয়ে এসে পড়েছেন কোনও বন্ধুর বাড়ি। লন্ডনে সদ্য প্রয়াত মকবুল ফিদা হুসেনের স্মরণসভায় এমনই টুকরো কিছু স্মৃতি উঠে এল। উপস্থিত ছিলেন হুসেনের পুত্র মুস্তাফা এবং ওয়াইস হুসেন। ছিলেন তাঁর গুণগ্রাহী বন্ধু লক্ষ্মী মিত্তল, লর্ড হামিদ, লর্ড নুন, অভিনেতা রণধীর কপূর, শোভা দে, প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় নরেশ এবং সুনীতা কুমার, চিত্রশিল্পী পরেশ মাইতি।
লন্ডনে হুসেনের একটি প্রিয় হোটেলে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। লন্ডনে এলে হুসেন এই প্রিয় গন্তব্যে আসতেন চা খেতে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁর কলকাতা প্রীতির কথা জানালেন হুসেন-পুত্র মুস্তাফা হুসেন। প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় নরেশ কুমার স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনলেন কলকাতায় হুসেনের সঙ্গে তাঁর একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা।
নরেশের কথায়, “এক দিন সকালে হঠাৎ হুসেন আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। আগাম কোনও খবর ছাড়াই এসেছিলেন তিনি। সঙ্গে কোনও ব্যাগও আনেননি। বললাম, ‘আপনি অন্য কোনও জামাকাপড় আনেননি। আজ রাতে তো আমরা ‘ডিনার’ করতে যাব। কিন্তু আপনি কী পরবেন?’ উনি বললেন, ‘চিন্তা নেই, একটা স্যুট বানিয়ে নেব’।” নরেশকে নিয়ে হুসেন স্যুটের কাপড় কিনে বানাতে গেলেন কলকাতার একটি বিখ্যাত দোকানে। মাপ নেওয়ার পর সেই দোকানের মালিককে জিজ্ঞেস করা হল, তারা স্যুটটি কখন দেবে। তারা জানাল, এক সপ্তাহের মধ্যেই হুসেন সেটি পাবেন। এ কথা শুনেই হুসেন জ্বলে উঠলেন। নরেশের কথায়, “ভীষণ রেগে গিয়ে উনি বলেন, ‘তোমরা কোনও কাজের নও। এক্ষুনি কাজ শুরু করো। আমি বিকেল চারটের মধ্যেই চাই।’ হতচকিত সেই দোকানের মালিক এর পর নড়েচড়ে বসেন। মনে হল, এ ধরনের কড়া কথা শোনা তাঁদের অভ্যেস নেই। কিন্তু হুসেনের ব্যক্তিত্ব এমনই যে, এই কথাতেই কাজ হল।”
সে দিনের ডিনারে হুসেন সদ্য বানানো স্যুটটিই পরেছিলেন। হুসেনকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন নরেশ। তিনি জানান, অক্লান্ত ভাবে নিষ্ঠা ভরে কাজ করতে পারতেন হুসেন। আর সেই নিষ্ঠাই তাঁকে অন্য একটি মাত্রায় পৌঁছে দিত। এ রকমই আরও একটি মুহূর্তের কথা স্মরণ করেছেন নরেশ। যেখানে আক্ষেপের সুরে হুসেন বলেছিলেন, ‘‘অনেকে মনে করে আমি কয়েকটি রেখা দিয়ে ঘোড়ার ছবি আঁকি, আর তা বিক্রি হয়। কিন্তু এটা কেউ ভেবে দেখে না, আমি ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতের ঘোড়া নিরীক্ষণ করেছি। তাই আমার আঁকাগুলো শুধুমাত্র নিছক কয়েকটি রেখা নয়। এর পিছনে রয়েছে ২৫ বছরের পরিশ্রম।’’
লর্ড নুনও বললেন তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কথা। ১৯৩৬ সালে হুসেনের আঁকা একটি ছবি তাঁর ভাইয়ের কাছে ছিল। সে সময় তাঁর ভাই ছিলেন মুম্বইয়ে। এর পর লন্ডনের তাঁর ভাইয়ের অফিসে সেটি এনে রাখা হয়। কয়েক বছর আগে হঠাৎ লন্ডনে রাতের খাওয়ার পর হুসেন সেই ছবি দেখানোর জন্য লর্ড নুনকে অনুরোধ করেছিলেন। সে রাতেই গাড়ি চালিয়ে লর্ড নুন তাঁকে সেই ছবি দেখাতে নিয়ে যান। নুনের কথায়, “ছবি হাতে পাওয়ার পর উনি শিশুর মতো হেসেছিলেন। সে সময় আমি ওঁর একটি ছবি তুলেছিলাম।”
আর বাবা হিসেবে কেমন ছিলেন এম এফ হুসেন?
তাঁর ছোট ছেলে ওয়াইস বললেন, “অনেক সময়ই উনি আমাদের কাছে থাকতেন না। কিন্তু যখন থাকতেন, তখন ওঁর না-থাকার সময়টা আমরা সহজেই ভুলে যেতে পারতাম। একসঙ্গে সাত দিন থাকলেও, তা আমাদের অনেক দিন মনে থাকত।”
মৃত্যুর আগের দিনও হুসেন তাঁর আঁকা কয়েকটি ছবির একটি সিরিজ নিয়ে তাঁর ছেলে মুস্তাফার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সিরিজটির বেশিরভাগ ছবিই শেষ। অল্প কয়েকটি বাকি ছিল। শেষ করে সেই সিরিজটি নিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনীর কথা ভেবেছিলেন। প্রদর্শনী হয়তো হবে। কিন্তু হুসেনই থাকবেন না।
First Page Bidesh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.