পানীয় জলের দু’টি প্রকল্প কেন্দ্রের অনুমোদন পেয়েছে বছর পাঁচেক আগে। এখনও তারা দিনের আলো দেখেনি।
একাধিক ছোট প্রকল্প সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় ফাইলবন্দি।
দু’টি প্রকল্প তৈরির পরেও তেমন সাফল্য মেলেনি।
এই চিত্র আসানসোলে।
তার মধ্যেই চলছে পাইপ ফাটিয়ে জল চুরি। ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। ফলে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কটে ভুগছে আসানসোল মহকুমার বেশ কিছু এলাকা।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য সমস্যা মেটাতে সার্বিক ভাবে চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আসানসোলের বিষয়ে আমি যথেষ্ট চিন্তিত। বিস্তারিত জানা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলি কী অবস্থায় আছে দেখেছি। আরও কী কী দরকার, দেখব। ইতিবাচক পদক্ষেপই করা হবে।”
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ৩৫ আগে তৈরি হয় মাইথন সংলগ্ন কল্যাণেশ্বরী জল প্রকল্প। বরাকর নদের জল পাম্পের সাহায্যে এখানে এনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিশোধন করে তা মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা শুরু হয়। ১৫ বছর আগে হিরাপুরের কালাঝড়িয়ায় অন্য একটি প্রকল্প তৈরি হয়। তার পর থেকে কল্যাণেশ্বরীর জল কেবল কুলটি, সালানপুর, বারাবনি ও পাঁচগাছিয়ায় সরবরাহ করা হতে থাকে। আর দামোদর নদে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে গভীর নলকূপের সাহায্যে পরিশোধিত জল তুলে এনে তা সরবরাহ করা হয় কালাঝড়িয়া প্রকল্পে। সেই জল আসানসোল পুরসভার ২০টি ওয়ার্ড ও রানিগঞ্জ ও জামুরিয়ায় সরবরাহ করা হয়। বছর দুই আগে জামুড়িয়ার খরাবড় ও দরবার ডাঙা, বারাবনির গৌরাণ্ডি-সহ কিছু জায়গায় ছোট ছোট প্রকল্প গড়ে উঠেছে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে মহকুমার জল সমস্যা মিটছে না এতেও। |
দফতরের আসানসোল ডিভিশনের সুপারন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার অশোক রায় জানিয়েছেন, বিস্তীর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহের যে পরিকাঠামো দরকার তা তাঁদের নেই। যে টুকু আছে, সেখানেই জল চুরি এত বেশি যে পরিকাঠামোগুলি মার খাচ্ছে। অশোকবাবুর কথায়, “মহকুমায় মোট ২৯টি উচ্চ জলাধার আছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প থেকে পাইপের মাধ্যমে জল এসে জলাধার ভর্তি হবে। পরে সেখান থেকে বিভিন্ন প্রান্তে তা সরবরাহ করা হবে। কিন্তু জলাধারে জল যাওয়ার আগেই পাইপ ফাটিয়ে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ জুড়ে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। এমনকী, বহু শিল্পসংস্থাতেও এই চুরির জলের সংযোগ জুড়ে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে জলাধারই ভরছে না।”
অথচ, মহকুমার ছ’টি বিধানসভা এলাকায় প্রায় ৯ লক্ষ বাসিন্দাকে এই দফতর জল সরবরাহ করে।
প্রতি দিন মাথা পিছু ১০০ লিটার জল দরকার, মহকুমার অধিকাংশ বাসিন্দাই তা পান না। দফতরের আধিকারিকেরা মনে করছেন, জলের চাহিদা মেটাতে আরও বহু নতুন প্রকল্প বানাতে হবে। অশোক রায় বলেন, “নতুন কয়েকটি প্রকল্পের খসরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে। এখনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি।”
মহকুমায় তীব্র জলসঙ্কট রয়েছে উখড়া, দক্ষিণখণ্ড, শঙ্করপুর অঞ্চলে।
জানা গিয়েছে, উখড়ায় একটি প্রকল্পের খসড়া তৈরি হয়েছে। অজয় নদে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে বা গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে উচ্চ জলাধারে মজুত করে তা সরবরাহ করা হবে। ১৩টি উচ্চ জলাধার বানাবার প্রস্তাব আছে। ২০১০ সালে প্রকল্পের খসড়া বানিয়ে পাঠানো হয়েছে। পিএইচই কর্তৃপক্ষের দাবি, এই প্রকল্প তৈরি হলে এলাকায় আর জলের সমস্যা থাকবে না।
অথচ, যে দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কল্যাণেশ্বরী আর কালাঝড়িয়ার উপরে চাপ কমতে পারত, সেই দু’টি প্রকল্পই ঝুলে রয়েছে এখনও। সৌজন্য, এডিডিএ ও পুরসভার দ্বন্দ্ব। এর মধ্যে একটি কুলটিতে এবং অন্যটি হবে আসানসোলে।
কিন্তু কবে, জানা নেই কারও। |