লহো মিষ্টান্নের নাম রে!
মিষ্টি কথাটার মধ্যেই কেমন যেন মন ভাল করে দেওয়া একটা ব্যাপার আছে। কথায় কথায় আমরা বলি না, খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে, বা হাসলে ওকে খুব মিষ্টি দেখায়, অথবা ধরুন গানের সুরটা কী মিষ্টি এ রকম সহজ উপমা সত্যিই বাংলা ভাষায় আর দু’টি নেই!
ঠিক যেমন বর্ধমানের মিহিদানা স্রেফ স্থানমাহাত্ম্যেই একা এবং অদ্বিতীয়। কখনও শুনেছেন রামনগরের সরপুরিয়া-সরভাজার কথা? শুনবেন না, কারণ ওটা কেষ্টনগরের ট্রেডমার্ক, অনেক ঘষেও অন্যত্র অ্যাচিভ করা তা অসম্ভব। আসলে যেখানকার যা, আমাদের মিষ্টান্ন-মানচিত্রের জিয়োগ্রাফি তা-ই, রীতিমত ঐতিহাসিক। পান্তুয়া কি আর কলকাতা বা দুর্গাপুরে তৈরি হয় না? তবু, রানাঘাটের পাকা সিট এই পান্তুয়ার ব্যাপারে! মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকেই তা প্রবাদপ্রসিদ্ধ। ওপিনিয়ন বা এগজিট পোল নিয়ে দেখুন, গুলাবজামুন গো-হারা হারবে তার কাছে। সব কিছুতে কি আর পরিবর্তন চলে!
এই অপরিবর্তিত স্বাদই জন্ম দেয় কিংবদন্তি রেসিপির যে রেসিপির হাতে লেগে আছে বাংলার অগণিত নাম-না-জানা হালুইকরদের ব্র্যান্ড ইকুইটি। সবাই কি আর কে সি দাশ হতে পারেন! যে কারণে শিলিগুড়ির অদূরে ফুলবাড়ির লালমোহনের পেটেন্ট নেওয়া হয়নি আজও। ঠিক যে-রকম মসলন্দপুরের দই বা শান্তিপুরের নিখুতি কার আবিষ্কার জানা যাবে না কোনও দিন। তেড়ে ছানার পায়েস বা কাঁচাগোল্লা খেয়ে যাবে বাঙালি, জানবে না কোন বাঙালি জাদুকরের ইন্দ্রজাল জড়িয়ে আছে এর সৃষ্টিরহস্যে। কে যেন বলেছিলেন, বাঙালি এক আত্মবিস্মৃত জাতি, মনে করতে পারছি না!
বাংলার কে সি দাশ, ভীম নাগ, নকুড়, অধর বা বলরামেদের পৃথিবীতে এখন অবশ্য উদারীকরণের ছোঁয়া। বাজারের তাগিদে অবাঙালি রসনা তৃপ্ত করতেও তাঁরা পিছ-পা নন। ভাপা সন্দেশ বা বেকড রসগোল্লা তাই রীতিমতো ‘ইন থিং’ এখন তাঁদের কাছে। সেটা দোষের কিছু নয়, বরং প্রগতিরই লক্ষণ। তবু বলব, এথনিক রেসিপিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা বড় দরকার, এক্সোটিক ডেলিকেসিকে অসম্মান না করেও; কারণ এর সঙ্গে আমাদের নাড়ির যোগ। বাঙালি সংস্কৃতির শিকড় গাঁথা রয়েছে এর রসের শিরায়-শিরায়।
তবে শুধু স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, বিস্তৃতিও সমান জরুরি। বাংলার বাইরে বাঙালিকে যেমন রসগুল্লা বলে আইডেন্টিফাই করে, সেই সাধারণীকরণ থেকে বেরনো খুব দরকার। তামাম বিশ্বকে জানানো উচিত, বাঙালি মাত্রেই নরম পাক নয়, প্রয়োজনে কড়া পাকের খেল দেখাতেও সে সিদ্ধহস্ত। হোয়াট বেঙ্গল বেকস টুডে, ইন্ডিয়া উইল বেক টুমরো! আমি আশাবাদী।

আর আশাবাদী বলেই হাল ছাড়িনি, বাংলার বাইরে শুরু করেছি সুইট বেঙ্গল। শুধু শুকনো ব্যবসায়িক কারণে নয়, কোথাও মনের মধ্যে একটা মিষ্টি প্রেমও উসকে দিয়েছিল আমার সেই ইচ্ছেকে।
আসলে, মিষ্টির ব্যাপারে পিঁপড়ের মতো হতে হয়। তক্কে-তক্কে থাকি কোথায় নতুন কোন স্বাদের জন্ম হল। আমি হলফ করে বলতে পারি, এখনও বহু মিষ্টি রেসিপি অনাবিষ্কৃত থেকে গেছে। কমিউনাল নই, তবু বলছি, যে হারে ভুজিয়াওয়ালাদের সাম্রাজ্য বাড়ছে, মুখোমুখি লড়তে গেলে মুখে নতুন স্বাদ না আনলেই নয়।
আর তা হতে পারে কারিগরদের মধ্যে ট্যালেন্ট হান্ট করেই। রসগোল্লার লিডারশিপকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে রিয়ালিটি এটাই! আর সেটা মোটেই মিষ্টি নয়।
অলংকরণ: দেবাশীষ দেব
Previous Item Utsav Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.