|
|
|
|
হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠল এ বার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
গর্ভে সন্তান রয়েছে ভেবে এক মহিলার পেট কাটার ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তার মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে এই হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে।
প্রসূতি বিভাগ নিয়েই জেলা সদর হাসপাতাল। এখানে সরকার অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা ৯৫টি। কিন্তু রোগীর চাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে করেছেন ১১৬টি। কিন্তু প্রসূতি ভর্তি থাকে তার চেয়েও অনেক বেশি। এক এক দিন সংখ্যাটা আড়াইশো ছাপিয়ে তিনশোতে পৌঁছে যায়। ফলে এক একটি শয্যায় সদ্যোজাত সন্তান-সহ দুই থেকে তিন জন প্রসূতিকে রাখতে বাধ্য হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে যে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাঁদের তা-ও শয্যা জোটে। কিন্তু যাঁদের স্বাভাবিক ভাবে প্রসব হয়েছে, তাঁদের সেটুকুও অনেক সময় জোটে না। প্রচণ্ড শীতের রাতেও তাঁদের সন্তানকে নিয়ে মেঝেয় শুতে হয়। হাসপাতালেরই এক কর্তা বলেন, “প্রসব হওয়ার আগে অনেক প্রসূতিকে আমরা বসার জায়গা পর্যন্ত দিতে পারি না। মাঝে মধ্যে নিজেদের খুব অসহায় লাগে। কিন্তু কিছু করারও নেই।”
এই বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলানোর মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসকও নেই। হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এমডি চিকিৎসকের সংখ্যা চার জন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে বেথুয়াডহরি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। দু’জন ডিজিও রয়েছেন। তাঁদের এক জন অসুস্থ হয়ে ছুটিতে রয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে অভিযুক্ত শুভেন্দু দত্তকে কর্মে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে আরও এক চিকিৎসক নেই। এই দিন সকালেই কোচবিহার থেকে জেলা সদর হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁকে নিয়ে তাই বর্তমানে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা চার জনই। অথচ এই দিন হাসপাতালে প্রসূতির সংখ্যা ২৭০ জন। শুভেন্দুবাবুর জায়গায় এই দিন ‘অন কল’ যে চিকিৎসককে রাখা হয়েছিল, তিনি নেই বলে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ওই দায়িত্বে ছিলেন না কোনও চিকিৎসকই। হাসপাতালের সুপার কাজল মণ্ডল বলেন, “এক চিকিৎসক পুরোপুরি বেপাত্তা। কোতোয়ালি থানার পুলিশের সাহায্যেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।”
চিকিৎসকেরা কিন্তু বলছেন, হাসপাতালে পরিকাঠামোর অভাবের দায় কে নেবেন? অথচ, বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত কেবল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা যাবে। তা হলে প্রয়োজন হলে রাতে কেন ইউএসজি করা যাবে না? তখন ইউএসজি রিপোর্ট না দেখে রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে, তার দায়িত্ব কে নেবেন? অস্ত্রোপচারের ঘরে আলোর ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। যন্ত্রপাতিও রীতিমতো পুরনো। এরই মধ্যে দিনে ১২-১৪টি করে টানা অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের সুপার কাজলবাবু বলেন, “হাসপাতালের সমস্ত সমস্যার কথা আমি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদারের কথায়, “চিকিৎসক ও কর্মীর সংখ্যা কম থেকে শুরু করে পরিকাঠামোগত অভাবের সব কথা স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত ব্যবস্থা হবে।” |
|
|
|
|
|