হাসপাতালে জেলাশাসক, মিলল পরিবর্তনের আশ্বাস
ঠাৎ যেন সব ঠিক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার কালনা হাসপাতালে দেড় ঘণ্টার পরিদর্শন দেখে মনে হল এমনটাই। এক দিনেই মিলল ৫৭ লক্ষ টাকা পাওয়ার আশ্বাস। জেলাশাসক ছাড়াও মহকুমাশাসক, সঙ্গে তিন বিধায়ক। হাসপাতালে যেন সাজো-সাজো রব।
ঘড়িতে তখন সকাল দশটাও বাজেনি। জেলাশাসকের গাড়ি ঢুকল হাসপাতালের দ্বিতীয় গেটে। নেমেই তিনি সোজা ঢুকে পড়লেন রোগীদের খাবার তৈরির ঘরে। সেখান থেকে একে একে নানা ওয়ার্ডে।
জেলাশাসককে হাতের কাছে পেয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন সাধারণ মানুষ।
নাদনঘাটের ন’পাড়ার বাসিন্দা সিরাজ শেখ। বললেন, “এখানে আমার সন্তানের জন্ম হয়েছে। এর জন্য স্ত্রী-র অস্ত্রোপচার করাতে হয়। কিন্তু প্রচুর ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। প্রায় ১৮০০ টাকার ওষুধ কিনেছি।” অথচ, ওষুধের সেই তালিকায় মিলল এমন দু’টি ওষুধ, যা হাসপাতালেও রয়েছে। এই নিয়ে সুপার অভিরূপ মণ্ডলকে তদন্তের নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক।
নিজস্ব চিত্র।
পরিদর্শন শেষে মিনা বলেন, “হাসপাতালের প্রসূতি ও শিশু বিভাগের যা চাপ, তাতে ওয়ার্ড দু’টি বাড়ানো দরকার। আপাতত ৫০ লক্ষ টাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুত শুরু করবে পূর্ত বিভাগ। পূর্ত বিভাগের একটি বিশেষ দল ১৬ জুন হাসপাতাল পরিদর্শন করবে।” এ ছাড়াও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য জেলার তহবিল থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে সাত লক্ষ টাকা। এর জন্য দ্রুত একটি চিঠি পাঠাতে বলা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
আর চিকিৎসকদের ১১ টি শূন্য পদ নিয়ে জেলাশাসক জানিয়েছেন, তিন চিকিৎসক নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই মিলেছে অনুমোদন। পরে বাকি পদগুলিতে নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হবে।
এই পরিদর্শনের আগে অবশ্য হাসপাতালে ছিল দ্রুত ভোল বদলের চেষ্টা। ওয়ার্ড-সহ বিভিন্ন জায়গা সাফ করে ফেলা হয়। হয় ঝুল পরিষ্কারও। টয়লেটে ছড়ানো হয় ব্লিচিং। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাসপাতাল কর্মীর কথায়, “গত কাল রাত থেকেই জেলাশাসকের পরিদর্শনের কথা হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা সবাই সতর্ক হয়ে যাই।” সাজো সাজো রব দেখে রোগীরাও বুঝে যান, উচ্চপদস্থ কোনও কর্তাব্যক্তি আসছেন পরিদর্শনে। এক রোগীর মশকরা, “কেউ আসছেন, মাঝে মধ্যে এমন রটিয়ে দিলে হয়। হাসপাতাল তা হলে বেশ ঝকঝকে থাকবে।”
এক রোগীর আত্মীয় জালুইডাঙার বাসিন্দা বিশ্বনাথ মালো আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, “হাসপাতালে কোনও সিটি স্ক্যান যন্ত্র নেই। এখান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান মেডিক্যাল। সেখানে যেতে তো গাড়ি ভাড়াই লাগে ১০০০ টাকা। আমাদের মতো মানুষ কোথায় যাবে?” এই পত্রিকায় কালনা মহকুমা হাসপাতালের অব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয় বৃহস্পতিবার। সঙ্গে একটি ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছিল, হাসপাতাল চত্বরে শুয়োরের অবাধ বিচরণ। এর ঠিক পরেই হঠাৎ নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয়ে যায় দফায় দফায় বৈঠক আর ফোনের পর ফোন। তার পরেই এই পরিদর্শন। অথচ, আজ পর্যন্ত কোনও জেলাশাসকের পা এখানে পড়েছিল কি না মনে করতে পারছেন না এলাকার মানুষজন, বা হাসপাতালের পুরনো কর্মীরাও। রোগীর আত্মীয়দের আরও অভিযোগ, অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়াই এখানকার রেওয়াজ। তার উপরে রাতে আশপাশে কোনও ওষুধের দোকান খোলা থাকে না। চলছে দালাল-রাজ।
পরিদর্শন এবং দিনভর একাধিক বৈঠক। দিনের শেষে হাসপাতালের বিভিন্ন প্রান্তে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের প্রশ্ন, এ সব পরিস্থিতি এ বার বদলাবে তো?
না কি সবই পরিবর্তনের মহড়া।
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.