|
|
|
|
ভাতা মাসে ৩০০, মমতার দ্বারস্থ হবেন হেলথ গাইডরা |
নুরুল আবসার • কলকাতা |
গ্রামে তৃণমূল স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবা যাঁদের উপরে অনেকটাই নির্ভর করে, সেই ‘কমিউনিটি হেলথ গাইড’ (সিএইচজি)-রা স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে এই হেলথ গাইডরা নিয়োজিত রয়েছেন। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিষেবা সংক্রান্ত নানা কাজ তাঁরা করে থাকলেও ভাতা পান মাসে মাত্র ৩০০ টাকা করে। সেটাও অনিয়মিত বলে তাঁদের অভিযোগ। অবিলম্বে ভাতা বাড়ানো এবং তা নিয়মিত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হেলথ গাইডরা। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আটের দশকের প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রকল্পে গ্রামে গ্রামে হেলথ গাইড নিয়োগ করা হয়। সেই সময় স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে গ্রামবাসীদের যোগসূত্র হিসাবে তাঁরা কাজ করতেন। সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ করেন। শুরুতে তাঁদের ভাতা ছিল মাসে ৫০ টাকা করে। ২০০৫-০৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। বিপাকে পড়ে হেলথ গাইডরা রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হন। রাজ্য সরকার তাঁদের বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁদের ভাতা বাড়িয়ে করা হয় ৩০০ টাকা। ওই বছরেই ফের নতুন করে ঝাড়াই-বাছাই করে তৈরি হয় নতুন তালিকা। যাঁরা একদম কাজ করতেন না তাঁদের বাদ দেওয়া হয়। ভাতা বাড়ানোর সঙ্গে হেলথ গাইডদের উপর বাড়তি কিছু কাজের দায়িত্বও চাপিয়ে দেয় স্বাস্থ্য দফতর।
বর্তমানে তাঁদের যে সব কাজ করতে হয় তার মধ্যে রয়েছে পালস পোলিও টিকাকরণে সহায়তা, গ্রামে কুষ্ঠ রোগী থাকলে তাঁদের সন্ধান স্বাস্থ্য দফতরকে দেওয়া, গ্রামের কোথাও ডায়েরিয়া হলে তা চটজলদি স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো, গ্রামের মহিলারা যাতে শিশুদের বিভিন্ন টিকাকরণ কর্মসূচিতে সামিল করান সে বিষয়ে তাঁদের সচেতন করা, জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচার করা, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন ওষুধ আনা প্রভৃতি। এ ছাড়া টিবি এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগী গ্রামে থাকলে তাঁদের খুঁজে বের করে তা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়ে থাকেন হেলথ গাইডরা। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজকর্ম করাও তাঁদের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হাওড়ার বাগনান ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে রয়েছে মোট ২৯টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মোট ৮৭ জন হেলথ গাইড উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অধীনে কাজ করেন। বাগনান ২ গ্রাম পঞ্চায়েত সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হেলথ গাইড আনসারুল হক বললেন, “আমরা হাজিরা খাতায় সইও করি। বিনিময়ে ৩০০ টাকা মাসিক ভাতা পাই। সেটাও গত ১০ মাস ধরে পাচ্ছি না।” আমতা ১ ব্লকের রসপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে কাজ করেন অজয় সিংহ। তিনি বলেন, “মাসিক ভাতা খুব কম পাই। তা-ও অনিয়মিত।”
স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য সাফ জানিয়েছে, হেলথ গাইডদের ভাতা বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই। স্বাস্থ্য দফতরের সচিব মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “হেলথ গাইডরা পুরো সময়ের কর্মী নন। যখন প্রয়োজন হয় তাঁদের কাজে লাগানো হয়। একসময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রকল্পের অধীনে তাঁদের বহাল করা হয়েছিল। প্রকল্পটি উঠে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁদের বহাল রাখা হয়েছে। ভাতাও বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে। ফের এই ভাতা বৃদ্ধির কোনও প্রস্তাব আপাতত নেই।” তাঁরা যে পুরো সময় কাজ করেন হেলথ গাইডদের এই সংক্রান্ত দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোথায় তাঁদের কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা বলতে পারব না।” |
|
|
|
|
|