দরিদ্র মহিলার সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের জমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হল শিলিগুড়ির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিবারের বিরুদ্ধে। প্রতারিত ওই মহিলা মমতা যাদব এই ব্যাপারে গত ১ জুন শিলিগুড়ি থানায় ওই ব্যবসায়ী পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁদের পরিবারের ২২ জন সদস্য ওই জমির মালিক। জমিটি এক ব্যবসায়ীর দখলে থাকায় বিধান রোড এলাকার ব্যবসায়ী সুশীল পেরিওয়ালকে জমিটি দখলমুক্ত করে বিক্রি করার আইনি অধিকার দেন তাঁরা। ওই ব্যবসায়ী ২৫ লক্ষ টাকায় জমিটি বিক্রি করলেও তাঁদের মাত্র ৩ লক্ষ ৯ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। মমতা দেবীর ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি প্রতারণার মামলা শুরু করেছে। অভিযোগকারিনী এবং অভিযুক্ত, দু’পক্ষকেই নিজেদের পক্ষে নথি পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। গত নভেম্বর মাসে বিধান মার্কেট এলাকায় নিহত কুট্টি ওরফে সুরজিৎ প্রসন্ন দে খুনের সঙ্গে এই ঘটনার যোগ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, “একটি প্রতারণার মামলা হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে েখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিলিগুড়ির এক পুলিশ কর্তা বলেন, “দু’পক্ষকেই নথি পেশ করতে বলা হয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযুক্ত ব্যবসায়ী সুশীল পেরিওয়াল অবশ্য ওই মহিলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “দু’বছর আগে ওই জমিটি বিক্রি হয়। তখনই মমতা দেবী এবং তাঁর পরিবারের হাতে পুরো ২৫ লক্ষ টাকাই দেওয়া হয়েছে। ‘ব্ল্যাকমেল’ করার জন্য উনি এমন ভুয়ো অভিযোগ করছেন।” নরেশ পেরিওয়াল বলেন, “আমি এই ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না।” মমতা দেবীর পাল্টা অভিযোগ, “সুশীলবাবু এবং তাঁর ভাই নরেশবাবু প্রথমে জমিটি দখলমুক্ত করে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান। তার পরে জমি বিক্রির জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেন। আরও বেশ কিছু কাগজে সই করিয়ে নেন। সেই সময়ে মোট ৩ লক্ষ ৯ হাজার টাকা দেন। এখন টাকা চাইতে গেলে বলছেন তিনি নাকি ২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। পুলিশ তদন্ত করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে কে সত্যি বলছে।”
বিতর্কিত ওই জমি বিধান মার্কেট অটো স্ট্যান্ডের পাশে। মমতা দেবীর দাবি, প্রায় চার কাঠার ওই জমিটির মালিক ছিলেন প্রয়াত গঙ্গাপ্রসাদ সিংহ। গঙ্গাপ্রসাদের সম্পত্তি ভাগাভাগির সময়ে ওই জমির মালিকানা পান ছেলে নগেন্দ্র প্রসাদ। নগেন্দ্র সম্পর্কে মমতা দেবীর দাদু। তাঁর ছেলেমেয়েরা সকলেই মারা গিয়েছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে এখন মমতা দেবী ছাড়াও তাঁর পিসি, কাকিমা, দিদি, এবং খুড়তুতো ভাইবোন মিলিয়ে মোট ২২ জন ওই জমির মালিক। মমতা দেবীর স্বামী প্রদীপ যাদব গ্যাস সিলিন্ডার মেকানিক। ২০০৬ সালে নগেন্দ্র প্রসাদের মেয়ে ইভলিন সিংহ মারা গেলে মমতা দেবী এবং পরিবারের লোকেরা জমিটি বিক্রির চেষ্টা করেন। দালালের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে সুশীল পেরিওয়াল এবং নরেশ পেরিওয়ালের যোগাযোগ হয় বলে মমতা দেবী জানিয়েছেন। গত নভেম্বরে শিলিগুড়ি বিধান মার্কেট এলাকায় একটি জমি কেনাবেচা নিয়ে বিরোধের জেরে কুট্টি খুন হয় বলে পুলিশের সন্দেহ। ওই খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ মমতা দেবীকে জেরা করে। পুলিশ জানতে পেরেছে, কুট্টি এক সময়ে ওই জমিটি বায়না করেছিল। পরে মমতা দেবীর কাছ থেকে বায়না বাবদ দেওয়া ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা সে ফেরত নেয়। মমতা দেবী বলেন, “কুট্টি খুনের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে যায়। আমি যা জানি বলেছি।” অভিযোগকারী মমতা দেবীর আইনজীবী চিন্ময় সরকার বলেন, “সুশীল ও নরেশ পেরিওয়াল মমতা দেবী এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কী ভাবে প্রতারণা করেছে সেই অভিযোগের প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না-নিলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।” |