|
|
|
|
বাবার সঙ্গে টালি বেচেও মাধ্যমিকে সফল বিকাশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
নুন আনতে সংসারে পান্তা ফুরোয়। বাবা টালি বিক্রি করে সংসার চালান। তবে অভাবকে কখনও পড়াশোনায় বাধা হতে দেয়নি কাশীপুরের কুমারডি গ্রামের বিকাশ কুম্ভকার। বাবাকে কাজে সাহায্য করেও মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে তা-ই প্রমাণ করেছে সে।
সোনাথলি-কালাপাথর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র বিকাশের বাবা সুজিত কুম্ভকার মাটির টালি গড়ে তা বিক্রি করেন। চতুর্থ শ্রেণির গণ্ডি পেরোনোর পরেই সংসারে আর্থিক সাহায্য করতে কাজে নামতে হয়েছিল সুজিতবাবুকে। সামান্য জমি-জায়গা রয়েছে। সেখানে যা চাষ হয় তা দিয়ে দুই ছেলে ও স্ত্রী-সহ চার জনের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা হয়। বিকাশের কথায়, “চাষবাস যখন হয় না তখন বাবা টালি তৈরি করে তা বিক্রি করে। তাতেই কোনও মতে চলে যায় আমাদের।” অনেক সময়ে টালি বিক্রির কাজে বাবার সঙ্গে যেতে হয় তাঁকেও। |
গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। স্কুলে যাওয়ার জন্য বিকাশকে আলাদা সাইকেল কিনে দিতে পারেননি সুজিতবাবু। তাঁর সাইকেল নিয়েই স্কুলে যেত বিকাশ। সে বলে, “যে দিন বাবা ভোরে সাইকেল নিয়ে কাজে বেরিয়ে যেত, সে দিন হাঁটা বা বন্ধুদের সাইকেলই ছিল ভরসা।” সোনাথলি-কালাপাথর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহরলাল ঘোষও স্বীকার করেন, “দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ভাল ফল করেছে বিকাশ।” এ সব সত্ত্বেও মাধ্যমিকে মোট ৬৮০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। তার মধ্যে অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩, ইতিহাসে ৮১ এবং ভূগোলে ৮৫ নম্বর পেয়েছে সে। স্কুলে প্রথম হয়েছে বিকাশই। মা জবাদেবী প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোননি। স্বামীর কাজে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেন তিনি। দিন আনি দিন খাই সংসারে ছেলেকে সব বিষয়ের বইও কিনে দিতে পারেননি বাবা-মা। বিকাশের কথায়, “আমার তো সব বইপত্রও ছিল না। সঞ্জয় কুম্ভকার নামে পাড়ার এক দাদা পড়াশোনায় সাহায্য করেছে। স্কুলের মাস্টারমশাইরাও বিভিন্ন সময়ে যে ভাবে পেরেছেন, সাহায্য করেছেন।”
সুজিতবাবু বলেন, “ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমার আর পড়ানোর সামর্থ্য নেই।” তার পরেই তাঁর আবেদন, “কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সহায়তা করলে হয়তো বিকাশ পড়া চালিয়ে যেতে পারবে, ওর স্বপ্ন সার্থক হবে।” আর বিকাশের ইচ্ছে? “বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চাই”, লাজুক হেসে জানায় সে। |
|
|
|
|
|