|
|
|
|
অনাহার শুনলে দু’ঘণ্টার মধ্যে খাবার দিন: খাদ্যমন্ত্রী |
প্রশান্ত পাল • পুরুলিয়া |
আমলাশোলের পরে বাম জমানায় ফের অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে।
অযোধ্যা পাহাড়ের কোল ঘেঁষা বাঘমুণ্ডির পাথরডি গ্রামে কার্যত না খেতে পেয়েই মারা গিয়েছিলেন পাতু মুড়া। যদিও আরও বহু ‘অনাহারে মৃত্যু’র মতো তা ‘প্রমাণ’ করা যায়নি।
বাম জমানার অবসানের পরে সেই অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে আড়শা ব্লকের কলাবনি গ্রামে গিয়ে রাজ্যের নতুন খাদ্যমন্ত্রী বললেন, “অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ পেলে কেউ রেহাই পাবেন না। তিনি আমার দফতরের আধিকারিক হোন বা রেশন ডিলার। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”
সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী শুক্রবার খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রথম গন্তব্য ছিল আড়শারই খুকড়ামুড়া গ্রাম। কিন্তু ওই গ্রামটি পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের একেবারে পাশে শুনেই তিনি যাওয়া বাতিল করেন। তাঁর জেদ, “আমি প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে চাই।” অগত্যা মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হল শবর-খেড়িয়া অধ্যুষিত অকড়বাইদ গ্রামে।
এবং এক ঝটকায় গণবণ্টন ব্যবস্থার বেআব্রু ছবি চলে এল তাঁর সামনে। |
|
আটার প্যাকেট দেখছেন জোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: সুজিত মাহাতো |
অকড়বাইদে গিয়ে মন্ত্রী শোনেন, সেখানকার বাসিন্দারা আগে সপ্তাহে পাঁচ কেজি করে চাল পেতেন। এখন পান দু’কেজি করে। রেশন ডিলার মাল দেন না। অভিযোগ শুনেই গ্রামের রেশন দোকানে গিয়ে ডিলার ফটিকচন্দ্র সর্দারের কাছে অন্ত্যোদয় যোজনার রেজিস্টার দেখতে চান মন্ত্রী। কিন্তু ফটিকবাবু রেজিস্টার দেখাতে পারেননি। এর পরে কয়েকটি প্রশ্নের সদুত্তর না পেয়ে ডিলারকে সোজা সাসপেন্ড করে দেন মন্ত্রী। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা জেলা খাদ্য নিয়ামক সুনয়কুমার গোস্বামীকে তিনি নির্দেশ দেন, “নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে ওঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করুন।”
পরের গন্তব্য ছিল তানাসি। পাহাড়ের পায়ের কাছে সেই গ্রাম যা বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। মন্ত্রী আসছেন শুনে সেখানকার বাসিন্দারা উল্লসিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের জানা ছিল না, মাঝে রাস্তায় কাজ চলছে। শিরকাবাদ থেকে নুনিয়া গ্রাম পর্যন্ত গিয়ে মন্ত্রীকে ফিরতে হয়। সঙ্গে ছিলেন পুরুলিয়া মহকুমাশাসক (পশ্চিম) শম্পা ধর। তিনি বলেন, “মন্ত্রী কিছুতেই ফিরতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তানাসির কাছের কলাবনি গ্রামে যেতে চাইলেন।”
আদিবাসী অধ্যুষিত কলাবনিতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু দফতরের আধিকারিকদের নয়, প্রশাসনের কর্তাদেরও বলেছি, কোনও মানুষ অনাহারে রয়েছে খবর পেলে দু’ঘণ্টার মধ্যে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। খাদ্য দফতর ছাড়া অন্য কেউ খাদ্যপণ্য পৌঁছে দিলে ভর্তুকি দেওয়া হবে।” অকড়বাইদ ও কলাবনিতে যাঁরা রেশন কার্ড পাননি, তাঁদের তা দেওয়ার জন্য আগামী শুক্রবার শিবির করা হবে বলেও তিনি জানান।
সারা দিনে পাঁচ ব্লক ঘুরে মন্ত্রী বলেন, “পুরুলিয়ার অবস্থা ভয়ানক। মানুষ খাবার পেলে কি মাওবাদী সমস্যার জন্ম হত?” তিনি জানান, জঙ্গলমহলে সস্তায় মতো খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিন জেলার ২৪টি ব্লক নিয়ে একটি ‘প্যাকেজ’ করা হবে। তার আওতায় তাঁরা সাঁওতাল ও উত্তরবঙ্গের টোটো জনজাতিকেও আনতে চান তিনি। লোধা ও শবরদের জন্য রেশনে যে সুবিধা আছে, তা যাতে পাহাড়িয়া ও বীরহোড়েরাও পান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনি সেই প্রস্তাব করবেন।
দিনের শেষে ঝালদা সার্কিট হাউসে বৈঠক সেরে ফেরার পথ ধরেন মন্ত্রী। বলে যান, “পরের বার এলে তানাসি গ্রামে আগে যাব।” |
|
|
|
|
|