নিখোঁজ স্রোত/১
পদ্মা সরে যাওয়ায় শুকিয়েছে মাথাভাঙা
ছর বারো-চোদ্দ আগেও মাথাভাঙা নদীর চেহারাটাই ছিল অন্য রকম। বছরভর পর্যাপ্ত জল থাকত নদীতে। দুই দেশের সীমানা দিয়ে বয়ে চলা এই নদীর উপরেই নির্ভর করত প্রতিবেশী দুই দেশের এই নদী সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষবাস। এদেশের নদিয়াতে যেমন পাট, গম হত, তেমনই ওদেশের কুষ্ঠিয়ায় হত তামাকের চাষ। কিন্তু পদ্মার গতিপথ পরিবর্তনে নদীর সেই চেনা চেহারাটাই বদলে যেতে শুরু করল নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে।
মাথাভাঙা পদ্মারই একটি শাখা নদী। বছর চোদ্দ আগে তার উৎস ছিল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি। কিন্তু পদ্মা তার পরে সরতে শুরু করায় মাথাভাঙার সঙ্গে দূরত্বও তৈরি হয়। এখন মাথাভাঙা পদ্মায় মিশছে আরও ১৪ কিলোমিটার সরে গিয়ে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জে। শুধু তাই নয়, পদ্মাতে জলও কমেছে। সাধারণত বর্ষা ছাড়া পদ্মা থেকে জল পাচ্ছে না মাথাভাঙা। তার উপরে ওই জলের সঙ্গেই পদ্মা থেকে পলি ঢুকছে মাথাভাঙায়। পদ্মায় তীরে ভাঙনের ফলে পদ্মার জলস্তরও নীচু হচ্ছে। তাই এখন মাথাভাঙা পদ্মার থেকে উঁচু। যে কারণে সাধারণ সময়ে পদ্মার জল এই নদীতে ঢুকতে বাধা পায়। হোগলবেড়িয়া থানার নাসিরের পাড়ার উদয় ক্যাম্প থেকে মুরুটিয়া থানার ফুলবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার জুড়ে মাথাভাঙা কোনওমতে অস্তিত্ব বজায় রেখেছে মাত্র। চাষআবাদ তো দূরের কথা, স্নান করা, মাছ ধরা এমনকী শবদাহ পর্যন্ত করাও দায় হয়ে পড়েছে সীমান্তের ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই দেশের মানুষই অনেকটা নির্ভর করে থাকত মাথাভাঙার উপরে। গোটা দশেক রিভার পাম্প পর্যন্ত ছিল। এখন তার বেশিরভাগই বন্ধ।” তা হলে কী ভাবে চাষ হচ্ছে এখানে? শঙ্করবাবু জানান, পদ্মা কিছুটা এগিয়ে আসায় তার জল কিছুটা হলেও পাওয়া যাচ্ছে। বাউসমারি, মধুগাড়ি ও কাছারিপাড়া সীমান্তের মানুষ তাই পদ্মা থেকে উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু মাথাভাঙা এলাকায় সেই উপায় নেই। গভীর ও অগভীর নলকূপের উপরেই নির্ভর করছেন তাঁরা। কিন্তু তা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ, বিদ্যুৎবিভ্রাটের সমস্যাও রয়েছে।
করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুরপতি প্রামাণিকের বক্তব্য, “মাথাভাঙার উৎসমুখ সংস্কার করতে হবে। কিন্তু তা বাংলাদেশে। নদীটি বেশিরভাগ জায়গাতেই জিরো পয়েন্ট দিয়ে বয়ে গিয়েছে। ফলে দু’দেশের সরকারকে এই ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।”
তবে নদিয়া জেলা সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার যিশু দত্ত বলেন, “মাথাভাঙা মূলত পদ্মার জলের উপরেই নির্ভর করে। পদ্মা বহুবার তার গতিপথ পরিবর্তন করায়, তার প্রভাব পড়েছে নদীর উপরে। তবে উৎসমুখ কোথায় কী অবস্থায় রয়েছে তা দেখতে হবে। ওই নদীতে আমরা দ্রুত সমীক্ষা করব।”

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত মাথাভাঙা দিয়ে স্টিমার, লঞ্চ চলত। পরে ভূতাত্ত্বিক নানা পরিবর্তনের ফলে মাথাভাঙায় আর সে ভাবে জল নেই। পদ্মার খাত যেমন গভীর হয়েছে, তেমন তার শাখানদীগুলোর আবার উঁচু হয়ে গিয়েছে। ফলে বর্ষাকালে পদ্মা ফুলে উঠলে তখন মাথাভাঙায় জল ঢোকে। তাই কৃষিকাজের জন্য বর্ষার ওই জল সংরক্ষণ করতে হবে। এমন একটা কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে জলের জোগান অনুযায়ী চাষ করা যায়।
কল্যাণ রুদ্র
নদী বিশেষজ্ঞ
Previous Story Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.