|
|
|
|
অভিযোগ পশ্চিমে |
জঙ্গলের অধিকারে সেই বঞ্চিত আদিবাসীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
২০০৬ সালে কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১১ সালেও জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আদিবাসীরা।
গত পাঁচ বছরে কতটুকু কাজ হয়েছে? যে সব মানুষ জঙ্গলের জমিতে দীর্ঘ দিন বসবাস করছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁদের কিছু আবেদনপত্র তদন্ত করে দেখা হয়েছে। তদন্ত শেষে ৫০ শতাংশেরও বেশি আবেদনপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা জমি পাওয়ার উপযুক্ত বলে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদেরও সকলকে পাট্টা দেওয়া হয়নি। এমনকী প্রায় ১০ হাজার আবেদনপত্র এখনও তদন্তই করা হয়নি! পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো ‘পিছিয়ে পড়া’ জেলায় ‘জঙ্গলের অধিকার আইন’ কার্যকরের চিত্রটা এতটাই মলিন।
বিষয়টি নজরে পড়তেই অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে নতুন সরকার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারই রাজ্যের মুখ্যসচিব জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন, বকেয়া কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। বুধবার জেলাশাসক নিজে ভিডিও সম্মেলন করেন। বিডিও ও বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাশাসক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ২০ জুনের মধ্যে পড়ে থাকা সমস্ত আবেদনের তদন্ত করে জেলাস্তরের ‘ফরেস্ট রাইট কমিটি’তে পাঠাতে হবে। যদি কারও আবেদনপত্র বাতিল করা হয়, তার সঠিক কারণও লিখিত ভাবে জানাতে হবে। বাতিলের কারণ যুক্তিগ্রাহ্য না হলে আবেদনকারীকে জেলা স্তরের কমিটিই জমির পাট্টা দেওয়ার অনুমতি দেবে।
জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “অনেক আবেদনপত্র এখনও পড়ে রয়েছে। তাই দ্রুত তদন্ত করে সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। যাতে উপযুক্ত প্রতিটি ব্যক্তিই দ্রুত পাট্টা পান সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এ বিষয়ে বন দফতরও সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা। তিনি বলেন, “আমরাও প্রতিটি রেঞ্জারকে বলে দিয়েছি, তাঁরাও যেন বিডিও-দের সব রকম সাহায্য করেন। আমাদের দিক দিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হবে।”
জঙ্গলের মানুষকে জঙ্গলের অধিকার দিতে ২০০৫ সালে চালু হয়েছিল আইনল। ২০০৬ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও তা কার্যকরী করতে পদক্ষেপ করে। কিন্তু ২০১১ সালে এসে অর্থাৎ ৫ বছর পরেও সেই কাজের তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ। আইনে বলা হয়েছে, তফসিলি জাতিভুক্ত যাঁরা ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসের আগে থেকে জঙ্গলের জমিতে বসবাস করছেন তাঁরা সেই জমির অধিকার পাবেন। অন্য জাতিভুক্তরা যদি ৩ পুরুষ বা ৭৫ বছর ধরে বসবাস করেন, তা হলে তাঁরাও অধিকার পাওয়ার যোগ্য। তবে তিন পুরুষ ধরে বসবাসের সপক্ষে ন্যূনতম দু’টি প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে। কোনও ব্যক্তি জঙ্গলের জমি দখল করে রেখেছেন আবার অন্যত্রও তাঁর রায়তি জমি রয়েছেএমন ক্ষেত্রে জঙ্গলের জমির অধিকার পাওয়ার কথা নয়।
এ সবই খতিয়ে দেখার জন্য পঞ্চায়েত, মহকুমা ও জেলা--তিনটি স্তরে কমিটি গড়া হয়। আবেদনপত্র সংগ্রহ শুরু হয়। ৫৩ হাজার ৫৪৫টি আবেদনপত্র জমাও পড়ে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৭৫৯টি আবেদনের তদন্ত হয়েছে। ৯ হাজার ৭৮৬টি আবেদনের তদন্তই করা যায়নি। আবার ৪৩ হাজার ৭৫৯টি আবেদনের তদন্ত করে ৩৫ হাজার ৪২৬টি আবেদনপত্রই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৮ হাজার ৩৩৩ জন পাট্টা পাওয়ার উপযুক্ত বলে ‘চিহ্নিত’ হয়েছেন। তাঁদের সবাইকেও এখনও জমির পাট্টা দেওয়া হয়নি। পাট্টা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ১১৬ জনকে। তদন্ত না হওয়া বা পাট্টা না পাওয়ার বেশিটাই ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। কেন এমন হল? সদুত্তর নেই প্রশাসনের কাছে। কেনই বা এত আবেদন বাতিল হল? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু আবেদনপত্র ‘ভিত্তিহীন’ ছিল ঠিকই। আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রঙও দেখা হয়েছে। তবে এ বার যাতে সে ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য বাতিলের যথাযথ কারণ উল্লেখের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। যাঁর আবেদন বাতিল হবে তিনি মহকুমা বা জেলাস্তরে আবেদন করতে পারবেন। উপযুক্ত প্রমাণ দেখালে জেলাস্তরের কমিটি পাট্টা দেওয়ার দাবি মঞ্জুর করবেন। ২০ তারিখের মধ্যে সমস্ত আবেদনের তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এমনকী মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতে যদি পুরনো আবেদনপত্র না খুঁজে পাওয়া যায় তা হলে ফের আবেদনপত্র নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মাইকে ঘোষণারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে ‘জঙ্গলের অধিকার আইন’ কার্যকর করতে রাজ্যস্তর থেকেই কড়া নির্দেশ আসায় নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। |
|
|
|
|
|