|
|
|
|
বন্যা রোধে মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হবে, আশায় ঘাটাল |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। এ বার বন্যাপ্রবণ ঘাটালের ছবিটাও বদলাবে বলে আশা এলাকাবাসীর।
বিধানসভা ভোটের আগে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিয়েছিল। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ক্ষমতায় এলে ঘাটালে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ‘মাস্টার প্ল্যান’ রূপায়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই এখন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করবেন বলেই আশাবাদী ঘাটালবাসী। তা ছাড়া রাজ্যের নতুন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও জেলার মানুষ। ফলে, তিনিও ঘাটালের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবেন বলে মনে করছেন আশায় ঘাটালের মানুষ।
নিরাশ করছেন না মানসবাবু । তাঁর বক্তব্য, “ঘাটালে বন্যা একটা বড় সমস্যা। বন্যার সময়ে আমি নিজে বহু বার ঘাটালে গিয়েছি। দেখেছি বন্যার ভয়াবহতা। ‘মাস্টার প্ল্যানে’র জন্য ডিপিআর (ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট) জমা পড়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রের অনুমোদনের অপেক্ষা। ঘাটালবাসীর এই দাবি যাতে দ্রুত পূরণ হয়, তার জন্য সব রকমের চেষ্টা করছি।” ঘাটাল মহকুমার দুই তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই (ঘাটাল) ও অজিত ভুঁইয়া (দাসপুর)-রও বক্তব্য, “আমরা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মাস্টার প্ল্যান দ্রুত কাযর্কর করার দাবি রেখেছি। সংশ্লিষ্ট অন্য সব মহলেও লিখিত ভাবে জানিয়েছি।”
ঘাটালে বন্যার সমস্যা স্বাধীনতার আগে থেকেই। তবে তা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে পরবর্তীকালে। পঞ্চাশের দশক থেকেই বন্যা এবং ঘাটাল ক্রমে সমাথর্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় চার দশক ধরে আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছাড়াও লড়াই চালাচ্ছে ‘বন্যা-খরা প্রতিরোধ কমিটি’ও। কিন্তু ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ হয়নি। কেন্দ্র এবং রাজ্যদুই সরকারের ভূমিকা নিয়েই গত তিন-চার দশকে ক্ষোভ বেড়েছে ঘাটালবাসীর। |
|
১৯৭৮ সালের বিধ্বংসী বন্যার পর সরকারের টনক কিছুটা নড়েছিল। সেই সময়েই নদী বিশেষজ্ঞ এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা প্রাথমিক ভাবে ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেন। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রাথমিক ভাবে ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়। ১৯৮২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটালে ‘মাস্টার প্ল্যানে’র আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ডিপিআর-টুকু পর্যন্ত তৈরি হয়নি পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে। প্রকল্পটি আস্তে আস্তে চলে যায় ঠান্ডাঘরে।
ঘাটালের বিভিন্ন সংগঠন, বন্যা-খরা প্রতিরোধ কমিটি-সহ একাধিক সংস্থা অবশ্য ‘মাস্টার প্ল্যান’ দ্রুত কার্যকর করতে প্রশাসনের কাছে দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। ২০০৭ সালে ফের বড় মাপের বন্যা হয় ঘাটালে। নতুন করে ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণের দাবি জোরদার হয়। ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট বা ডিপিআর জমা দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। বছর দু’য়েক আগে নতুন করে ডিপিআর তৈরির কাজ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা ডিপিআর তৈরির দায়িত্ব পায়। ইতিমধ্যে ঘাটালের ভৌগোলিক অবস্থা পাল্টেছে, পাল্টাছে নদীর গতিপথ। নদীতে পলির পরিমাণ বেড়েছে, তৈরি হয়েছে একাধিক শাখা নদী। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে সমীক্ষা চালিয়ে ওই সংস্থা ডিপিআর জমা দেয়। ‘গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনে’র পটনা দফতরে মাত্র গত মে মাসে রিপোর্ট চূড়ান্ত ভাবে জমা পড়েছে। বর্তমানে ঘাটাল ‘মাস্টার প্ল্যানে’র জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭৪০ কোটি টাকা। নিয়মানুয়ায়ী কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প রূপায়িত হওয়ার কথা।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, নতুন প্রকল্প রিপোর্ট অনুসারে অনেক কিছুই বদলেছে। ফি-বছর বন্যার জেরে ঘাটালের মানচিত্র পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। প্রকল্পে নতুন নতুন বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় তৈরি, নদী থেকে পলি তোলা, মাটি ফেলার পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ, সেতু তৈরি, ব্যারেজ ও স্লুইস গেট তৈরি, নদীর পাড়ে গাছ লাগানো, একাধিক খাল ও শাখা নদীকে চওড়া করা-সহ নানা প্রস্তাব রয়েছে। মোট প্রকল্প এলাকা ১৬৫৯ বর্গ কিলোমিটার। দুই মেদিনীপুরের ১২টি ব্লক এলাকা এর মধ্যে রয়েছে। সীমানার পশ্চিমে চন্দ্রকোনা-মেদিনীপুর সড়ক, পূর্ব দিকে হুগলির বন্দর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট সেতু পর্যন্ত রূপনারায়ণ এবং পাঁশকুড়া-তমলুক সড়ক, দেনান খাল। উত্তরে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক ও অপর অংশে দ্বারকেশ্বর ও শিলাবতী নদী। দক্ষিণে মেদিনীপুর ক্যানাল, বক্সিখাল, পাঁশকুড়া থেকে কোলাঘাট সেতু পর্যন্ত ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। এখন কত তাড়াতাড়ি এই প্রকল্প রূপায়িত হয়, বন্যার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান ঘাটালবাসী, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|