তাঁদের অবস্থার ‘পরিবর্তন’ কবে?
কলকাতা পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশের বাসিন্দাদের এখন এটাই একমাত্র প্রশ্ন। ওয়ার্ডটির একাংশ তপসিয়া অঞ্চল এবং অন্য দিকটিতে পিকনিক গার্ডেন্সের কিছু অংশ। তপসিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দার অভিযোগ, নাগরিক-পরিষেবার ক্ষেত্রে তপসিয়া এখনও পিছিয়ে।
তিলজলা এবং ইএম বাইপাস রোড সংলগ্ন অঞ্চলটি তপসিয়া অঞ্চল। এলাকায় ঢোকার মুখ থেকেই তপসিয়া হিন্দু কবরস্থানের পাশের রাস্তা দিয়ে গেলে নজরে পড়ে রাস্তার দু’ধারে নোংরার স্তূপ। এলাকার ভিতরের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। রাস্তার ধারে জঞ্জাল ছাড়াও বসতির ভিতরেও জমে রয়েছে প্রায় একতলা বাড়ির সমান জঞ্জালের স্তূপ। প্রতি দিন বাসিন্দারা যাবতীয় আবর্জনা এখানেই ফেলেন। দিনের পর দিন তা জমতে জমতে ওই উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। তপসিয়া ফার্স্ট লেন, তপসিয়া সেকেন্ড লেন এবং স্থানীয় মানুষের কাছে বাগান নামে পরিচিত জায়গাগুলিতে এ রকম জঞ্জালের স্তূপ পরিচিত ছবি।
পুরসভার পক্ষ থেকে জঞ্জাল সাফাইয়ের লোক কি আসে না? তপসিয়া রোডের বাসিন্দা শেখ নওয়াজ বললেন, “অনেক বার পুরসভাকে বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ পাত্তাই দেয় না। সাধারণ মানুষেরও দোষ আছে। তাঁরা বাড়ির জানলা থেকেই আবর্জনা নীচে ফেলেন।” সে দৃশ্য চোখেও পড়ে। প্রতিটি বাড়ির মধ্যবর্তী গলি জঞ্জাল জমে কার্যত অবরুদ্ধ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্যান্য ওয়ার্ডে সকালে বাঁশি বাজিয়ে যেমন পুরসভার সাফাই কর্মীরা গাড়ি নিয়ে আসেন, এই এলাকার কয়েকটি বড় রাস্তা ছাড়া ছোট গলিগুলিতে সেই দৃশ্য দেখা যায় না। |
অথচ, এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ষাট হাজারের কাছাকাছি। তপসিয়ার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান, শেখ আকসার থেকে শুরু করে এ জি গিরি সকলেরই অভিযোগ প্রায় একই। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সংলগ্ন তপসিয়া অঞ্চলে পুরসভার প্রাথমিক পরিষেবাটুকুও পাওয়া যায় না। এলাকার সাতগাছিয়া, কুষ্ঠিয়া, মোল্লা জালান খান মোড় থেকে ধাবা পাড়, সব জায়গাতেই জল ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। প্রতিটি জায়গাতেই খোলা নর্দমা। ফলে জল বেরতে না পেরে আটকে থাকে সারা বছর। মশা-মাছি আর দূষণের আঁতুরে পরিণত হয়েছে এলাকাটি। তপসিয়া ফার্স্ট লেন, সেকেন্ড লেন, ডি জে খান রোড সব জায়গাতেই সমস্যার চিত্রটা প্রায় একই রকম। সব থেকে বেশি সমস্যা বর্ষাকালে। উন্নত জল ও নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বর্ষাকাল হলেই অলিগলি ছাড়িয়ে বড় রাস্তাতেও জল জমে যায়।
গোটা ওয়ার্ডেই পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সারা দিনের গৃহস্থালির কাজ সারতে হয় গভীর নলকূপের জলে। কিন্তু সেই জল পানের অযোগ্য। তপসিয়া ফার্স্ট লেনের বাসিন্দা শেখ শামিম আলির কথায়: “ওয়ার্ডের অধিকাংশ জায়গাতেই এখনও মিষ্টি পানীয় জল পাওয়া যায় না। গার্ডেনরিচ থেকে পানীয় জল সরবরাহেও সমস্যা রয়েছে। প্রতি দিন রাত তিনটে নাগাদ ওয়ার্ডে পুরসভার বিভিন্ন দিকে পানীয় জল দেওয়ার জন্য জলের গাড়ি ঢোকে। প্রায় হাতাহাতি করে এক-দু’বালতি জল নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।” আর যাঁরা সকালে পুরসভার গাড়ি থেকে জল নিতে পারেন না তাঁরা তপসিয়া ঢোকার মুখে খালের পাশের পুরসভার কল থেকে জল নিয়ে যান। দু’-তিনটি জায়গা ছাড়া এই কলের জল পাওয়া যায় না বলে সেখানেও চোখে পড়ে লম্বা লাইন। তা ছাড়াও ভ্যানে করে বড় বড় জারে বিভিন্ন বাড়িতে জল বিক্রি করেন অনেকেই। এ রকমই এক বিক্রেতা জানালেন, প্রতি এক লিটার জার পিছু ৫ থেকে ৬ টাকা করে লাভ হয়। এক একটা বাড়িতে দিনে দশ লিটারের মতো পানীয় জল তাঁরা বিক্রি করেন। |
কিন্তু ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভিতরেই পিকনিক গার্ডেন্সের কিছুটা অঞ্চল রয়েছে। সেখানে কিন্তু পরিষেবার হাল এতটা শোচনীয় নয় বলে তপসিয়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের বক্তব্য। স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের রাফত জাভেদ বলেন, “পিকনিক গার্ডেন্স কলোনি এলাকা হওয়ায় বাসিন্দারা অনেকটাই সচেতন। কিন্তু তপসিয়া আগে বস্তি এলাকা ছিল। পরবর্তীকালে অবৈধ নির্মাণ গড়ে ওঠায় এবং বাইরে থেকে প্রচুর লোক এসে বসবাস শুরু করায় এক দিকে যেমন জনসংখ্যার চাপ বেড়েছে, তেমনই সচেতনতার অভাবও রয়েছে। যে যেখানে পারেন জঞ্জাল ফেলেন। সরু গলিগুলোতে সাফাইকর্মীরা গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারেন না। তা ছাড়া বর্তমানে সাফাইকর্মীর অভাব রয়েছে। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জলের যোগান দিতেও সমস্যা হচ্ছে। গার্ডেনরিচের মিষ্টি পানীয় জলের ব্যবস্থা এখানে নেই। তবে ধাপা জল প্রকল্প তৈরি হয়ে গেলে আশা করি পানীয় জলের সমস্যা খানিকটা মিটবে।”
এই ওয়ার্ডের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বললেন, “আমি জানি, ওই ওয়ার্ডে প্রচুর সমস্যা আছে। তবে সব কিছু ঠিক করতে সময় লাগবে। জলের যে সমস্যা সেটা ঠিক করার জন্য ব্যবস্থা নিতে আমি আগে গিয়েছিলাম। পুরো পরিকল্পনা করে এর পর আমরা উন্নয়নের জন্য এগবো।” |