এই বর্ষাতেও ভাসতে চলেছে রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকা। কারণ, জমি জটে আটকে রয়েছে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার নিকাশি সংস্কারের পরিকল্পনা। বাসিন্দাদের কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রে খবর, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া কঠিন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকায় কোনও নিকাশি পরিকাঠামো আজও গড়ে ওঠেনি। কলকাতার লাগোয়া ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা খালের উপরে নির্ভরশীল। নর্দমা দিয়ে খালে জল যায়। সংস্কারে অভাবে খালগুলি নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে বর্ষায় নর্দমা উপচে বিভিন্ন অঞ্চল ভেসে যায়। |
এই অবস্থা পাল্টাতে নিকাশি সংস্কারের পরিকল্পনা করেছিল তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড। ৩৫টি ওয়ার্ডের নিকাশি ঢেলে সাজতে ৭০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) কাছে তারা জমাও দেয়। পুর-কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, এতে দীর্ঘ দিনের নিকাশি সমস্যার সুরাহা হবে।
কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়্যাল মিশনের (জেএনএনআরইউএম) আওতায় এই প্রকল্পের কাজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এই প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়। কারণ, এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেখাতে পারেনি পুরসভা। রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা অবশ্য কেএমডিএ-র এই যুক্তি মানতে নারাজ। পুরসভা সূত্রে খবর, নিকাশি প্রকল্পে নতুন করে জমি নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, এই প্রকল্পে নর্দমা সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। যাতে জমির প্রয়োজন হয় না। তা ছাড়া জমির বিষয়টি জানাতেও কেএমডিএ বিলম্ব করে বলে পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। |
পুরসভা সূত্রে খবর, আগের বামবোর্ডও নিকাশি সংস্কারের পরিকল্পনা করেছিল। এর পরে ক্ষমতার বদল হয়। ক্ষমতায় এসে তারা নতুন প্রকল্প জমা দেয়। প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের তড়িৎ চক্রবর্তী বলেন, “যে প্রকল্প কেএমডিএ-র কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল তা পুর এলাকার নর্দমাগুলি নিয়ে। এই প্রকল্পের কোনও বিকল্প নেই। কারণ, নর্দমার সংস্কার না হলে এলাকার নিকাশি সমস্যা কোনও দিন মিটবে না। এ বিষয়ে সবার এক সঙ্গে লড়াই করা দরকার। বর্তমান বোর্ড চাইলে আমরা সাহায্য করতে রাজি আছি।” উপ-পুরপ্রধান এবং সোনারপুর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের ফিরদৌসী বেগম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে এর মধ্যেই রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই জট খোলার জন্য আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করব।” সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক তৃণমূলের জীবন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই সমস্যা সর্ম্পকে পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব।”
নিকাশি সংক্রান্ত এই প্রকল্পের জন্য জমি যে কোনও সমস্যা নয় তা জানিয়ে পুরসভার তরফে কেমডিএ-র কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রায় আড়াই মাস হয়ে গেলেও চিঠির কোনও উত্তর দেয়নি কেএমডিএ। যদিও কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।” রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন (স্বাধীন দায়িত্ব), সেচ ও জলপথ পরিবহণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী তৃণমূলের শ্যামল মণ্ডল বলেন, “এই প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজখবর নেব। তার পরে যা করণীয় করব।” |