বাংলার লোকক্রীড়া ও লোকসংস্কৃতি চর্চার জন্য ১১ বছর আগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে জমি পেয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পাশাপাশি, সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলায় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু গত দু’বছর ধরে সংস্থার কাজকর্ম শিকেয় ওঠে। প্রশ্ন উঠেছে, কার্যত বন্ধ একটি সংস্থার কাছ থেকে সরকার জমি ফিরিয়ে নিচ্ছে না কেন?
|
বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, “সুভাষ চক্রবর্তী ক্রীড়ামন্ত্রী থাকার সময়ে নানা কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংস্থাটি জমিটি নিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পরেই সব শিকেয় ওঠে। আমি ক্রীড়া দফতরের প্রধান সচিবকে সব কিছু খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ও ভাবে জমি ফেলে রাখা যাবে না।” যদিও নতুন সরকার এই সংস্থার পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগী হয়েছে। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র জানান, কেন্দ্রটিকে পুনরায় চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ভিতরে ২৯ নম্বর র্যাম্পের উল্টো দিকে বাংলার চিরাচরিত খেলাগুলির চর্চা ও বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য একটি জলাশয় ঘিরে তৈরি হয়েছিল তরণী মাঝির ঘাট। ২০০০ সালে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আবেদনে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রটি গড়ে তোলায় সহযোগিতা করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। বছরে ১০ হাজার টাকা লাইসেন্স ফি-তে জলাভূমি-সহ পুরো জায়গাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হয় সংস্থাকে। ওই সংস্থার অন্যতম কর্ণধার ছিলেন প্রাক্তন সিবিআই অধিকর্তা উপেন বিশ্বাস। মূলত তাঁরই উদ্যোগে তরণী মাঝির ঘাটে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রশিক্ষণ শুরু হলেও গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে খেলাধুলো বা প্রশিক্ষণ কিছুই হচ্ছে না। |
সংস্থা সূত্রে খবর, মূলত অনুদানের অভাবেই এই হাল হয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ২০টি নৌকা জলে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত ঘরটিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘাটটিরও খারাপ অবস্থা। আলোর ব্যবস্থাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাতে ঘাটের পাশেই বেসরকারি বাস পার্ক করা থাকে। বাসকর্মীদের খাবারের উচ্ছিষ্ট চার দিকে ছড়িয়ে রয়েছে। ঘাটের বেড়া ভেঙে গিয়েছে। জলাশয় শ্যাওলায় ভরা। তরণী মাঝির ঘাটের নামকরণও হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস মনে রেখে। ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মাস্টারদা সূর্য সেন ও তাঁর সতীর্থদের কর্ণফুলি নদী পার করাতেন তরণী মাঝি। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে যুবকেরা এখানে অবৈতনিক প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন। বিঘে দশেক জমির মধ্যে ছিল জলাশয়। এখানকার এক প্রাক্তন কর্মী জানান, সেখানেই চলত প্রশিক্ষণ-পর্ব। বন্যায় ভেসে যাওয়া গ্রামের মানুষকে কী ভাবে বাঁচাতে হয়, ডুবন্ত কাউকে কী ভাবে বাঁচাতে হয় তা শেখানো হত। শেখাতেন সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষকেরা। |
সংস্থার সম্পাদক অনিল ভুতোরিয়া বলেন, “মূলত অর্থাভাবে প্রশিক্ষণের কাজ বন্ধ। আগের মতো এখন আর অনুদান আসে না। গত কয়েক বছর ধরে লাইসেন্স ফি-ও নিচ্ছে না সরকার। আমরা তা দেওয়ার জন্য চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু সরকারের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি।”
টাকার অভাবেই যে ওই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা মেনে নেন উপেনবাবুও। উপেনবাবু এখন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে তরণী মাঝির ঘাট নিয়ে কথা বলেছি। আমরা দু’জনে খুব শীঘ্রই সেটি দেখতে যাব।” তিনি জানান, আবার নতুন করে সেখানে প্রশিক্ষণ চালু করা হবে। যে বেসরকারি সংস্থা সেটি চালাচ্ছিল, তারাই চালাবে। তবে নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের হাতে। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “তরণী মাঝির ঘাটটি অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উপেনবাবু এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন। এখানে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। আবার শুরু করার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে।” |