|
|
|
|
বলল হাইকোর্ট |
বটানিক্যাল সাফ করতে হবে ৩ দিনে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সময় দিয়েছিল পনেরো দিন। আদালত নির্দেশ দিল, তিন দিনের মধ্যেই বটানিক্যাল গার্ডেনের যাবতীয় বর্জ্য সাফ করে ফেলতে হবে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নজরদারিতে তীব্র রাসায়নিক দূষণ ধরা পড়েছে বটানিক্যালে। বাগানের ভিতরে বিপজ্জনক রাসায়নিকের স্তূপ। প্রাচীন ওই উদ্যানের কয়েকটি পুকুরে বাইরের একটি কাপড় রং করার কারখানা থেকে রাসায়নিক বর্জ্য এসে জড়ো হচ্ছে। বাগানের যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জমে রয়েছে বর্জ্য প্লাস্টিক আর আবর্জনা। পর্ষদ নির্দেশ দিয়েছিল, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যাবতীয় বর্জ্য সাফ করে ফেলতে হবে। শুক্রবার পর্ষদের ওই নির্দেশ সম্পর্কে আদালতকে জানান পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি শুনে এবং বটানিক্যালের ভয়াবহ দূষণের অবস্থা জানার পরে নির্দেশ দিয়েছে, তিন দিনের মধ্যেই যাবতীয় দূষণ সাফ করে আদালতে রিপোর্ট দিতে হবে।
বটানিক্যালের পাশেই রয়েছে কাপড় রং করার একটি ‘বেআইনি’ কারখানা। পর্ষদের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ওই কারখানায় কাপড় রং করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক। নিকাশির সঙ্গে যা বটানিক্যালের পুকুরে গিয়ে পড়ছে এবং বাগান চত্বরের সামগ্রিক পরিবেশে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনছে। সম্প্রতি নজরদারি চালিয়ে পর্ষদের আরও নজরে এসেছে দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্য গাছে ভরা এই প্রাচীন উদ্যানে ডাঁই হয়ে রয়েছে বর্জ্য প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা। জমে রয়েছে প্রচুর রাসায়নিক বর্জ্যও। ওই বর্জ্য অন্যত্র ফেলার ব্যবস্থা করেননি কর্তৃপক্ষ। পর্ষদের বক্তব্য, বাগানের মধ্যে এই ধরনের আবর্জনা জমে থাকায় জলবাহিত হয়ে তা উদ্যানের পুকুর ও জলাশয়গুলিকে দূষিত করে তুলছে। দূষিত হচ্ছে ভূগর্ভের জলও। যার জেরে ক্ষতি হচ্ছে বাগানের সামগ্রিক বৃক্ষ-জগতের।
ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন নির্দেশ দেয়, আগামী সোমবারের মধ্যে বটানিক্যালের যাবতীয় বর্জ্য সাফ করতে হবে। নোংরা দূষিত জল তুলে ফেলে পুকুর পরিষ্কার করতে হবে। ওই সাফাই কাজের রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে মঙ্গলবার। তার পরে বুধবার ফের শুনানি। আদালত জানিয়েছে, যদি সোমবারের মধ্যে বর্জ্য সাফ না করা হয়, তা হলে পর্ষদ অবশ্যই পরিবেশ আইন মোতাবেক গার্ডেন-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। পরিবেশ আইন অমান্য করলে জেল ও জরিমানা, দুই-ই হতে পারে।
পাশাপাশি, বটানিক্যালের ভিতরে যে ২৪টি পুকুর আছে, তারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং সবগুলিরই আবার গঙ্গার সঙ্গে যোগ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় অনেক পুকুর মজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। গার্ডেন-কর্তৃপক্ষ কলকাতা বন্দরকে দু’কোটি টাকা দিয়েছিলেন পুকুর সংস্কারের জন্য। বন্দর-কর্তৃপক্ষ ওই কাজ করতে অস্বীকার করে টাকা ফেরত দেন। আদালত এ দিন নির্দেশ দিয়েছে, পুকুর সংস্কার বন্দর-কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। কারণ, ওই কাজে তাঁরা বিশেষজ্ঞ। আদালত সুভাষ দত্তকে নির্দেশ দিয়েছে, তিনি যেন ব্যক্তিগত ভাবে বন্দর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বটানিক্যালের পুকুর সংস্কারের বিষয়টি ত্বরান্বিত করেন।
অন্য দিকে, কালীঘাট মন্দিরের অপরিচ্ছন্নতা এবং নানা অব্যবস্থা নিয়ে জনৈক সুরভী ঘোষের করা জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ অবিলম্বে কালীঘাট মন্দির কমিটিকে মন্দিরের ভিতর ও বাইরে সাফসুতরো রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আগেও এ নিয়ে একটি মামলায় একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তার অনেকগুলোই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। সিসিটিভি বসানোর কাজও শেষ হয়নি। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ মন্দির কমিটি, রাজ্যের মুখ্য আর্কিটেক্ট এবং আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়াকে এই মামলার নোটিস পাঠাতে বলেছে। দু’সপ্তাহ পরে পরবর্তী শুনানির দিন তিন তরফের আইনজীবীকেই হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। |
|
|
|
|
|