|
|
|
|
চোরাশিকারি পালালেও মিলল তাজা গুলি আর রাইফেল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
উত্তরবঙ্গের অভয়ারণ্যগুলিতে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য চলছেই। বৃহস্পতিবার রাতে কোচবিহার বন বিভাগের অন্তর্গত জলদাপাড়ার জঙ্গলে টহল দেওয়ার সময়ে বনকর্মীরা ৪ জন চোরাশিকারিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন। বনকর্মীরা শূন্যে ৪ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে চোরাশিকারিদের তাড়া করেন। শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা না গেলেও ঘটনাস্থল থেকে আধুনিক একটি রাইফেল, ১৬ রাউন্ড গুলি-সহ বেশ কিছু সামগ্রী উদ্ধার হয়। প্রাথমিক ভাবে ওই দুষ্কৃতীরা নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গণ্ডার শিকার করতেই তাঁরা ওই জঙ্গলে ঢোকে বলে মনে করছেন বনকর্তারা। চোরাশিকারিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। কোচবিহারের বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও বলেন, “জলদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জের তোর্সা ইস্ট কর্নারে কুনকি হাতির পিঠে চড়ে নজরদারির সময়ে চার জনকে দেখতে পান বনকর্মীরা। ওই দুষ্কৃতীরা বনকর্মীদের উপরে হামলারও চেষ্টা করে। গণ্ডার শিকারের জন্য চোরাশিকারিরা জড়ো হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।”
সম্প্রতি মহানন্দা অভয়ারণ্যে বাদরঝোরা এলাকা থেকে দু’টি হাতির পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হাতির মাথার খুলিতে দু’টি গুলির চিহ্ন মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে চোরাশিকারিদের তৈরি মাচাও। চোরাশিকারিরাই ওই দুটি হাতিকে মেরেছে বলে সন্দেহ বন দফতরের স্থানীয় কর্তাদের। তার কিছু দিন পরেই জলদাপাড়ায় চোরাশিকারি আনাগোনার প্রমাণ মেলায় উদ্বিগ্ন বনকর্তারা। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন নিজে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, “দফতরের কর্মীদের তৎপরতায় জলদাপাড়ার জঙ্গলে রাইফেল, গুলি উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজেও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে যেতে চাইছি।”
জলদাপাড়ার ঘটনাটি জানার পরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের পরিবেশপ্রেমী মহলেও। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের(ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “জলদাপাড়ার ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে চোরাশিকারিদের একটি চক্র ভালো রকম সক্রিয়। মহানন্দা অভয়ারন্যের ঘটনাটি বনকর্তাদের প্রথম থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল। উত্তরবঙ্গের অন্য এলাকাগুলিতে বুনো হাতির যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।”
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণী হত্যায় চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিনের সমস্যা। চোরাশিকারিদের দাপটে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে আশির দশকে এক সময় গণ্ডারের সংখ্যা কমে ১৪টিতে দাঁড়ায়। কয়েক বছর আগে ডুয়ার্সের কোদালবস্তিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়। সে বারও চৌরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য নিয়ে হইচই শুরু হয়। চোরাশিকারিদের পেতে রাখা ফাঁদে জখম হয়ে জলপাইগুড়ির বনাঞ্চলে মৃত্যু হয় চিতাবাঘ-শাবকের। জলদাপাড়ায় হরিণ মেরে মাংস ভাগ করে নেওয়া, মহানন্দা অভয়ারণ্য লাগোয়া এলাকায় কীটনাশকের প্রভাবে তিনটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও হইচই পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন হইচইয়ের পরে পরিস্থিতি শান্ত হলেই চোরাশিকারিরা যে ফের জঙ্গলে ঢুকে পড়ছে সেটা বৃহস্পতিবার রাতে জলদাপাড়ার জঙ্গলের ঘটনাতেই প্রমাণিত বলে মনে করছেন বনকর্তারাও।
বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের অভিযোগ, “আগের বাম সরকার চোরাশিকারি, দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। জলদাপাড়া ঘুরে এসে সামগ্রিক অবস্থার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে উত্তরবঙ্গে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরুর আর্জি জানাব।” যদিও বর্তমান বনমন্ত্রীর ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায়। তিনি বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই জলদাপাড়ায় গণ্ডারের সংখ্যা ১৪ থেকে বেড়ে ১৫০টি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে চোরাশিকারিদের গ্রেফতার, জেল পর্যন্ত হয়েছে। ফলে, আমরা কিছু করিনি, এমন অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।” |
|
|
|
|
|