মায়ের আপত্তি খারিজ
বাবা কে, ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ বহাল হাইকোর্টেও
ছেলে বা মেয়ে কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে মা ও বাবার টানাটানির মামলা অভিনব কিছু নয়। কিন্তু এ বার কন্যাসন্তানের পিতৃত্ব নিয়েই সংশয়। হাইকোর্টে প্রশ্ন উঠল, ওই মেয়ে কার? বাবা কে?
সাড়ে তিন বছরের শিশুটির নাম নিশা। তার মা কৃষ্ণা সাঁতরার দাবি, কিশোর সাঁতরা তাঁর স্বামী এবং তিনিই নিশার বাবা। কিন্তু কিশোরের বক্তব্য, তিনি নিশার বাবা নন। এই সমস্যা কেন? আসলে কিশোর ও কৃষ্ণার বিয়ের তিন মাস পরেই নিশার জন্ম হয় এবং যাবতীয় জটিলতার শুরু সেখান থেকেই। নিম্ন আদালত ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাতে আপত্তি মায়ের।
তা হলে সমাধান হবে কী ভাবে?
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের নির্দেশ, ডিএনএ পরীক্ষাই করতে হবে। কারণ, ডিএনএ পরীক্ষাই এই সমস্যা মেটানোর একমাত্র পথ। বিচারপতি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের খাতিরে ওই পরীক্ষা করা জরুরি তো বটেই। সর্বোপরি শিশুটির নিজের প্রকৃত পরিচয় জানার অধিকার আছে। বড় হয়ে শিশুটিকে যাতে বিড়ম্বনায় পড়তে না-হয়, সেই জন্য তাকে সংশয়াতীত ভাবে তার পিতৃপরিচয় জানাতে হবে। এবং একমাত্র ডিএনএ পরীক্ষাই সেই পরিচয় জানার উপায়।
২০০৭ সালের ২৬ জুন হাওড়া ধুলাগড়ির বাসিন্দা কৃষ্ণার সঙ্গে পাশের গ্রামের কিশোরের বিয়ে হয়। ওই বছরেরই ৫ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিশোর বিয়ের কয়েক দিন পরেই বাইরে তাঁর কর্মস্থলে চলে যান। তবে আদালতে তিনি জানিয়েছেন, ফুলশয্যার রাত থেকেই তাঁর সন্দেহ হয়েছিল। কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটিতে বাড়ি এসে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কিশোর জানতে পারেন, তাঁর একটি কন্যাসন্তান হয়েছে। এই বৃত্তান্ত শুনেই তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসেন।
তার পরে খোরপোষের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা করেন কৃষ্ণা। সেই মামলার সূত্রে কৃষ্ণা আদালতে বলেন, বিয়ের আগেই কিশোরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। কৃষ্ণার জামাইবাবু গোপীনাথ মণ্ডলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব কিশোরের। তাঁর দিদির বাড়িতে প্রায়ই যেতেন কিশোর। দোলের সময় দিদিদের গ্রামে মেলা হয়। কৃষ্ণা সেই সময় দিদির বাড়িতে যান। কিশোরও মেলা উপলক্ষে গোপীনাথবাবুর বাড়িতে এক সপ্তাহ ছিলেন। সেই সময় তাঁর সঙ্গে কৃষ্ণার প্রণয়-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিশোর তাঁকে বিয়ে করবেন বলে কথা দেন। সেই সময় তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। কিন্তু কৃষ্ণার গর্ভে সন্তান আসার পরে কিশোর তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি রাজি হন। বিয়ে হয়ে যায়। কিশোর অবশ্য কৃষ্ণার এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন। তিনি বলেন, এই ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। এই অবস্থায় কন্যাসন্তানটির প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কৃষ্ণা কলকাতা হাইকোর্টে আপিল মামলা করেন। নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, এ ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষাই করতে হবে। অন্য সব বিষয় বাদ দিলেও শিশুটির নিজের স্বার্থেই তার পিতৃপরিচয় জানা প্রয়োজন। এই শিশু বড় হয়ে যাতে আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে না-ভোগে, সেটা নিশ্চিত করতেই হবে।
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.