|
|
|
|
কে কোথায় জমি পাবেন, চলছে হিসেবনিকেশ |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • সিঙ্গুর |
রাত থেকেই চলছিল নাচানাচি। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই গোটা সিঙ্গুর নেমে এসেছিল রাস্তায়। সবুজ আবিরে আবিরে আকাশ-বাতাসের রঙও যেন বদলে গিয়েছিল। উৎসবে গা ভাসালেও সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতারা জানালেন, এখন অনেক দায়িত্ব। কোথায় কত জমি কাকে ফেরত দেওয়া হবে, তার প্রাথমিক হিসেব-নিকেশ শুরু করে দেওয়া হয়েছে শুক্রবার থেকেই।
কমিটি সূত্রের খবর, প্রকল্প এলাকার মধ্যে মূলত চারটি জায়গার জমি অনিচ্ছুক চাষিদের ফেরত দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রাথমিক হিসেব মতো, গোপালনগর মৌজার ঘোষপাড়া, সাহানাপাড়া, কোলেপাড়া এবং উজ্জ্বল সঙ্ঘ এলাকায় ২০০-২৫০ একর জমি আছে। উত্তর বাজেমিলিয়া লাগোয়া এলাকা থেকে প্রায় ৪০ একর জমি পাওয়া যাবে। বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়ায় মিলবে অন্তত ৭০ একর। জয়মোল্লাতেও ৭০ একর জমি ফেরত হতে পারে। এ ছাড়াও, ৪৬ একর জমি আছে তালিকাভুক্ত বর্গাদারদের, যাঁরা কৃষিজমি রক্ষা কমিটিতে সামিল হয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেই জমিও ফেরত দেওয়া যেতে পারে। অধিগ্রহণের আগে ৫৩ একর জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা ছিল। সেই জমিও ফেরত দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যায় কি না, ভাবা হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৯০০ অনিচ্ছুক চাষিকে জমি ফেরত দিতে হবে। |
|
সিঙ্গুরে উচ্ছ্বাস জনতার। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন প্রকাশ পাল। |
সিঙ্গুরে শুক্রবার যেমন উৎসবের মেজাজ, তাতে জমি ফেরতের প্রক্রিয়া কিংবা এ সব নিয়ে কোনও আলোচনার মতো পরিস্থিতিতে কেউ নেই। ফেরত দেওয়া হলেও সেই জমি কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাবে কি না, সেই কূটতর্কও কেউ করতে চাইছেন না। তবে সামান্য যে প্রশ্নটি বাতাসে ভাসছে, তা হল যে, ৪০০ একর জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলছে সরকার, তা যথেষ্ট হবে তো?
সবুজ আবিরে ঢেকে যাওয়া চেহারাটা সাফ করতে করতে একগাল হেসে বেচারাম মান্না (সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তথা হরিপালের নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক) বললেন, “কিচ্ছু সমস্যা হবে না। অনেক আন্দোলন, অনেক অসুবিধার মধ্যে দিয়ে জমি ফেরত পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত। সব দিক ভেবে-চিন্তে কোথায় কাকে কী ভাবে জমি দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। এত দূর যখন এগিয়েছি, তখন কোনও বাধাই আর বাধা নয়।”
কৃষিজমি রক্ষা কমিটির তরফে নতুন সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, জমি-ফেরত প্রক্রিয়ায় কোথায় কাকে জমি দেওয়া হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে যেন তাঁদের সামিল করা হয়। সরকারি ভাবে এখনও সে বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত না মিললেও বেচারামবাবুরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানালেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের ধারণা, অনিচ্ছুক চাষিদের ফেরত দেওয়ার জন্য ৩০০ একরের বেশি জমি লাগার কথা নয়।
তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় তাঁরা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, যার যেখানে জমি ছিল, তাকে সেই জমি ফেরত দেওয়া যায় কি না, তা দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকের জমি এক লপ্তে ফেরত দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও ভাবনা আছে। তৃতীয়ত, কৃষক পরিবারের বসবাস যেখানে, সেখান থেকে খুব দূরবর্তী এলাকায় জমি পেলে জমি ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে। এই সমস্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখেই জমি ফেরত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানালেন বেচারামবাবু।
প্রকল্প এলাকার মধ্যে গোপালনগর মৌজায় প্রায় ১ একর জমিতে একটি মন্দির ও আশ্রম আছে। সিঙ্গুর আন্দোলনের উত্তপ্ত দিনগুলিতেও সেখানে নিয়মিত পূজাপাঠ হয়েছে। ওই জমি ‘দেবোত্তর সম্পত্তি’ বলে জানালেন দেখভালের দায়িত্বে থাকা গণেশ চক্রবর্তী। তিনি নিজেও সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে সামিল ছিলেন। সরকারের কাছে গণেশবাবুর অনুরোধ, যে ভাবে এখানে ধর্মাচরণ হয়ে আসছে, তার সুযোগ যেন ভবিষ্যতেও থাকে।
মহাদেব দাস, মানিক দাস প্রমুখ জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূল নেতা জানান, বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে লোকজন যেন প্রকল্প এলাকার মধ্যে ঢুকে না পড়ে, সে জন্য দলের নির্দেশে সতর্ক ছিলেন তাঁরা। ১৩ মে ভোটের ফল প্রকাশের পরে বেশ কিছু ‘অতি উৎসাহী’ মানুষ ঢুকে পড়েছিলেন পাঁচিল টপকে। এ দিন পাঁচিলের ও-পারে, প্রকল্প এলাকায় টাটাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছিল। প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন ছিলেন। তবে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা যায়নি। |
|
|
|
|
|