দেশ জুড়ে প্রচারে নামবে ‘আক্রান্ত’ সিপিএম
বিক্ষোভ সামলাতে কংগ্রেস পিছোতে চান কারাট
দুই বাম-দুর্গে পতনের কারণ খোঁজার মধ্যেই আগামী পার্টি কংগ্রেসের দিনক্ষণ নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়ে গেল সিপিএমের মধ্যে। পার্টি কংগ্রেস কোথায় হবে, তা নিয়েও দলের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে দলের বিপর্যয়ের পরে প্রকাশ কারাটের উপরে ক্ষুব্ধ দলের একাংশ চান, চলতি বছরেই পার্টি কংগ্রেস সেরে ফেলা হোক। সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জিইয়ে রেখেই এ বছর ডিসেম্বরে পার্টি কংগ্রেস ডাকা হোক, এমনটাই চাইছিলেন ওই নেতারা। আর ঠিক এইখানটাতেই একেবারে ভিন্ন পথে চলতে চান প্রকাশ। ক্ষোভের আঁচ কমাতে পার্টি কংগ্রেস দেরিতে করানোর কৌশল নিতে চাইছেন তিনি। সে কারণে পার্টি কংগ্রেস আগামী বছর এপ্রিলে করার পক্ষে সওয়াল করছেন তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা।
দুই বাম-শাসিত রাজ্যে হারের পরে দলের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা বিলক্ষণ জানেন প্রকাশ। কেরলে তুলনায় ভাল ফল হলেও আসলে তা যে তাঁর ঘোরতর বিরোধী ভি এস অচ্যুতানন্দনের ‘সাফল্য’, তা ঢোঁক গিলে হলেও মেনে নিতে হয়েছে তাঁকে। কাজেই দলের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভকে চ্যালেঞ্জ না জানিয়ে আগে তাকে প্রশমিত করতে চাইছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। সেই জন্যই পার্টি কংগ্রেসের আগে যথেষ্ট সময় নিতে চাইছেন তিনি।
একই ভাবে পার্টি কংগ্রেস কোথায় হবে, তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। আজ পলিটব্যুরোতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সিপিএমের শেষ পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল ২০০৮ সালে, কেরলের কোয়ম্বত্তূরে। এ বারের পার্টি কংগ্রেসও কেরলের কান্নুর বা পালাক্কাড়ের মতো কোনও শহরে করার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু প্রকাশ-বিরোধী শিবিরের দাবি, পার্টি কংগ্রেস কলকাতায় করা হোক। তাতে হারের পরে রাজ্যের দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাও দেওয়া যাবে। পলিটব্যুরোয় অবশ্য কেরলের পক্ষেই পাল্লা ভারী। বৈঠক শেষে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “আগামী কাল থেকে শুরু কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
সিপিএমের সংবিধান অনুযায়ী, তিন বছর অন্তর পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা। ২০০৮-এ কোয়ম্বত্তূর পার্টি কংগ্রেসের পর চলতি বছরের এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য পার্টি কংগ্রেস এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী, আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যেই পার্টি কংগ্রেস সেরে ফেলতেহবে। কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর পরেই সীতারাম ইয়েচুরি চলতি বছরের ডিসেম্বরে পার্টি কংগ্রেস সেরে ফেলার কথা তোলেন। তার আগে দলের নিম্নতম স্তর থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত সম্মেলন সেরে ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় ছয় মাস সময়ও হাতে রয়েছে। কিন্তু প্রকাশ কারাট-শিবিরের যুক্তি, এখন দুই রাজ্যেই ভোটের ফলাফল নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। জেলা কমিটিগুলিও তা নিয়ে ব্যস্ত। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত। আগে সেই দিকটা সামলে কয়েক মাস পর থেকে পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি শুরু করাই ভাল।
কলকাতায় পার্টি কংগ্রেস না করার পক্ষেও একই যুক্তি খাড়া করা হয়েছে। প্রকাশদের বক্তব্য, এখন হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে তৃণমূলের আক্রমণ প্রতিরোধ করার দিকেই নজর দেওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনার জন্য পলিটব্যুরো যে নোট তৈরি করেছে, সেখানেও সিপিএমের উপর তৃণমূলের আক্রমণের প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রচারে নামার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকাশদের যুক্তি, কলকাতায় পার্টি কংগ্রেস করে এত তাড়াতাড়ি রাজ্যের দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত
করার চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই। কারণ পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন পাঁচ বছর পরে।
চলতি পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে পার্টি কংগ্রেসের স্থান-কাল নিয়ে আলোচনাটাই গোড়ায় এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন প্রকাশরা। তাঁদের বক্তব্য, দু’দিনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে হার নিয়েই বিস্তৃত আলোচনা করতে হলে তার পরে আর ওই সব নিয়ে আলোচনার সময় থাকবে না। আজ কিন্তু পলিটব্যুরোয় ঠিক হয়, এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটিতেই ঠিক করে ফেলতে হবে, কবে পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। ইয়েচুরি বলেন, “এমনিতেই পার্টি কংগ্রেস এক বছর পিছনো হয়েছে। আর পিছনো সম্ভব নয়।”
Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.