কফিনবন্দি হয়েও জন্মভূমিতে ফিরতে পারলেন না মকবুল ফিদা হুসেন। আজ লন্ডনের বাইরে ওকিংয়ের ব্রুকউড সমাধিস্থলে সমাহিত করা হল তাঁকে।
পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে কার্যত স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন হুসেন। মন থেকে কখনই সেটা মেনে নিতে পারেননি। বারবারই ফিরতে চেয়েছেন ভারতে। বলতেন, জন্মস্থান পান্ধারপুরের কথা। প্রিয় শহর মুম্বইয়ের কথা। কিন্তু বিতর্ক আর সমালোচনার জের তাঁকে ভারত থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছে। দেশে ফেরার সেই অদম্য ‘ইচ্ছা’-র কথাই আজ বারবার শোনা গেল শিল্পীর শেষকৃত্যেও।
গত কাল ভারত সরকার জানায়, হুসেনের পরিবার চাইলে তাঁর দেহ ভারতে নিয়ে এসে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে পারে। লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, হুসেনের পরিবার চাইলে তাঁর দেহ ভারতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে হুসেনের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ক্ষোভ, বড্ড দেরি করে ফেলেছে ভারত। তাই শেষ পর্যন্ত লন্ডনেই সমাহিত হলেন ভারতের ‘ফিদা’।
শেষ যাত্রা কফিনবন্দী শিল্পীর দেহ পুত্রের কঁধে। ছবি: শ্রাবণী বসু
রঙিন ক্যানভাসের মতোই বর্ণময় শিল্পীর শেষকৃত্য কিন্তু সম্পন্ন হল সাদামাঠা ভাবে। মে ফেয়ারে তাঁর বিলাসবহুল জীবনের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল দক্ষিণ লন্ডনের অনাবাসী ভারতীয় অধ্যুষিত টুটিংয়ের ইদারা-ই-জাফেরিয়া মসজিদে তাঁর শেষকৃত্য। আত্মীয়-বন্ধু থেকে শুরু করে হুসেনের বহু গুণগ্রাহী শ্রদ্ধা জানান। হয় প্রার্থনা ও নমাজ। ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, শিল্প সংগ্রাহক আনোয়ার সিদ্দিকি, সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসেন, শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তল এবং লেখিকা শোভা দে। পরে হুসেনের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় দক্ষিণ ওকিংয়ের ব্রুকউড সমাধিস্থলে। সেখানেই সমাহিত করা হয় তাঁকে। ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার নলিন সুরিও।
তবে ‘বিতর্কিত’ এই শিল্পীর জীবনের শেষ অঙ্কেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। আজ ব্রুকউডে তাঁর সমাধির জায়গা ঘিরে মতভেদ দেখা যায়। বাবার সমাধির জায়গা পছন্দ হয়নি হুসেনের এক ছেলের। শেষ পর্যন্ত নতুন করে কবর খুঁড়ে সমাহিত করা হয় মকবুলকে।
রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুরের মতো অনেক ভারতীয়ই দেশ থেকে দূরে এই ব্রিটেনেই সমাহিত হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে হুসেনের তফাত একটাই। তাঁরা চাইলে দেশে ফিরতে পারতেন। কিন্তু হুসেনের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব ছিল না। দেশে ফেরার অপূর্ণ ইচ্ছা নিয়েই ব্রুকউডের সমাধিস্থলে আজ শেষ হল ভারতের ‘হুসেন-অধ্যায়’।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.