রানা-রায়ে হতাশ কেন্দ্র, খোঁচা বিজেপির
মুম্বই সন্ত্রাস মামলায় অব্যাহতিই পেয়ে গেল তাহাউর রানা।
পাক বংশোদ্ভূত কানাডার এই নাগরিকের বিরুদ্ধে ওই জঙ্গি হামলা চালানোয় সাহায্যের অভিযোগ ছিল। শুধু তা-ই নয়, সরকারপক্ষ সওয়াল করেছিল, ২৬/১১য় অন্যতম মূল অভিযুক্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গী রানা ওই হামলার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রথম থেকেই ওয়াকিবহাল ছিল এবং পাকিস্তানে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। কিন্তু শিকাগোর আদালতে কোনও অভিযোগই টেকেনি। কেন, তা সবিস্তার জানা যায়নি। তবে মুম্বই হানায় জড়িত থাকার দায় থেকে রানাকে রেহাই দেওয়ার ব্যাপারে ১২ সদস্যের জুরি দ্বিধাবিভক্ত ছিল। আদালত অবশ্য রানাকে মুম্বই সন্ত্রাসে অভিযুক্ত লস্কর-ই-তইবাকে সাহায্য করা এবং ডেনমার্কে একটি সংবাদপত্রে হামলার পরিকল্পনার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। এ জন্য রানার ৩০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এ দিন রায় শুনে রানা হতভম্ব হয়ে যান।
মুম্বই সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে রানা মুক্তি পাওয়ায় স্বভাবতই হতাশ নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ১৯ জুলাই ভারত-মার্কিন কৌশলগত আলোচনার জন্য নয়াদিল্লি আসছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। সেই বৈঠকে ভারতীয় নেতৃত্ব বিষয়টি তুলবেন। রানা-মামলায় প্রকৃত তথ্যপ্রমাণ আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে মার্কিন প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হবে। বিজেপির অভিযোগ, আমেরিকায় হেডলি-রানার বিচারের বিষয়টি যাতে ‘ঠিকমতো’ এগোয়, সে জন্য ভারত চেষ্টা করেনি। এই অবস্থায় কেন্দ্রের কৌশল, রানার বিরুদ্ধে ভারতের আদালতে চার্জশিট দেওয়ার কথা বলা। মুম্বই সন্ত্রাস এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগের যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা তুলে ধরা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক সচিব ইউ কে বনশল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রানার বিরুদ্ধে মুম্বই সন্ত্রাসে নানা ভাবে মদত দেওয়ার প্রমাণ ছিল। তা সত্ত্বেও সে অব্যাহতি পাওয়ায় আমরা হতাশ।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, শিকাগো আদালতের রায় খুব বড় ধাক্কা নয়। কারণ ভারতের আদালতে হেডলি-রানার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। হেডলি এবং রানাকে নিয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তদন্ত চালাচ্ছে। শিকাগো আদালতে পেশ করা বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণও এনআইএ দেখতে চেয়েছে। বেঙ্গালুরু থেকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ বলেন, “রায়ে পুরো সন্তুষ্ট নই।” তাঁর বক্তব্য, এই মামলার শুনানিতে মুম্বই সন্ত্রাস এবং হেডলি-রানার যে যোগাযোগ উঠে এসেছে, তা মাথায় রেখে পাকিস্তানের উচিত, ভাল ভাবে তদন্ত করা।
২০০৯-এ গ্রেফতার হয় রানা। আদালতে সরকারপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, হেডলিকে মুম্বই পাঠিয়ে অফিস খোলানো, ভারতের ভিসা পাওয়ায় সাহায্য করেছিল রানাই। রানা সব অস্বীকার করলেও হেডলি আদালতে বলে, সে রানাকে বোকা বানিয়ে মুম্বই সন্ত্রাসের পরিকল্পনায় সামিল করেছিল। মার্কিন আদালতের রায়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বনশলও বলেন, আদালতেই প্রমাণ দেওয়া হয়েছে, হেডলি মুম্বইয়ের যে সব জায়গা বেছে নজরদারি চালিয়েছিল, তা নিয়ে রানার সঙ্গে তার কথা হয়। রানা প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করত। মুম্বই সন্ত্রাসে যে সব জঙ্গি প্রাণ হারাবে, তাদের পাক সেনার সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া উচিত বলেও হেডলিকে জানিয়েছিল রানা। রানার অন্যতম আইনজীবী প্যাট্রিক ব্লেগান বলেছেন, “এটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে জুরি ২৬/১১ মামলায় রানাকে দোষী সাব্যস্ত করেননি। জুরির সিদ্ধান্ত, লস্কর-ই-তইবাকে মদত দেওয়ার সঙ্গে কারও প্রাণনাশের সম্পর্ক নেই। মুম্বই সন্ত্রাসের রায় নিয়ে জুরিরা দ্বিধাবিভক্ত।” আমেরিকার সরকারি আইনজীবী প্যাট্রিক জে ফিটজেরাল্ড বলেন, “জুরিকে সব প্রমাণই দিয়েছিলাম। সেগুলো হয়তো তাদের কাছে যথেষ্ট ছিল না।” ভারতে কাসভ মামলায় এই রায়ের কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করেছেন বিশেষ সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম।
রানার এই ‘ছাড়’ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে চেপে ধরতে চাইছে বিজেপি। দলের অভিযোগ, মুম্বই হামলার পর মার্কিন নাগরিকের হত্যার সূত্রে আইএসআই প্রধানকে যদি ওয়াশিংটন তলব করতে পারে, তা হলে ভারত কেন বিষয়টি নিয়ে নরম মনোভাব দেখাবে? গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন, “এ সবই ভারতের বিদেশনীতির ফল। পাকিস্তানকে খুশি করতে মুম্বই সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের খালাস করে দিচ্ছে আমেরিকা। এখন সরকারের উচিত, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়েই ভাবনাচিন্তা করা।”


শুনানি যে পথে
২০০৯
১৮ অক্টোবর: ২৬/১১-য় অভিযুক্ত হেডলির ‘বন্ধু’ তাহাউর রানা ধৃত।
২৭ অক্টোবর: এফবিআইয়ের অভিযোগ, ভারত-ডেনমার্কে হামলার জন্য রানা-হেডলিকে নিয়োগ লস্করের।
২০১০
১১ মার্চ: রানার জামিনের আবেদন খারিজ শিকাগো আদালতে।
২০১১
১৬ মে: দু’ বার পিছোনোর পর ফের শুরু শুনানি।
২৩ মে: সরকারি কৌঁসুলিদের অভিযোগ, হেডলিকে আড়াল করছে রানা।
২৪ মে: হেডলি জানায়, ২৬/১১-র ছক কষতে সাহায্য করেছে আইএসআই-কর্তা মেজর ইকবাল ও লস্কর শীর্ষ নেতা হাফিজ সইদ।
১ জুন: হেডলি রানার আইনজীবীকে বলেন, তিনি রানাকে বোকা বানিয়েছেন। রানা অজান্তেই ২৬/১১-কাণ্ডে জড়িয়ে পরেছিলেন।
৭ জুন: রানা জানায়, ভারতে হামলার জন্য জঙ্গিদের অস্ত্র দিচ্ছে আইএসআই।
আদালতের রায়
১০ জুন: ২৬/১১-র জন্য দোষী নয় রানা।
First Page Bidesh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.