|
|
|
|
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনের জের |
যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতালে ঠাঁই মান্নানের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর ও কলকাতা |
যে নিয়মের জন্য দীর্ঘ দিন তাঁর যথাযথ চিকিৎসা হয়নি, সেই নিয়ম শিথিল করেই যাদবপুর কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালে ভর্তি করানো হল আরামবাগের মান্নান খাঁকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য দফতরের লিখিত নির্দেশ পৌঁছয় শ্রীরামপুর যক্ষ্মা হাসপাতালে। বিকালেই মান্নানকে সেখান থেকে যাদবপুরে স্থানান্তরিত করানো হয়।
হুগলির আরামবাগের বেউর গ্রামের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের মান্নান চিকিৎসার পরিভাষায় ‘মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ (এমডিআর) রোগী। অর্থাৎ, যক্ষ্মার প্রচলিত কোনও ওষুধ তাঁর শরীরে কাজ করছে না। এই জাতীয় রোগীর চিকিৎসা দরকার ‘ডট প্লাস’ পদ্ধতিতে।
পশ্চিমবঙ্গের মাত্র দু’টি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা রয়েছে-- যাদবপুরের কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতাল এবং জলপাইগুড়ির রানি অশ্রুমতি যক্ষ্মা হাসপাতালে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের ‘একুশে আইনে’ এ পর্যন্ত রাজ্যের মাত্র পাঁচটি জেলার ‘এমডিআর’ রোগীরা এই দুই হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার রোগীরা যাদবপুরের হাসপাতালে এবং দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের রোগীরা জলপাইগুড়ির রানি অশ্রুমতি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন। অন্য জেলার ‘এমডিআর’ রোগীরা সরকারি ভাবে ‘ডট প্লাস’ চিকিৎসা পাবেন না। তাঁদের ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার’-এর দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গতি নেই। এমনকী, সরকারি জায়গায় তাঁরা থুতুও পরীক্ষা করাতে পারবেন না! |
|
ফলে, মান্নানকে যাদবপুরে ‘ডট প্লাস’ চিকিৎসা না-দিয়ে শ্রীরামপুর যক্ষ্মা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর দেহে কোনও ওষুধই কাজ করছিল না। আনন্দবাজার পত্রিকায় মান্নানের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (যক্ষ্মা) শ্যামাপদ বসাক বলেন, “মান্নানের ঘটনাকে বিশেষ বলে বিবেচনা করেই নিয়ম ভেঙে কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালে ভর্তি করে ডট প্লাস চিকিৎসা দেওয়া হবে।” যাদবপুরের হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হওয়ায় খুশি মান্নান। বলেন, “এ বার হয়তো সুস্থ হয়ে যাব। কাজ করতে পারব।”
মান্নান হয়তো এ বার উপযুক্ত চিকিৎসা পাবেন, কিন্তু পাঁচটি জেলা ছাড়া রাজ্যের অন্য জেলার ‘এমডিআর’ রোগীদের কী হবে? নিয়মের গেরোয় তাঁরা তো এখন কোনও ভাবেই কে এস রায় বা অশ্রুমতি হাসপাতালে ‘ডট প্লাস’ চিকিৎসা পাবেন না। ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার’দের কাছে এই চিকিৎসার প্রচুর খরচ। ওষুধের দামও অনেক। ফলে, গরিব ‘এমডিআর’ রোগীদের কার্যত বিনা চিকিৎসায় থাকতে হচ্ছে।
কী ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর?
স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরীর জবাব, “ধাপে-ধাপে সব জেলার রোগীদের ডট প্লাসের আওতায় আনা হবে। এক সঙ্গে তা করা সম্ভব নয়। কারণ, অত ওষুধ কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সরবরাহ করবে না। ডট চিকিৎসাও এই ভাবে একটু একটু করে চালু হয়েছিল।” আর শ্যামাপদ বসাক বলেছেন, “একটা প্রকল্প পুরোপুরি চালু হওয়ার মধ্যবর্তী পর্যায়ে এই রকম সমস্যা হয়। ভারতে কেরল ছাড়া, আর কোনও রাজ্য সব জেলায় ডট প্লাস চালু করতে পারেনি। এ বছরের মধ্যে হাওড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার রোগীরা ডট প্লাস পাবেন। ২০১২-র মধ্যে প্রত্যেক জেলার রোগীকে এর আওতায় এনে ফেলব।”
স্বাস্থ্য-কর্তা আশার কথা শোনালেও রাজ্য সরকারের সামনে পথ কিন্তু খুব মসৃণ নয়। কারণ, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, অধিকাংশ
জেলার ‘এমডিআর’ রোগীদের জন্য ‘ডট প্লাস’ কেন্দ্র গড়ার জায়গাই এখনও নির্দিষ্ট করা যায়নি। সমস্যা রয়েছে ল্যাবরেটারির ক্ষেত্রেও। রাজ্যে ‘ডট প্লাস’ রোগীদের থুতু পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র বেলেঘাটায়। এখন সেখানে এক-এক জনের পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে তিন মাস সময় লেগে যাচ্ছে। রোগী বাড়লে কী হবে, কেউ জানেন না। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে একটি ল্যাবরেটরি চালু হওয়ার কথা। কিন্তু মাত্র দু’টি ল্যাবরেটরিতে সমস্যার কতটা সমাধান হবে তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না। |
|
|
|
|
|