মমতা দেখুন
ওঁদের ৫০ টাকা দিলেই মিলবে ‘দুষ্প্রাপ্য’ ট্রলি
ট মাস আগের সেই রাতে ট্রলি পাননি সাব ইনস্পেক্টর সুনীল দেবনাথ। বৃদ্ধা অরুণা ভাবুককে পাঁজাকোলা করে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে ঘুরতে হয়েছিল তাঁকে। সেই চিত্র বদলায়নি এখনও। বৃহস্পতিবার সকালেও হাবড়ার জীবন সর্দার তাঁর পঙ্গু বাবার জন্য একটা ট্রলি খুঁজেছেন হন্যে হয়ে। পাওয়া তো যায়ইনি, উপরন্তু, চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীকে ট্রলির কথা বলায় জবাব এসেছে, “দিতে পারি। ৫০ টাকা লাগবে।”
পরিস্থিতি এক চুলও বদলায়নি আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের এক রাতে পথ দুর্ঘটনায় আহত বৃ্দ্ধাকে নিয়ে আরজিকরে এসে চরম অব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল সুনীলবাবুকে। ট্রলি তো জোটেইনি, এমনকী আহতের ওষুধের খরচ কে দেবে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গিয়েছিল। অরুণাদেবীর গোটা শরীর থেকে তখন রক্ত ঝরছে, ভেঙে গিয়েছে হাত-পায়ের হাড়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা বৃদ্ধাকে দেখে এতটুকু মায়া হয়নি কারও। মানিকতলা থানার সাব ইনস্পেক্টর সুনীলবাবু বলেছিলেন, “সরকারি উর্দি পরে আমি কিন্তু নিজের ডিউটিটাই করছি। সরকারি হাসপাতালের কর্মীরা কী করছেন?” তাঁর এই মন্তব্য-সহ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেআব্রু ছবিটা সংবাদপত্রে প্রকাশের পরে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা আরজিকরের ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান অসীম দাশগুপ্ত পরদিনই বিবৃতি দিয়েছিলেন, মুমূর্ষু মানুষ সরকারি হাসপাতালে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। আরও জানিয়েছিলেন, ইমার্জেন্সিতে এসে গুরুতর অসুস্থ কোনও মানুষকে আর ট্রলির জন্য হাপিত্যেশ করে থাকতে হবে না। বন্ধ হবে ট্রলি পাইয়ে দেওয়াকে ঘিরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংশের ঘুষ নেওয়ার প্রবণতাও। আরজিকর-কর্তৃপক্ষও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কড়া নজরদারি চালাবেন তাঁরা।
কিন্তু কোনও কিছুই হয়নি। আর তাই জীবন সর্দারদের হয়রানির রোজনামচাও একই রকম আছে। বৃহস্পতিবার সকালে আরজিকরের আউটডোর এবং ইমার্জেন্সিতে বেশ কয়েক ঘণ্টা হাজির থেকে এই হয়রানির ছবিটাই আরও এক বার ধরা পড়ল। একই ভাবে হয়রান হতে হল বনগাঁর শেফালি দত্তকেও। প্রতিবেশী বৃদ্ধাকে নিয়ে ইমার্জেন্সিতে এসেছিলেন তিনি। পড়ে গিয়ে ওই বৃদ্ধার কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে। আনা হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সে শুইয়ে। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার পরেই অ্যাম্বুল্যান্স-চালক জানিয়ে দেন, রোগিণীকে অ্যাম্বুল্যান্সের ট্রলিতে ভিতরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। হাসপাতালের ট্রলির ব্যবস্থা করতে হবে। তাই হাসপাতালে ঢোকার পর থেকেই ছোটাছুটি শুরু হয়েছিল শেফালিদেবীর। এক বার ডাক্তারবাবু, এক বার নার্স, এক বার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী যখন যাঁকে সামনে পেয়েছেন, হাতেপায়ে ধরেছেন ট্রলির জন্য। কিন্তু কোথায় কী! ডাক্তারবাবুরা বলেছেন, “ট্রলির খবর আমাদের জানার কথা নয়।” নার্সরা বলেছেন, “জিডিএ (চতুর্থ শ্রেণির কর্মী)-দের জিজ্ঞাসা করুন।” আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা বলছেন, “ট্রলি নেই।” কেউ আবার বলছেন, “৫০ টাকা দিলে চেষ্টা করতে পারি।” যে ট্রলি চোখেই দেখা যাচ্ছে না, তা টাকার বিনিময়ে মিলবে কী ভাবে? জবাব মিলেছে, “অত শত কথায় আপনার কাজ নেই।” এ ভাবেই টাকার বিনিময়ে শ্যামবাজারের অভীক দত্ত ট্রলির বন্দোবস্ত করলেন বাবার জন্য। অভীকবাবুর কথায়, “এর আগেও এই হাসপাতালে এসে টাকার বিনিময়ে ট্রলি জোগাড় করতে হয়েছে। পদ্ধতিটা জানা ছিল। তাই গোড়াতেই টাকা দিয়ে ট্রলির ব্যবস্থা করলাম।”
কিছু দিন আগে পর্যন্তও যে হাসপাতাল অর্থমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে, যেখানকার কোনও কাজ আর্থিক বরাদ্দের জন্য আটকে থাকেনি, সেখানে রোগীদের একেবারে প্রাথমিক চাহিদা, অর্থাৎ ট্রলির ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না কেন? অসুস্থ মানুষকে কেন এ ভাবে দিনের পর দিন হয়রান হতে হচ্ছে? হাসপাতালের ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগী প্রশ্নটা শুনে বিস্মিত। তাঁর মন্তব্য, “আমাদের তো এমন কোনও সমস্যা নেই। অনেক ট্রলি রয়েছে। অনেক সময় আউটডোরে বেশি রোগী চলে এলে হয়তো কিছুটা সমস্যা হয়। তবে সেটা তেমন গুরুতর কিছু নয়।”
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দিনের ব্যস্ত সময়ে হাসপাতাল-কর্তারা কি কখনও টহল দেন না? যদি দেন, তা হলে এমন সমস্যা তাঁদের নজর এড়িয়ে থাকে কী করে?
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.