|
|
|
|
নেতার দলবদল
|
ছাত্র পরিষদ-তৃণমূলে সংঘর্ষ, মৃত্যু যুবকের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যোগ দেওয়ার চার দিনের মধ্যেই কলেজে কলেজে ওই দুই সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে বচসা-সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেল। ঘটনাচক্রে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে সৌরভের নিজের শহর আলিপুরদুয়ারে। সেখানে আলিপুরদুয়ার কলেজে সংঘর্ষের জেরে রাজদীপ বিশ্বাস (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি অবশ্য নিজে ছাত্র ছিলেন না। তবে ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে কলকাতা ও তার লাগোয়া অঞ্চলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দল বদলে স্বভাবতই সৌরভ নিজের ‘যোগ্যতা’ প্রমাণ করতে চান। প্রমাণ করতে চান যে, তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাঁর অনুগামীরাও তাঁকে অনুসরণ করছেন। এই উদ্দেশ্যেই তাঁর তরফে বিভিন্ন কলেজের ছাত্র পরিষদ ইউনিট বা তাদের হাতে থাকা ছাত্র সংসদগুলিকে রাতারাতি তৃণমূল ছাত্র পরিষদে পরিণত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে! প্রত্যাশিত ভাবেই ছাত্র পরিষদের তরফ থেকে বাধা আসছে। ফলে বাধছে বচসা এবং সংঘর্ষ। তৃণমূল সূত্রের আরও বক্তব্য, এখন রাজ্যের কলেজগুলিতে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। পড়ুয়াদের ভর্তিতে ‘সাহায্য’ করার বিনিময়ে বিভিন্ন ‘সুযোগ-সুবিধা’ পেয়ে থাকেন ক্ষমতাসীন সংগঠনের নেতারা। কিন্তু যে সব কলেজে ছাত্র পরিষদ শক্তিশালী, সেগুলিতে তারাই ওই ‘সুযোগ-সুবিধা’র দাবিদার। সেই কারণেও দলত্যাগী নেতা ওই সব কলেজের ছাত্র পরিষদ কর্মীদের তৃণমূলে টেনে আনতে চাইছেন।
বুধবার দিনের বেলা আলিপুরদুয়ার কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তির ফর্ম বিলি নিয়ে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীদের মধ্যে গোলমাল হয়। বিকেলে ফের তাদের মধ্যে বচসা হয় কলেজ ক্যান্টিনে নেশা করা নিয়ে। রাতে কলেজের অদূরে একটি ক্লাবের সামনে দু’দল ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে রাজদীপের মৃত্যু হয়। জখম হন আলিপুরদুয়ার কলেজের ছাত্র পরিষদ পরিচালিত সংসদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মল্লিক-সহ চার জন। তাঁদের আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। স্থানীয় ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে আট জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হলেও রাজদীপের মৃত্যুর ব্যাপারে পুলিশকে কিছু বলা হয়নি। তবে রাজ্য ছাত্র পরিষদ এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার ‘কালা দিবস’-এর ডাক দিয়েছে। আজ বেলা ২টো থেকে ৩টে তারা রাজ্য জুড়ে পথ অবরোধও করবে।
আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “রাজদীপের মৃত্যুর কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না। শুনেছি ও মাদকাসক্ত ছিল। পুলিশকে সব কিছু খতিয়ে দেখতে বলেছি।” পাশাপাশি, সংঘর্ষে না-জড়ানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেছেন, “ময়নাতদন্তে ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন কিংবা দেহে অন্য কোনও আঘাতের প্রমাণ মেলেনি বলে প্রাথমিক ভাবে শুনেছি। তবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে।” হাসপাতাল সূত্রের দাবি, রাজদীপ কোথাও ব্যথার কথা বলেননি। বরং শরীরের কোনও অসুবিধে হচ্ছে না বলে তিনি নিজেই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে খেয়ে তিনি শুয়েও পড়েন। তাঁর মা গীতাদেবী বলেন, “ছেলেটা নিয়মিত নেশা করত। তা নিয়ে বাড়িতে অশান্তি চলছিল। রাতে খাওয়ার পরে শুয়ে পড়েছিল। রাত ১টা নাগাদ দেখি ও বিছানায় বসে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। গায়ে হাত দিতেই বিছানায় পড়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। কিছুই বুঝতে পারছি না।” এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাজদীপ পঞ্চম শ্রেণির পরেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন। ধীরে ধীরে নেশার চক্রে জড়িয়ে পড়েন। স্কুলের চৌকাঠ না-পেরোলেও নানা সময়ে কিছু ছাত্র নেতার ‘মাস্লম্যান’ হিসেবে কলেজে কাজ করার অভিযোগও রয়েছে রাজদীপের বিরুদ্ধে। সৌরভের বক্তব্য, “যত দূর শুনেছি ওই ছেলেটি অতি মাত্রায় মাদকাসক্ত ছিল। তাই এই পরিণতি হয়েছে।” |
|
|
|
|
|